দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ জানুয়ারি: প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল বিজেপির ঘোষিত ‘SP অফিস ঘেরাও অভিযান’-র আগর দিন (রবিবার) থেকেই। ১৪৪ ধারা জারি থেকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের রাস্তা সিসিটিভি দিয়ে মুড়ে ফেলা- সবকিছুই করা হয়েছিল। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) একেবারে ভোর থেকেই SP-র কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পুলিশের দল। শুধু কি তাই! সকাল ৯-টা থেকেই অত্যাধুনিক বর্ম পরিহিত হয়ে রীতিমতো রণ সাজে সজ্জিত ‘প্রশিক্ষিত’ পুলিশের দল ব্যারিকেড তৈরি করেন জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারের কার্যালয়ের সামনে। তৈরী রাখা হয়েছিল জলকামান থেকে কাঁদানে গ্যাসও! উপস্থিত সাংবাদিকদের দল থেকে সাধারণ শহরবাসী দুরু দুরু বুকে আশঙ্কা করছিলেন- “বোধহয় আজ বড়সড় খেলা হবে!” কিন্তু কোথায় কি? বেলা ১২-টা অবধি বিপক্ষের খেলোয়াড়দের দেখাই নেই! সাড়ে ১২-টার পর ‘অধিনায়ক’ তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে অবশ্য দু’তিনশ কর্মী-সমর্থক জড়ো হন জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের অদূরে ওল্ড এলআইসি-র মোড়ে সভাস্থলে।

thebengalpost.net
পুলিশ সুপারের কার্যালয় চত্বরে:

সেখানে সাংসদ দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে যুব মোর্চার জেলা সভাপতি আশীর্বাদ ভৌমিক- বিজেপি’র নেতারা কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারকে। আর তা করতে গিয়ে কখনও কখনও শালীনতার সীমাও অতিক্রম করে যান তাঁরা! আশীর্বাদ বলেন, “…তোমার বাবাকে বাঁচাতে পিসিমণি দিল্লি যাচ্ছেন। তবে লাভ কিছু হবেনা! এপ্রিলে ভোট, মার্চ মাসের মধ্যে তোমার বাবা অভিষেক ব্যানার্জি গ্রেফতার হবে, লিখে রেখে দাও।” সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, “এই SP রেপ কেসের আসামী। আমার কাছে সব তথ্য আছে। এই সব ছোটলোকগুলো এখানে নোংরামি করে বেড়াচ্ছে, তোলাবাজি করছে।” তবে, অন্তত হাজার খানেকও লোক না হওয়ায়, একপ্রকার ফাঁকা মাঠেই গরম গরম বক্তৃতা চলে বেশ কিছুক্ষণ!

thebengalpost.net
পুলিশের ব্যারিকেড:

এরপর, দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে শতাধিক কর্মীকে নিয়ে নামমাত্র ‘আইন অমান্য আন্দোলন’ বা এসপি অফিস ঘেরাও অভিযান অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও বিজেপির নেতাদের সংগঠিত লাগেনি, বরং পরস্পরের মধ্যে রেষারেষি ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। যা দেখেশুনে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-র কটাক্ষ, “দিলীপ ঘোষের ফ্লপ শো! তাঁর মুখ থেকে কুৎসিত কথা শুনে শুনে এখন তাঁর দলেরই কর্মী-সমর্থকেরা বিরক্ত হয়ে গেছেন। তাই লোক জোটেনি! এর থেকে SUCI-র কর্মসূচিতেও বেশি লোক হয়, কারণ তারা অন্তত মানুষের কথা বলে। ৩০-৪০ জন সাগরেদকে সঙ্গে নিয়ে গেছে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করতে! আগে একটা পুলিশ ফাঁড়ি ঠিকঠাক ঘেরাও করে দেখান।” অন্যদিকে, জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সমীর রায় মন্তব্য করেছেন, “এসব নাটক ছাড়া আর কি!” সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিনহার কটাক্ষ, “ওপরে দিদি-মোদির সেটিং কমপ্লিট! এখানে দিলীপ বাবুরা এই সব নাটক দেখানোর চেষ্টা করলেও, মানুষ এখন সব বুঝে গেছেন।” যদিও, কর্মসূচি শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “কাল থেকেই আমাদের কর্মীদের নামে কেস দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আদালতেও উঠতে হয়েছে কয়েকজনকে। ধমকানো-চমকানো হয়েছে সর্বত্র। তবে, তোলাবাজ পুলিশ দিয়ে এভাবে বিজেপিকে রোখা যাবেনা!”

thebengalpost.net
এসপি ধৃতিমান সরকার:

thebengalpost.net
দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে আশীর্বাদ ভৌমিকরা: