দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ ফেব্রুয়ারি: জেলার দুই প্রান্তে দুই দুর্ঘটনা! হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ায় জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষার মাঝ পথেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় ঘাটালের এক ছাত্রীকে। বাকি পরীক্ষা অবশ্য সে আর দিতে পারেনি! তার জ্ঞান ফেরে বেলা ২টো নাগাদ অর্থাৎ পরীক্ষার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর। অপরদিকে, পরীক্ষার আগের দিনই (মঙ্গলবার) বিকেলে টিউশন পড়ে ফেরার পথে বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হয় খড়্গপুরের এক ছাত্র। বিধায়ক সুজয় হাজরা-র সহযোগিতায় ওই ছাত্র বুধবার মেদিনীপুর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বেডে বসেই পরীক্ষা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্ষদের জেলা মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক সুভাষ হাজরা।

thebengalpost.net
মেদিনীপুরে বেসরকারি হাসপাতালে বেডে:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

জানা যায়, বাইক দুর্ঘটনায় জখম ছাত্রের নাম আকাশ মাহাতো। তার বাড়ি খড়গপুর শহরের কৌশল্যা এলাকায়। আকাশ খড়্গপুর সিলভার জুবিলী হাইস্কুলের ছাত্র। তার পরীক্ষাকেন্দ্র খড়্গপুর ট্রাফিক হাইস্কুল। আকাশের বাবা, পেশায় রেলকর্মী দীনেশ মাহাতো জানান, মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই পুরাতন বাজার এলাকায় টিউশন পড়তে গিয়েছিল আকাশ। ফেরার পথে বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায় সে। মুখে গুরুতর চোট পায় আকাশ। স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে তাকে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে আকাশের বাবা-মা’ও পৌঁছন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর আকাশকে তাঁরা নিয়ে যান মেদিনীপুর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসার পর, আকাশ কিছুটা সুস্থ হলে তাঁর বাবা-মা ভাবেন, ছেলের যদি এখানেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেত! এরপরই, আকাশের বাবা দীনেশ মাহাতো মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরার ফোন নম্বর জোগাড় করে মঙ্গলবার রাত্রি ৯টা নাগাদ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিধায়ক দ্রুত পর্ষদের জেলা মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক সুভাষ হাজরা সহ আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আকাশের অ্যাডমিট কার্ড পাঠান। জেলা মনিটরিং কমিটির তরফে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বুধবার ওই বেসরকারি হাসপাতালের বেডে বসেই পরীক্ষা দেয় আকাশ। জেলা মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক সুভাষ হাজরা বলেন, “মেদিনীপুর শহরের কেরানীটোলা শ্রী শ্রী মোহনানন্দ বিদ‍্যামন্দির পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র এনে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।” জখম ছাত্রের বাবা দীনেশ মাহাত বলেন, “বিধায়ক সুজয় বাবু খুবই সহযোগিতা করছেন। ঘটনার কথা শোনার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় আকাশ পরীক্ষা দিতে পারল।” বিধায়ক সুজয় হাজরা বলেন, “এটা ওদের জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। আমি যতটুকু পেরেছি, সাহায্য করেছি।” জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষাটিও (ভৌত বিজ্ঞান পরীক্ষাও) আকাশ হাসপাতালের বেডে বসেই দেবে। তবে, নাবালকের হাতে বাইক তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে বাবা-মা অনুতপ্ত হলেও, কিছু মন্তব্য করতে চাননি!

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

অপরদিকে, বুধবার জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষা প্রায় দেড় ঘন্টা দেওয়ার পর পরীক্ষার হলেই অজ্ঞান হয়ে যায় ঘাটালের মহারাজপুর হাইস্কুলের ছাত্রী বিশাখা মালাকার। দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে সংজ্ঞাহীন থাকার পর বেলা ২টো নাগাদ বিশাখা-র জ্ঞান ফেরে বলে জানান চিকিৎসকেরা। ততক্ষণে অবশ্য পরীক্ষার নির্ধারিত সময় শেষ! এদিকে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাসপাতালে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বিশাখা-র শারীরিক অবস্থা তেমন গুরুতর নয়। বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার মহেশ্বর মান্ডি বলেন, “অতিরিক্ত টেনশন সহ একাধিক কারণে অনেক সময় এরকম হয়। আপাতত ছাত্রীটি সুস্থ আছে। সন্ধ্যা নাগাদ ওকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।” পর্ষদের মনিটরিং কমিটির জেলা আহ্বায়ক সুভাষ হাজরা বলেন, “আশা করছি বৃহস্পতিবার মাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষা (ভৌত বিজ্ঞান) ওর নিজের পরীক্ষাকেন্দ্রে (নটুক বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে)-ই দিতে পারবে ছাত্রীটি।” সকলেই চাইছেন, শেষটা যেন ভালোয় ভালোয় মেটে!

thebengalpost.net
পর্ষদের মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক সুভাষ হাজরা-র সঙ্গে: