দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ জানুয়ারি: সোনার দোকানে চুরি-ডাকাতি রুখে দিতে অভিনব উদ্যোগ পশ্চিম মেদনীপুর জেলা পুলিশের। জেলার সমস্ত সোনার দোকানে বসানো হবে অত্যাধুনিক এক ‘সেন্সর ডিভাইস’। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুরক্ষা কবচ’। জেলা পুলিশের উদ্যোগে, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আগামী ২৭ জানুয়ারি খড়্গপুর শহরের ১০টি সোনার দোকানে বসানো হবে এই ‘সুরক্ষা কবচ’ যন্ত্রটি। ধাপে ধাপে মেদিনীপুর, দাসপুর, ঘাটাল, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোডের বিভিন্ন দোকানেও অত্যাধুনিক এই সেন্সর ডিভাইস বসানো হবে। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) খড়্গপুর শহরের গোলবাজারের একটি দোকানে যন্ত্রটির ডেমোনস্ট্রেশন বা ব্যবহার প্রণালী দেখানোর পর এমনটাই জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। আগামী তিন মাসের মধ্যেই জেলার সমস্ত দোকানে এই ‘সুরক্ষা কবচ’ বসানোর কাজ সম্পূর্ণ করার ইচ্ছে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোনার দোকানে দুষ্কৃতী-হানা তথা চুরি-ডাকাতি রুখতে জেলা পুলিশের উদ্যোগে গত তিন মাসের প্রচেষ্টায় এই যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন জেলা পুলিশ ধৃতিমান সরকার। প্রতিটি যন্ত্র তৈরি করতে ৫-৭ হাজার টাকা খরচ হলেও, এখনই স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোন অর্থ নেওয়া হবে না বলেও শুক্রবার জানিয়েছেন তিনি। এদিন, ডেমোনস্ট্রেশনের মাধ্যমে তিনি দেখিয়ে দেন, এই সুরক্ষা কবচে তিনটি পৃথক ইউনিট থাকবে। প্রথমটি ক্যামেরা ইউনিট, দ্বিতীয়টি সেন্সর ইউনিট এবং তৃতীয়টি পাওয়ার ইউনিট। মূলত সেন্সর ইউনিটের মাধ্যমেই বার্তা পৌঁছবে জেলা পুলিশের হেড কোয়ার্টার তথা স্থানীয় থানার কাছে। দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে জেলা পুলিশের কুইক অ্যাকশন টিম বা কিউএটি। উল্লেখ্য যে, গত ৯ জানুয়ারি খড়্গপুর শহরে বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির একটি অনুষ্ঠানে অত্যাধুনিক এই সেন্সর ডিভাইসের বিষয়ে জানিয়েছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। ওই দিনই তিনি জানিয়েছিলেন, ১৭ জানুয়ারি ডেমোনস্ট্রেশন করা হবে। কথা রাখলেন পুলিশ সুপার। এদিন তিনি ডেমোনস্ট্রেশনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন খড়্গপুর শহরের গোলবাজারের সেই দোকানটিকে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যে দোকানে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। আর ৫ ঘন্টার মধ্যেই ৫ আন্তঃরাজ্য দুষ্কৃতীকে পাকড়াও করে নজির গড়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ।
কিভাবে কাজ করবে এই যন্ত্র:
জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানিয়েছেন, “সেন্সর ইউনিটে একটি SOS বটন এবং একটি মোশন সেন্সর (Motion Sensor) থাকবে। ওই ইউনিট অ্যাপের মাধ্যমে কানেক্ট থাকবে আমাদের সঙ্গে। স্থানীয় থানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং ডিস্ট্রিক্ট কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ থাকবে।”
কিভাবে হবে এর ব্যবহার?
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপারের বার্তা, “আপনারা যখন সকালে দোকানে প্রবেশ করবেন সেন্সর ইউনিটের এসওএস বটনটা অন করে দেবেন আর মোশন সেন্সরটা অফ করে দেবেন। SOS অন করলেই বা এতে টাচ করলেই আমরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আপনার দোকানের সমস্ত ছবি পেয়ে যাব। কারণ এই যন্ত্রে আইপি ক্যামেরা লাগানো থাকবে। আর থাকবে একটা সেন্সর। আপনি রাতে যখন দোকান থেকে চলে যাবেন, তার আগে SOS-টা বন্ধ করে, মোশন সেন্সর অন করে দিয়ে যাবেন। আপনার দোকান বন্ধ থাকা অবস্থায় যদি আপনার দোকানে কোনও ধরনের অনধিকার প্রবেশের চেষ্টা হয় বা দুষ্কৃতীরা প্রবেশ করার চেষ্টা করে মোশন সেন্সরের মাধ্যমে আমরা বার্তা পেয়ে যাব। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সশস্ত্র QAT (Quick Action Team) টিম ওই জায়গায় পৌঁছে যাবে।”