দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ ডিসেম্বর: জেলায় জেলায় সংগঠনের জাল বিস্তার করেছিল নতুন সংসদ ভবনে তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় ধৃত ললিত ঝা। ললিত ঝা, নীলাক্ষ আইচ (ওরফে নীল আইচ)-দের তৈরি ‘সাম্যবাদী সুভাষ সভা’র সঙ্গে এবার যোগ মিলল পশ্চিম মেদিনীপুরের। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের যুবক হিমাংশু শেখর মান্না থেকে মেদিনীপুর শহরের মেধাবী পড়ুয়া মনীশ মাইতি- ললিত, নীল-দের সংগঠনে যুক্ত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তবে, হিমাংশু স্বীকার করে নিয়েছেন, ভুল বুঝিয়ে তাঁকে সংগঠনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করেছিল নীল আইচ। সুভাষচন্দ্র বসু (নেতাজি)-র মতাদর্শে বিশ্বাসী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভেবে হিমাংশু সমাজসেবামূলক কিছু কাজও শুরু করেছিলেন বলে জানিয়েছেন। পেশায় মুহুরী হিমাংশু-র অবস্থা যে এই মুহূর্তে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’-র মতোই, তা বলাই বাহুল্য!
যদিও, সংগঠনে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে অকপটে সমস্ত কিছুই স্বীকার করে নিয়েছেন হিমাংশু। সংসদে তাণ্ডবের ঘটনা থেকে ললিতদের সংগঠন- পুরো বিষয়ে সঠিক তদন্তের দাবিও করেছেন তিনি। অন্যদিকে, ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপন করেছেন শহর মেদিনীপুরের বছর ২০-২১’র পড়ুয়া মনীশ। উল্লেখ্য যে, সংসদে তাণ্ডবের ঘটনায় মূল চক্রী হিসেবে গ্রেফতার হওয়া ললিত ঝা, নীলাক্ষ আইচদের ‘সাম্যবাদী সুভাষ সভা’- এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অভিযোগ, কলকাতার রবীন্দ্র সরণি-র বাসিন্দা ললিত কিংবা নদীয়ার হালিশহরের নীলাক্ষ ফেসবুক সহ সমাজমাধ্যম-কে কাজে লাগিয়ে নিজেদের সংগঠন বাড়ানোর কাজে নেমেছিল। মাস দুয়েক আগে সমাজমাধ্যমেই যোগাযোগ করা হয় দাসপুরের মুহুরী (ল ক্লার্ক), বছর ৩০’র হিমাংশু শেখর মান্না-র সঙ্গে। হিমাংশু স্বীকার করেছেন, মাস দুয়েক আগে ফেসবুকে ওই সংগঠনের বিষয়ে জানতে পেরে যুক্ত হয়েছিলেন। এরপর, নীলাক্ষ আইচ তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করে, কিছুদিন পর এডমিন করে দিয়েছিলেন। দাসপুর, ঘাটাল সহ আশেপাশের এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। এমনকি, এলাকায় সংগঠন তৈরি করার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল।
হিমাংশু আরও জানায়, এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ফান্ড জমা করতে বলা হয়েছিল তাঁকে। তবে, একটি এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভেবেই যে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন, তাও জানিয়েছেন হিমাংশু। ললিত ঝা যে সংসদে হামলার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাতে পারে, বিন্দু বিসর্গও টের পাননি তিনি। টিভি-তে সংসদ হামলার খবর দেখানোর পরেই গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান হিমাংশু। তাঁর মাধ্যমে ওই গ্রুপে যুক্ত হওয়াদেরকেও তিনি রিমুভ করে দেন গ্রুপ থেকে। এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। হিমাংশু বলেন, “আমিও তো অবাক হয়ে গেছি! ওই সংগঠনের বিষয়ে প্রকৃত সত্য উদঘাটনক হোক, আমিও চাইছি।” একইভাবে মেদিনীপুর শহরেও টার্গেট করা হয় মনীশ মাইতি নামে বছর ২১-র এক যুবককে। শনিবার রাতে মেদিনীপুর শহরে ডিরোজিওনগরে মনীশের বাড়িতে গেলেও দেখা মেলেনি তাঁর। দেখা মেলেনি রবিবার দুপুরেও। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন তাঁরা এই বিষয়ে বিন্দু বিসর্গ কিছু জানেন না! মনীশ মেডিকেলের পড়ুয়া বলেও একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে, এভাবেই যে ‘সাম্যবাদী সুভাষ সভা’ জেলায় জেলায় জাল বিস্তারের চেষ্টা করছিল, তা বলাই বাহুল্য! এই মুহূর্তে গোটা দেশের মানুষ জানতে চাইছেন ওই সংগঠনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে।