দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ আগস্ট: গত কয়েকদিন ধরে চলা জল্পনার অবসান ঘটলো সোমবার (১৪ আগস্ট) সাত সকালেই। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও সহ-সভাধিপতি হিসেবে দলের তরফে বেছে নেওয়া হয়েছে যথাক্রমে প্রতিভা রানি মাইতি ও অজিত মাইতি-কে। দলের সেই নির্দেশ মেনে নিয়েই জেলা পরিষদের বাকি ৫৮ জন সদস্য তাঁদের মনোনীত করেন। বেলা ১২টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে অবস্থিত ক্ষুদিরাম পরিকল্পনা ভবনে জেলা পরিষদের সকল বিজয়ী সদস্যদের (৬০ জন) উপস্থিতিতে সভাধিপতি ও সহ-সভাধিপতি হিসেবে শপথ নেন (যথাক্রমে) প্রতিভা রানি মাইতি এবং অজিত মাইতি। প্রসঙ্গত, ৬০ আসন বিশিষ্ট পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের ৬০-টি আসনেই এবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। সভাধিপতি ও সহ-সভাধিপতি ছাড়াও জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে বাকি ৫৮ জনও এদিন শপথ বাক্য পাঠ করেন। জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরী-র অনুমতিক্রমে সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ সভাধিপতি ও সহ-সভাধিপতি সহ জেলা পরিষদের সকল সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পিনাকী রঞ্জন প্রধান।

thebengalpost.net
উত্তরার আলিঙ্গনে প্রতিভা:

উল্লেখ্য যে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতির পদটি ছিল ‘মহিলা সংরক্ষিত’। এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়ী ৬০ জন সদস্যের মধ্যে মহিলা সদস্য ৩৩ জন। অপরদিকে, ৬০ জনের মধ্যে আবার ‘নতুন মুখ’ ৪৭ জন। এর আগে, পর পর দু’বার অর্থাৎ টানা দশ বছর (২০১৩ থেকে ২০২৩) ধরে সভাধিপতির দায়িত্ব সামলেছেন গড়বেতার বর্তমান বিধায়ক উত্তরা সিংহ হাজরা। এবারও, তিনি রেকর্ড ভোটে (প্রায় ৩৯ হাজার) জিতে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে, এবার তাঁকে সভাধিপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়নি দলের তরফে। বেছে নেওয়া হয়েছে প্রতিভা মাইতি-কে। তিনি বিদায়ী বোর্ডের (২০১৮-‘২৩) নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। তার আগে (২০১৩-‘১৮) ছিলেন নারায়ণগড় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। শপথ বাক্য পাঠ করার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রতিভা জানান, “দল আমার উপর যে গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করব। সকলকে সঙ্গে নিয়ে চেষ্টা করব পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদকে রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানে পৌঁছে দিতে।” সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতি জানান, “সামনে শুধু কাজ আর আর কাজ। গ্রামীণ রাস্তা, পানীয় জল, স্বাস্থ্যের উপর জোর দেব। এর আগে সভাধিপতি হিসেবে উত্তরা যথেষ্ট ভালো কাজ করেছেন। আমরা ওঁর পরামর্শও নেবো। আমি প্রতিভা-কেও বলেছি উত্তরার সঙ্গে কথা বলার জন্য। দ্বিতীয়বারের জন্য (সহ-সভাধিপতি হিসেবে) দল আমার উপর আস্থা রাখার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।”

এর আগে এদিন (সোমবার) সকাল ১১টা নাগাদ মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন দলের ৫৯ জন বিজয়ী সদস্য তথা জেলা পরিষদের সদস্য। সেখান থেকেই দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া, শ্রীকান্ত মাহাতো, দলের চেয়ারম্যান দীনেন রায়, রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষের নেতৃত্বে বিজয়ী সদস্যরা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে পৌঁছন বেলা ১১টা ৪৫ নাগাদ। তবে, উপস্থিত ছিলেন না উত্তরা সিংহ হাজরা। তিনি সরাসরি পৌঁছে গিয়েছিলেন জেলা পরিষদের ক্ষুদিরাম পরিকল্পনা ভবনে। যদিও, এই বিষয়ে তার কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে বিভিন্ন মহলের ধারণা তৃতীয়বারের জন্য দল তাঁর উপর আস্থা না রাখায় হয়তো কিছুটা মন খারাপ হয়েছে তাঁর! যদিও, শপথ বাক্য পাঠ করার আগে নব-নির্বাচিত সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি-কে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা জানান উত্তরা। প্রতিভা-ও তাঁর পূর্বসূরী-কে পাশে থাকার আহ্বান জানান। তবে, শপথ বাক্য পাঠ করার পর বাকিরা নিজেদের মধ্যে আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠলেও, দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন উত্তরা! এদিন, এই পুরো প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থেকে, সামনে থেকে ‘প্রতিটি বিষয়ে’ নেতৃত্ব দেন সবংয়ের বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া এবং দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। সুজয় জানান, “দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ সকলেই মাথা পেতে নিয়েছেন। আমাদের দল ঐক্যবদ্ধ। কোথাও কারুর কোন রাগ, অভিমান বা মন খারাপ নেই। সকলে মিলে জেলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য।”

thebengalpost.net
জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, চেয়ারম্যান দীনেন রায় শুভেচ্ছা জানালেন সভাধিপতি ও সহ-সভাধিপতি-কে :