তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ মে: মাত্র ২৫ বছরের তরতাজা যুবক শুভদীপ পাল (Subhadip Paul)- এর প্রাণহীন দেহ বাড়িতে ফিরতেই শোকে ভেঙে পড়ল গোটা গ্রাম! কলকাতায় ময়নাতদন্তের পর বুধবার (২৪মে) ভোররাতে কলকাতা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার মানিককুণ্ডু গ্রামে পৌঁছয় স্বাস্থ্যকর্মী শুভদীপের দেহ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৮ মে রাতে কলকাতায় ভয়াবহ মোটরবাইক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন শুভদীপ ও তার এক বন্ধু। আহত শুভদীপ-কে উদ্ধার করে পুলিশ এন আর এস মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে। পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে, শুভদীপের শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো নিউরো মেডিকেল সাইন্সে ভর্তি করেন। সেখান থেকে কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রের সহযোগিতায় SSKM বা PG হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা করা হয়। অভিযোগ ছিল, দীর্ঘ ৫ ঘন্টার চেষ্টাতেও শুভদীপ-কে পিজিতে ভর্তি করতে পারেননি মদন মিত্র। তাঁর নিজের দলের একাধিক মন্ত্রী (স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য থেকে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস) থেকে SSKM- এর আধিকারিকদের ফোন করেও কাজ হয়না! এমনকি, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের স্বাস্থ্যকর্মী (ল্যাবরেটরিতে কর্মরত ছিলেন) শুভদীপ-কে ভর্তি করানোর জন্য জোরাজুরি করায় মদন মিত্রের নামে FIR করে পিজি কর্তৃপক্ষ। ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় গোটা রাজ্যে। বাধ্য হয়ে শুভদীপের পরিবারের সদস্যরা সেই মদন মিত্রের প্রচেষ্টাতেই পুনরায় নিউরো সাইন্সে ভর্তি করেন।
তবে, শেষ রক্ষা হয়না! ২৩ মে, মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হয় মাত্র ২৫ বছরের যুবক শুভদীপ পালের। অভিযোগ ছিল, বিনা চিকিৎসায় গভীর সঙ্কটজনক (ট্রমা অবস্থায়) শুভদীপ-কে ৫ ঘন্টা পিজি হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছিল। আর, তাতেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী, তরতাজা এই যুবক। ময়নাতদন্তের পর বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে শুভদীপের নিথর দেহ রওনা দেয় পশ্চিম মেদিনীপুরের বাড়ির উদ্দেশ্যে। বুধবার গভীর রাতে দেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছনো মাত্রই শোকে ভেঙে পড়েন এলাকাবাসী। জানা যায়, শুভদীপের বাবা রণজিৎ পাল এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে গোটা শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা! জানা যায়, অনেক কষ্ট করে, চাষবাস করে রণজিৎ তাঁর একমাত্র ছেলেকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছিলেন। পরে, শুভদীপ সেখানেই ল্যাবরেটরিতে কাজ পেলে, পরিবারের মুখে হাসি ফোটে। কিন্তু, অচিরেই যে সব শেষ হয়ে যাবে, তা কে জানত!