দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ ফেব্রুয়ারি: তিনিই ‘প্রকৃত কোটিপতি’ (The Real Millionaire)! সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ (The Times of India) এভাবেই তাঁকে চিহ্নিত করেছে। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত সবংয়ের বনাই গ্রামের বাসিন্দা মলয় কুমার দাস। পেশায় গ্রিল কারখানার মালিক, বছর ৬৫-র মলয় দাসের দান করা জমিতেই গড়ে উঠল সবংয়ের দমকল কেন্দ্র বা ফায়ার স্টেশন-টি। বাজারদর অনুযায়ী জমির মূল্য কমসম করে হলেও ১ কোটি টাকা। তাতে কি! তাঁর ঠাকুরদা-কে অনুসরণ করে সমাজের স্বার্থে, গ্রামের স্বার্থে নিজেদের জমি দান করতে বিন্দুমাত্র ভাবিত হননি উদার মনের এই মানুষটি। গত বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ভার্চুয়ালি সবংয়ের দমকল কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারপরই সবংবাসীর দীর্ঘদিনের এক স্বপ্ন পূরণ হল যেন! তবে, সবথেকে খুশি ষাটোর্ধ্ব মলয় দাস-ই।
বুধবার সবংয়ের বনাই গ্রামে অনুষ্ঠান মঞ্চে ‘জমিদাতা’ মলয় কুমার দাস-কে সংবর্ধিত করেন স্বয়ং জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদরী। ছিলেন সবংয়ের বিধায়ক তথা রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভুঁইয়া, তাঁর স্ত্রী গীতা ভুঁইয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই মলয় কুমার দাস মনে করিয়ে দেন, “আমার দাদু (ঠাকুরদা) গ্রামে হাইস্কুল এবং পোস্ট অফিস তৈরির জন্য জমি দান করেছিলেন। সমস্ত জমি তাঁরই রেখে যাওয়া। আমি এর আগেও একটি প্রাথমিক স্কুলের জন্য জমি দান করেছি। কোন রাজনৈতিক দল করি না। যখন এলাকায় দমকল করা হবে বলে শুনেছিলাম, তখনই মনস্থির করে ফেলি। আমাদের বিধায়ক তথা মন্ত্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভুঁইয়া প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যাই।”
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৪৩.০৬ ডেসিমাল জমি দান করেছিলেন। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে পুরুলিয়া থেকে শিলান্যাস করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই জমিতেই গড়ে উঠল দমকল কেন্দ্র। এবারও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-ই ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। প্রায় ১ কোটি টাকার জমি দান করেছেন বলে জানিয়েছেন মলয় কুমার দাস। এই কেন্দ্র হওয়ার ফলে সবং, ডেবরা, পিংলা, দাঁতন এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন। জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদরী বলেন, “জমিকে কেন্দ্র করে পারিবারিক সমস্যা বা বিবাদ লেগেই থাকে। কিন্তু, মলয় কুমার দাস দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য এগিয়ে এসে, প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের জমি দান করেছেন। সেই জমিতেই আজ দমকল কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এজন্য অনেক ধন্যবাদ জানাই।” মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া বলেন, “আমরা থাকি বা নাকি এই প্রতিষ্ঠান থেকে যাবে। আর, মানুষের হৃদয়ে থেকে যাবেন মলয় কুমার দাস।”