দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২০ নভেম্বর: “একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে/ সকল প্রেমের স্মৃতি….!” অনাদিকালের অনন্ত ইতিহাসে কখনও কখনও ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে রবি ঠাকুরের ‘অনন্ত প্রেম’। আর, প্রকৃত প্রেমের পূর্ণতা তো মিলনে নয়, অতলস্পর্শ বিরহ-মাঝেই তার পরিসমাপ্তি! সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলা’র নিখাদ ভালোবাসার কাহিনীও তো তৈরি করলো ট্র্যাজিক ইতিহাস। পার্থিব জগতে রচিত হলো অপার্থিব প্রেম। কোমায় থাকা ঐন্দ্রিলা’র পাশে বসে সব্যসাচীর কাটানো এক পক্ষ কালের (প্রায় ১৯ টি রাত) বিনিদ্র রজনী মর্তবাসীকেও সাক্ষী রাখলো সেই অনন্ত প্রেমের। সব লড়াই থামিয়ে রবিবার সকালে তারাদের দেশে পৌঁছলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma)। এবার, হয়তো একটু শান্তিতে ঘুমোবেন সব্যসাচী (Sabyasachi Chowdhury)!
হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, রবিবার সকালে পর পর বেশ কয়েকবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় ঐন্দ্রিলার। চিকিৎসকরা সিপিআর দিয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু, দীর্ঘ প্রায় ১৯ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর, আর পারলেন না ‘ফাইটার’ ঐন্দ্রিলা! হলোনা মিরাকেল! শনিবার সন্ধ্যার পরই নিজের ফেসবুক পেজ থেকে সমস্ত পোস্ট মুছে ফেলে, ইঙ্গিতটা অবশ্য আগেই দিয়েছিলেন সব্যসাচী। প্রসঙ্গত, পর পর ২ বার ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে সেই সংক্রমণ সারিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা। আবার কাজে ফেরা। লড়াইয়ের অন্যতম নাম ঐন্দ্রিলা! তবে প্রায় একবছর সুস্থ থাকার পর, ১ নভেম্বর রাতে নতুন করে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন ঐন্দ্রিলা! তাঁর শরীরের একদিক অসাড় হয়ে যায়। ঘন ঘন বমি করতে থাকেন। অচেতন হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে ছোটেন তাঁর পরিবার ও বন্ধু সব্যসাচী চৌধুরী। সেদিন রাতেই অস্ত্রোপচার হয় ঐন্দ্রিলার। তখন থেকেই ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। ‘নিজের হাতে করে বাড়ি ফিরিয়ে’ নিয়ে যেতে চাইলেও পারলেন না সব্যসাচী!
উল্লেখ্য যে, একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০১৫-র ৫ ফেব্রুয়ারি জন্মদিনের দিনই তাঁর শরীরে বেড়ে ওঠা মারণরোগের কথা প্রথম জানতে পারেন ঐন্দ্রিলা। তাঁর অস্থি মজ্জায় মারণ রোগ (Bone Marrow Cancer) বাসা বেঁধেছিল। তারপরই লড়াই শুরু হয় ঐন্দ্রিলার। তখন তিনি বহরমপুরেই থাকতেন। মেয়েকে নিয়ে দিল্লিতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান বাবা-মা। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন ঐন্দ্রিলার হাতে বেশি সময় নেই। এরপর একের পর এক কেমো, ইঞ্জেকশন শুরু হয়। শরীর যেন ক্রমশ কুঁকড়ে যাচ্ছিল। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর তবে ২০১৬ সালে সুস্থ হয়ে ওঠেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। ২০১৬ থেকে ২০২১, টানা পাঁচ বছর বেশ ভালোই কাটছিল ঐন্দ্রিলা শর্মার। ততদিনে, ঐন্দ্রিলার অভিনয় জীবনও শুরু যায়। কিন্তু, ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎই ছন্দপতন! আচমকা ডান কাঁধে যন্ত্রণা শুরু হয় ঐন্দ্রিলার। অভিনেত্রী ভেবেছিলেন শোয়ার দোষে হয়তো ব্যথা। তারপর জানা যায়, ডান ফুসফুসে ১৯ সেন্টিমিটারের একটি টিউমার রয়েছে। আবারও শুরু হয় কেমো, সেই যন্ত্রণা। ২০২১-এর প্রায় গোটা বছরটাই ক্যানসারের সঙ্গে কঠিন যুদ্ধ চালিয়ে ফের জয়ী হন ঐন্দ্রিলা। কাজেও ফেরেন ধীরে ধীরে। কিন্তু, ২০২২-এর ১ নভেম্বর রাতে আবারো ছন্দপতন! ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন ঐন্দ্রিলা। অবশেষে এপারের লড়াই শেষ করে, মাত্র চব্বিশেই ওপারের দেশে পাড়ি দিলেন সব্যসাচীর ঐন্দ্রিলা!