দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ মে: ভোটে দাঁড়ানোই নেশা। সামান্য সমবায় কর্মী হয়েও, অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে ২৫ হাজার দিয়ে ডিসিআর (DCR/Duplicate Carbon Receipt) কেটেছিলেন (গত ২৯ এপ্রিল)। ১০ হাজার টাকা দিয়ে তাসা পার্টি বা ব্যান্ড বার্টি (বাজনদারদের)-ও বুক করেছিলেন। সব কিছু নিয়ে শুক্রবার (৩ মে) পৌঁছে গিয়েছিলেন জেলা শহর মেদিনীপুরে জেলাশাসকের কার্যালয়ের (নির্বাচন আধিকারিকের) সামনে, মনোনয়ন জমা করবেন বলে। জেলাশাসকের কার্যালয়ের বাইরে তখন বাম-বিজেপি’র প্রার্থীদের (অগ্নিমিত্রা পাল, হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়, বিপ্লব ভট্ট, তপন গাঙ্গুলি) মনোনয়নের বিশাল মিছিল ঘিরে ‘উত্তাল’ পরিস্থিতি! তার মাঝেই পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা গোপাল মণ্ডল জনা দশেক বাজনদারদের নিয়ে পৌঁছে যান। ঘাটাল লোকসভা আসনে দেব-হিরণ’কে ‘হারাতে’ নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করার শপথ নিয়েছিলেন! পুলিশ কর্মীদের বলে কয়ে এবং ডিসিআর দেখিয়ে জেলাশাসকের কার্যালয়ের ভেতরেও ঢুকে পড়েন গোপাল। ১০ জন বাজনদারকেও সঙ্গে নিয়েছিলেন। আগে থেকেই তাঁদের ভোটার কার্ড আনতে বলে দিয়েছিলেন গোপাল! ভেতরে প্রবেশ করে তাঁর ‘প্রস্তাবক’ হওয়ার ‘প্রস্তাব’ দেন গোপাল। আর এতেই বেঁকে বসেন তাসা পার্টির (বাজনাদলের) মালিক জিতেন দাস সহ বাকিরা!

thebengalpost.net
গোপাল মণ্ডল:

বাজনাদলের মালিক জিতেন দাস বলেন, “আমরা বাজনা বাজিয়ে খাই। আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছে বাজনা বাজানোর। সেজন্যই ১০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম।আমাদের অবশ্য উনি (গোপাল মণ্ডল) বলেছিলেন, ডিএম অফিসের গেটে ভোটার কার্ড লাগতে পারে। সেজন্যই আমরা ভোটার কার্ড সঙ্গে নিয়ে আসি। কিন্তু, এখানে এসে আমাদের বলছেন, মনোনয়নের কাগজে সই করতে হবে! আমরা ওসব করবো কেন? কোথায় কি ফেঁসে-টেসে যাব!” এরপর, গোপাল তাঁদের অনেক আবদার-অনুরোধ করেন সই করার জন্য। বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁরা সই না করলে এবার আর ভোটে দাঁড়ানোই হবে না। সঙ্গে ‘কষ্ট করে জোগাড় করা’ ৩৫ হাজার (ডিসিআরের ২৫ আর বাজনদারদের ১০) টাকাও ‘জলে’ পড়বে! তবুও, ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে কোনোমতেই ‘রাজি’ হতে ‘নারাজ’ জিতেন দাস সহ বাজনাদলের সদস্যরা। এদিকে, নাছোড়বান্দা গোপাল মণ্ডল-ও! জেলাশাসকের কার্যালয় চত্বরে পুলিশের সামনেই শুরু হয় উভয় পক্ষের তীব্র বাকবিতণ্ডা। হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। তারপর, গেটের বাইরে বেরিয়ে তাঁদের ঝামেলা মেটানোর পরামর্শ দেন।

যদিও, বাজনাদলের লোকজন শেষপর্যন্ত রাজি না হওয়ায়, মনোনয়ন জমা না দেওয়া আর হলোনা গোপালের! গোপালের দাবি, তাঁর বাড়ি ঘাটালের রঘুনাথচকে। তিনি সরকারের নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ‘নির্দল প্রার্থী’ হিসেবে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। ২০১৪ সালেও ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পেশায় সমবায় ব্যাঙ্কের কর্মী। বিয়ে থা করেননি। ভোটে লড়াই করাই তাঁর ‘নেশা! তাই, ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ডিসিআর কাটার পর, মনোনয়ন দাখিলের জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়ে ঘাটালের রাধানগর থেকে বাজনাদল বুক করে এনেছিলেন। ওই দলে ১০ জন সদস্য ছিলেন। গোপাল বলেন, “ওদের দশজনকেই বলেছিলাম প্রত্যেকের ভোটার কার্ড সঙ্গে আনতে। নির্দল হিসেবে মনোনয়ন পেশ করতে হলে ১০ জন লোক দরকার। আমার লোকজন নেই বলে আমি ১০ জনের বাজনাদল বুক করি। ফর্মে সই করতে হবে ওদেরকে বলেছিলাম। কিন্তু, এখানে এসে ওরা রাজি হলো না। আমাকে ফাঁসিয়ে দিল! ওদের জন্য এবার আর আমার মনোনয়ন জমা দেওয়া হলো না। ৩৫ হাজার টাকাও জলে পড়ল!”

thebengalpost.net
বাজনাদলের সঙ্গে গোপাল: