দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ সেপ্টেম্বর: জাতীয় শিক্ষক, দার্শনিক, পথ প্রদর্শক ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের ১৩৪ তম জন্মদিবস ছিল গতকাল, রবিবার। প্রতিবছরের মতো শ্রদ্ধায়, মর্যাদায় পালিত হল শিক্ষক দিবস। সংবর্ধনা সূচক অনুষ্ঠান চলছে আজও। চলবে সপ্তাহভর। এর মধ্যেই আবারও ব্যতিক্রমী মেদিনীপুর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শাসকদলের যুব কর্মীরা রবিবার সকাল থেকেই পৌঁছে গিয়েছিলেন শিক্ষকদের দুয়ারে দুয়ারে। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার নতুন যুব সভাপতি সন্দীপ সিংহ বললেন, “জাতি গড়ার কারিগরদের উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনের জন্য মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নির্দেশ দিয়েছেন। সকাল সকাল রাজ্যজুড়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের মোবাইলে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা। এই ধারা বজায় রেখে আমরা মেদিনীপুর সাংগাঠনিক জেলার সকল যুবকর্মীরা পৌঁছে গিয়েছিলাম শিক্ষকদের দুয়ারে দুয়ারে। শুধু নিছক সংবর্ধনা জ্ঞাপন নয়; শিক্ষকদের শরীর, স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থারও খোঁজ খবর নিলাম। দীর্ঘ বিচ্ছেদের ফলে শিক্ষকদের অনেকেরই মন খারাপ। তবে, পরিস্থিতি ও প্রশাসনিক নিয়ম তো মেনে চলতেই হবে!” সন্ধ্যায় জেলা শহর মেদিনীপুরে আবার শিক্ষকদের নিয়ে শহর তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান পালিত হলো প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে। উপস্থিত ছিলেন, মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত, জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পান্ডব, পৌর প্রশাসক সৌমেন খান সহ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা বিজ্ঞান বিভাগের ডিন ড. সত্যজিৎ সাহা, নাড়াজোল রাজ কলেজের অধ্যক্ষ ড. অনুপম পাড়ুয়া প্রমুখ।

thebengalpost.in
শিক্ষকদের দুয়ারে তৃণমূল কংগ্রেসের যুব কর্মীরা :

thebengalpost.in
ছাত্রদের দুয়ারে শিক্ষকরা :

অন্যদিকে, দীর্ঘ ছাত্র-বিচ্ছেদে মর্মাহত পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা এলাকার কয়েকজন শিক্ষক পৌঁছে গেলেন ছাত্রদের দুয়ারে দুয়ারে। সঙ্গে উপহার। প্রাপ্তি কচিকাঁচাদের সান্নিধ্য টুকু। বেলদার কাছাকাছি অবস্থিত বনচাটুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (কেশিয়াড়ি ১ চক্র) প্রধান শিক্ষক অখিলবন্ধু মহাপাত্র বললেন, “শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নিলাম। একই সঙ্গে যেহেতু দিনটি বিশ্ববিশ্রুত দার্শনিক, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের ১৩৪ তম জন্মদিন, তাই শিক্ষার্থীদের হাতে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এবং পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছবি থাকা একটি কার্ড, এক প্যাকেট রং পেন্সিল এবং একটি করে চকোলেট দিয়ে আসা হয়। কয়েকজন পড়াশোনা করছে কিনা তারও খোঁজ নেওয়া হয়। বিস্ময়কর ভাবে আমরা দেখলাম তারা পড়াশোনা তো প্রায় ভুলেই গিয়েছে, তাছাড়াও দিনটি যে শিক্ষক দিবস তাও ভুলে গিয়েছে! অথচ এরাই প্রতিবছর শিক্ষকদিবসের দিন গোটা স্কুলকে মাতিয়ে রাখত। অজস্র কলম, উপহার দিত আমাদের। আমাদের সহকারী শিক্ষক মাণিক দাস এবং দিব্যেন্দু দাস সঙ্গে ছিলেন।” উপলব্ধ হল, বিদ্যালয়ের দরজা অতিসত্বর খুলে দেওয়া প্রয়োজন ভবিষ্যতের কান্ডারীদের জন্য! অপরদিকে, খড়গপুরের বেনাপুর হাইস্কুলের প্রায় এক হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে স্বাস্থ্যসামগ্রী তুলে দেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা- শিক্ষাকর্মীরা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমন রায় জানান, “এলাসাই, শংকরাচক, কেঁঠিয়া, রামনগর প্রভৃতি প্রায় দশ-বারোটি গ্রামে আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকারা পাঁচটি দলে ভাগ করে পৌঁছে যাই।” শিক্ষকদের সংবর্ধনা জ্ঞাপনে কার্পণ্য ছিলনা, বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলিরও। সোমবার বর্তমান শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষকদের সংবর্ধনা প্রদান করা হল, মেদিনীপুর শহরের সদর আর আর চক্র কমিটি’র পক্ষ থেকে। উপস্থিত ছিলেন, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু বিষই, সংগঠনের জেলা সভাপতি অর্ঘ্য চক্রবর্তী, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রকাশ সরকার প্রমুখ। গতকাল ও আজ মিলিয়ে শিক্ষকদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়, সৃষ্টি ফাউন্ডেশন, হেল্পিং হ্যান্ড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, আম্মা জনসেবা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি প্রভৃতির তরফে। এছাড়াও, জেলাজুড়ে পাড়ায় পাড়ায়, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মানিত করার অনুষ্ঠান চলছে কোভিড বিধি মেনে। আর, শিক্ষকরা চাইছেন, কোভিড বিধি মেনেই যত দ্রুত সম্ভব খুলে দেওয়া হোক ছেলেমেয়েদের প্রিয় “বিদ্যালয়” এর দরজা!

thebengalpost.in
তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সংবর্ধনা সভা :

thebengalpost.in
শহর তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান :