দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ নভেম্বর: সেভিংস অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট হওয়া (জমা পড়া) টাকা চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই ‘উধাও’ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে সঠিক ‘ব্যাখ্যা’ দিতে পারেনি ব্যাঙ্ক। এমনই অভিযোগ তুলে গত বুধবারের (৬ নভেম্বর) পর আজ, শুক্রবার ফের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীর সুন্দরা এলাকায় ৬০নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন ৪নং বাঁকিবাঁধ অঞ্চলের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। দুপুর ১টা থেকে চলা সেই ‘অবরোধ’ প্রায় ৫ ঘন্টা ধরে চলার পর, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ওঠে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এক যোগে হস্তক্ষেপ করতে হয় শালবনী ব্লক পুলিশ ও প্রশাসন থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতি ও শাসকদলের নেতৃত্বদেরও। অবশেষে সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ যানজট মুক্ত হয় জাতীয় সড়ক। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন মাঝপথে আটকে পড়া পথযাত্রী থেকে যানবাহন চালকরা। দুপুর ১টা থেকে প্রায় সন্ধ্যা অবধি অবরোধ চলায় জাতীয় সড়কের দুই পাশে প্রায় কয়েক কিলোমিটার জুড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বাস, ট্রাক সহ বিভিন্ন যানবাহন। ফলে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় পথযাত্রী, সাধারণ মানুষ থেকে যানবাহন চালকদের।

thebengalpost.net
ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ:

thebengalpost.net
Advertisement (বিজ্ঞাপন):

বিক্ষোভকারীদের দাবি, সুন্দরা সংলগ্ন সৈয়দপুর এলাকায় অবস্থিত একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সৈয়দপুর শাখায় প্রায় ৪৫০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ২০০-র বেশি গোষ্ঠীর সেভিংস অ্যাকাউন্টে অক্টোবর মাসের শেষের দিকে লক্ষাধিক টাকা ঢুকেছিল। কিন্তু, ব্যাংক তাঁদের অনুমতি না নিয়েই, সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে সেই টাকা তুলে নিয়েছে (withdrawal) বা অন্যত্র ট্রান্সফার (transfer) করে দিয়েছে। এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বুধবার (৬ নভেম্বর) ৪৮ ঘন্টা সময় নিয়েছিলেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তবে, শুক্রবার দুপুর অবধি কোনও সদুত্তর বা ব্যাখ্যা দিতে না পারায়, এদিন (শুক্রবার) বেলা ১টা থেকে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

উল্লেখ্য যে, গত বুধবার (৬ নভেম্বর) বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীর মহিলারা দাবি করেছিলেন, অক্টোবর মাসের শেষে তাঁদের সেভিংস অ্যাকাউন্টে ‘সেলারি ক্রেডিট’ হিসেবে লক্ষাধিক টাকা করে জমা পড়েছিল। কোন অ্যাকাউন্টে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা, আবার কোন অ্যাকাউন্টে তার থেকেও বেশি টাকা জমা পড়েছিল বা ক্রেডিট হয়েছিল। কিন্তু, নভেম্বর মাসের ১ তারিখই সেই টাকা ব্যাংক তাঁদের অনুমতি ছাড়াই তুলে নেয় (withdrawal) বা ট্রান্সফার (transfer) করে নেয়। গত বুধবার এই বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি ব্যাংক। তাই দুপুর থেকে বিকেল অবধি চলে পথ অবরোধ ও বিক্ষোভ। ওই দিন বিকেল নাগাদ এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন শালবনীর বিডিও রোমান মণ্ডল, আইসি দেবাশীষ চক্রবর্তী প্রমুখ। পরে অবরোধ ওঠে। বিডিও জানিয়েছিলেন, “প্রতিটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দু’টি করে অ্যাকাউন্ট। একটি সিসি (Cash Credit Ac/ ক্যাস ক্রেডিট) অ্যাকাউন্ট এবং অন্যটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট। গ্রেড অনুযায়ী (এ গ্রেড, বি গ্রেড প্রভৃতি) প্রতিটি গোষ্ঠীর জন্য যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ হয়, তা প্রথমে ঢোকে সিসি অ্যাকাউন্টে। এবার কোনও স্বনির্ভর গোষ্ঠী ওই পরিমাণ টাকা থেকে তাঁদের প্রয়োজন অনুযায়ী লোন নেয়। সেই লোনের টাকা সেভিংস অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়। ওই টাকার উপরই তাঁদের সুদ দিতে হয়। বাকি টাকা সিসি অ্যাকাউন্টে থেকে যায়। যে টাকার জন্য কোনও সুদ দিতে হয়না। RBI-র নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সিসি অ্যাকাউন্টে থাকা লোনের অতিরিক্ত টাকা মাসের শেষে সেভিংস অ্যাকাউন্টে নিয়ে যাওয়া হয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সুরক্ষার কথা ভেবেই। তবে, পরের দিনই অর্থাৎ নতুন মাসের শুরুতেই ওই টাকা ফের সিসি অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়। এই বিষয়টাই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বোঝাতে না পারায়, সমস্যা হয়েছিল। তার সঙ্গে কিছু মানুষ গ্রামের সহজ-সরল মহিলাদের ভুল বুঝিয়েছিলেন হয়তো!” তবে, শুক্রবার অর্থাৎ ৪৮ ঘন্টা পরেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায়, শুক্রবার দুপুর থেকে ফের শুরু হয় বিক্ষোভ। সেভিংস অ্যাকাউন্টের টাকার দাবিতে ‘অনড়’ মহিলারা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বিকেল অবধি চালিয়ে যান অবরোধ। ঘটনাস্থলে IC, BDO সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী উপস্থিত ছিলেন। উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর প্রচার উপলক্ষে মেদিনীপুরে এসেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার খবর পেয়ে তিনিও গিয়ে আন্দোলনকারী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলেন ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গেও। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহ, প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ সন্দীপ সিংহরাও। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ব্যাঙ্কের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সিসি অ্যাকাউন্টে থাকা লোনের অতিরিক্ত টাকার বিষয়ে প্রতিটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকেই ওয়াকিবহাল করা হবে। কেউ যদি ওই টাকা থেকে লোন নিতে চান বা টাকা তুলতে চান, তাঁরা সেই সুযোগ পাবেন সোমবার থেকেই।

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):