দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ এপ্রিল: “খুনি কিংবা অপরাধীর কোনও রাজনৈতিক রঙ হয়না, জাতি-ধর্ম হয়না। অপরাধীর পরিচয় একটাই সে অপরাধী। আর, তার স্থান শুধুমাত্র জেলে। আমি নিশ্চিত করতে চাই, অপরাধীর শাস্তি হবেই। তাকে জেলে যেতে হবে।” সোমবার বিকেলে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা বিধানসভার অধীন খড়্গপুর গ্রামীণ থানার বারবাসী গ্রামে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ঠিক এই বার্তাই দিয়েছেন রাজ্যপাল সি.ভি আনন্দ বোস। উল্লেখ্য যে, প্রতিশ্রুতি মতোই মৃত বিজেপি কর্মী শান্তনু ঘোড়ই (৩২)-র পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সোমবার দুপুর দেড়টা নাগাদ ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেসে করে খড়্গপুর স্টেশনে পৌঁছন রাজ্যপাল। তাঁকে স্বাগত জানান DRM কে.আর চৌধুরী সহ অন্যান্য রেল আধিকারিকরা। এরপর, বেলা আড়াইটা নাগাদ বারবাসী গ্রামে পৌঁছন রাজ্যপাল। গত ২৩ মার্চ (২০২৪) দুপুরে ওই গ্রামেরই ধান ক্ষেত থেকে উদ্ধার হয়েছিল বিজেপি কর্মী শান্তনু ঘোড়ইয়ের রক্তাক্ত মৃতদেহ। খুনের অভিযোগ এনেছিলেন পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে বিজেপি নেতৃত্ব।
যদিও, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের তরফে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট উল্লেখ করে প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। ‘প্রতিবাদ’ জানিয়ে শান্তনুর মৃতদেহ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গ থেকে এখনও গ্রহণ করেনি পরিবার! দাবি তোলা হয়েছে, কোনও কেন্দ্রীয় হাসপাতালে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য! অন্যদিকে, বিজেপি নেতৃত্বের উদ্যোগে বা সহায়তায় পরিবারের সদস্যরা সঠিক বিচারের দাবিতে রাজভবন ও হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। মৃত শান্তনু’র মা সহ শোকার্ত পরিবারকে রাজ্যপাল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি বারবাসী গ্রামে যাবেন। প্রতিশ্রুতিমতোই সোমবার গ্রামে পৌঁছন রাজ্যপাল। তাঁকে কাছে পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার। তাঁদের আশ্বস্ত করেন রাজ্যপাল। এরপর, মৃত শান্তনু’র নাবালক ছেলেকে কাছে টেনে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। বলেন, “খুন বা অপরাধ আড়াল করা ঠিক নয়। রাজনৈতিক খুন কিনা, সেটা তদন্তকারীরা বের করবে। তবে, দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হতে হয়েছে, এটা সত্য। ফলে এই শিশুটি তার বাবাকে অকালে হারিয়েছে। একজন স্ত্রী তাঁর স্বামীকে এবং একজন মা তাঁর সন্তানকে হারিয়েছেন। তাই, অপরাধীকে শাস্তি পেতেই হবে। এটা আমি নিশ্চিত করতে চাই। রাজ্যের দরিদ্র, অসহায় মানুষের পাশে রাজ্যপাল আছে; এটা আমার আশ্বাস নয়, অঙ্গীকার। তাঁদের হয়ে আমি লড়াই করব। আমি তাঁদের বিচার পাইয়ে দেব। সেজন্যই আমি তাঁদের সঙ্গেই রাস্তায় আছি।” দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের দাবি সম্পর্কে রাজ্যপাল বলেন, “আইন মেনে যা হওয়ার হবে।”
রাজ্যপাল এও স্মরণ করিয়ে দেন, “শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাতে আমি বদ্ধপরিকর। আপনারা পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ও দেখেছেন, যেখানেই অশান্তি হয়েছে আমি পৌঁছে গেছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই হিংসার রুখতে আমি সচেষ্ট হয়েছি। লোকসভা নির্বাচনও যাতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়, সেজন্য যা করতে হয়, আমি করব।” অন্যদিকে, রাজ্যপালের এদিনের সফরকে কটাক্ষ করা হয়েছে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে। জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-র মন্তব্য, “রাজ্যপাল বলবেন না, বলুন পদ্মপাল! উনি রাজনীতি করতে এসেছিলেন। রাজনীতি করে চলে গিয়েছেন। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ তা করছে।”