দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ অক্টোবর: বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও, সচেতনতামূলক একের পর এক কর্মশালার পরেও সর্পদষ্ট শিশুকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে, কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে ওঝার উপর ভরসা করতে গিয়ে হারাতে হল প্রাণের পুত্তলিকাকে! মৃত্যু হল তিন বছরের শিশুকন্যা পায়েলি দাসের। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ সপ্তমীর দিন মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষীরপাই শহরের ৩নং ওয়ার্ডে। শুক্রবার অর্থাৎ গতকাল (১১ অক্টোবর) ছিল ছোট্ট পায়েলির জন্মদিন। মেয়ের জন্য ‘পুতুল’ কিনেছিলেন, পেশায় সবজি ব্যবসায়ী, বাবা প্রসেনজিৎ দাস। ‘প্রাণের পুত্তলিকা’ কন্যাকে হারিয়ে, সেই পুতুলও শিলাবতীর জলে ভাসালেন বাবা। বিজয়ার আগেই ‘বিষাদ’ নেমে এল পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষীরপাইতে!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ ফ্রিজের নীচে লুকিয়ে থাকা একটি বিষাক্ত গোখরো সাপ (Spectacled Cobra Or Indian Cobra) হঠাৎই ছোবল মারে তিন বছরের পায়েলি দাসকে। কিন্তু, পরিবারের লোকজন তৎক্ষণাৎ ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে, ওঝাদের উপর উপর ভরসা করেন। ফলে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ নষ্ট হয় বলে জানিয়েছেন ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার রাতেই একটি ফেসবুক পোস্ট করে ঘটনার বিবরণ দেওয়ার সাথে সাথেই, জেলা তথা মহকুমাবাসীকে সচেতন করে তিনি লেখেন, “শুক্রবার বাচ্চাটির জন্মদিন পালিত হওয়ার কথা ছিল। আর আজই (বৃহস্পতিবার) সে মারা গেল! পরিবেশকর্মী মলয় বাবু (মলয় ঘোষ) সাপটি উদ্ধার করেন। ফ্রিজের নিচে বিরাট গোখরো সাপ লুকিয়ে ছিলো। মলয় বাবু জানান, মেয়েটিকে সাপে কামড়ানোর পর দু’জন ওঝাকে ঝাড়ফুঁক করার জন্য আনা হয়। সেই দু’জন ওঝা ফেল করার পর বাড়ির লোক পায়েলিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতাল জানিয়েছে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে! গোল্ডেন আওয়ার নষ্ট করেছে দুই ওঝা।”
তিনি আরও লেখেন, “মৃত পায়েলি দাসের বাবা প্রসেনজিত বাবু সবজি বিক্রি করেন। শুক্রবার বছর তিনেকের পায়েলি দাসের জন্মদিন পালন হওয়ার কথা ছিল। পুতুল কিনেছিলেন প্রসেনজিৎ বাবু। সেই পুতুলও জলে ভাসিয়ে দিলেন অসহায় বাবা! চারিদিকে এখন ঢাকের আওয়াজ। মাইকের কলতানে মুখরিত চারিদিক। পুজো কমিটিগুলির কাছে একান্ত অনুরোধ, সাপের কামড় নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। আপনাদের এলাকার পরিবেশকর্মীদের ডাকুন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান থাকুক। আপনারাও সচেতন করুন সবাইকে। আর কবে আমরা সচেতন হব?”