দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ আগস্ট: সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে ৩০০-র বেশি ট্রাক। পচতে বসেছে সমস্ত আলু। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের ‘অসহায়’, ‘বিপন্ন’ দাবি করে মঙ্গলবার দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিলেন জেলার সমস্ত আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তার আগে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভে সমিল হন জেলার কয়েক হাজার আলু চাষি। তাঁদের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে ৩০ টাকায় (প্রতি কেজি) আলু খাওয়াতে চাইছেন। আমরা ২৪ টাকাতেও আলু দিতে রাজি। কিন্তু, উনি তো সেই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না! উনি যে কি চাইছেন আমরা বুঝতে পারছিনা। উল্টে আমরা ভিন রাজ্যে আলু পাঠাতে চাইলে আমাদের গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন সীমান্তে প্রায় ৩০০-র বেশি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। পচে যাচ্ছে সমস্ত আলু। আমরা আজ অসহায়, বিপন্ন হয়েই জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছি। কিভাবে আমাদের দিন কাটছে উনি একটু দেখুন।”
আলু চাষিদের এও দাবি, “ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে আমরা আলু চাষ করেছি। জেলায় (গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোড, শালবনী, চন্দ্রকোনা টাউন) যা আলু উৎপাদিত হয়, এখানে তার মাত্র ১৫-২০ শতাংশ লাগবে। বাকি আলু যদি রাজ্য সরকারও না কেনে আর ভিন রাজ্যেও না পাঠাতে দেন; আমরা ঋণ পরিশোধ করব কি করে? এখন ধানের মরশুম চলছে। অনেক খরচ। এই পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই! আমরা তো বলছি, সমস্ত আলুই রাজ্য সরকার ২৪ টাকা (প্রতি কেজি) করে কিনে নিন। রাজ্য সরকারের সুফল বাংলা স্টল আছে। আরও আনেক ব্যবস্থা আছে। আমরাও সহযোগিতা করতে রাজি।” এদিন, ভিন রাজ্যে আলু পাঠাতে দেওয়ার দাবি ছাড়াও; সারের কালোবাজারি রোখা, কীটনাশকের দাম কমানো, ন্যায্য মূল্যে আলু বীজ দেওয়ার দাবিও জানানো হয় আলু চাষিদের জেলা সংগঠনের তরফে।
এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে,আলু চাষিদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাজ্য সরকারের ভুলনীতিকে দায়ী করেছেন মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপি-র মুখপাত্র অরূপ দাস। তাঁর মতে, “অবিলম্বে আলু চাষিদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বৈঠক করা উচিত। রাজ্যের কতটা আলু লাগবে, সেটা আলু চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ভিন রাজ্যে আলু না পাঠালে, চাষিদের চলবে কি করে! পুরো ব্যবস্থাটাই তো ভেঙে পড়বে। অন্য রাজ্য যদি বলে, আমরা পেঁয়াজ বা মাছ আসতে দেব না; তখন কি হবে!” এই বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “আমাদের জেলার অর্থনীতিতে আলু-র গুরুত্ব অপরিসীম। জেলায় যে পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়, তাতে ভিন রাজ্যে না পাঠালে চাষিরা প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আমাদের জেলার যাঁরা মন্ত্রী বা বিধায়ক আছেন, এই বিষয়ে তাঁদেরও সদর্থক ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানাব। মুখ্যমন্ত্রীও উদ্যোগ নিচ্ছেন। আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয়ই দ্রুত সমাধানের পথ বেরোবে।”