দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ নভেম্বর: গত ১৬ নভেম্বর (বুধবার) দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের ভাদুতলা সংলগ্ন মুড়িগেড়্যার জঙ্গলের ভিতর থেকে এক মহিলার অর্ধনগ্ন ও অর্ধদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল শালবনী থানা। জানা যায়নি নাম-পরিচয়। তবে, অস্বাভাবিক বা রহস্য মৃত্যুর আঁচ পাওয়া গিয়েছিল প্রথম থেকেই। প্রাথমিক তদন্তের পর বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৭ নভেম্বর স্বতঃপ্রণোদিত খুনের মামলা রুজু করেছিল শালবনী থানা। মৃতদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। অবশেষে, প্রায় ৯ দিনের মাথায় ওই মহিলার নাম, পরিচয় জানা গেল। তাঁকে সনাক্ত করলেন পরিবারের লোকজন। জানা গেছে, দাসপুর থানার গয়লাখালি গ্রামের বাসিন্দা ওই গৃহবধূর নাম সুনীতা মান্না। বয়স আনুমানিক ২৮। উল্লেখ্য যে, সুনীতা’র বাপের বাড়ি গয়লাখালি গ্রামে, তবে শ্বশুরবাড়ি দাসপুর থানারই নিশ্চিন্তপুর বারাসত এলাকায়। তবে, গত ৫-৬ বছর ধরে নিজের বাপের বাড়িতেই এক সন্তানকে নিয়ে থাকতেন ওই তরুণী। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে একাধিক কারণে সম্পর্ক প্রায় ছিলোনা বলেই জানা গেছে।

thebengalpost.net
সুনীতা মান্না :

পুলিশ সূত্রে এও জানা গেছে, গত ১১ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন সুনীতা। কয়েকদিন খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান না মেলায়, গত ১৭ নভেম্বর দাসপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয় তাঁর বাপের বাড়ির তরফে। এদিকে, ১৬ নভেম্বর দুপুরে জঙ্গল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করে শালবনী থানা। এরপরই, তদন্ত এগোতে থাকে। দাসপুর থানা মারফত খবর দেওয়া হয় সুনীতা’র পরিবারে। শুক্রবার বিকেলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে এসে মেয়েকে সনাক্ত করেন বাবা লক্ষ্মণ মান্না সহ পরিবারের সদস্যরা। তবে, মুখ দেখে চেনার উপায় ছিলোনা, কারণ, প্রমাণ লোপাট করার জন্য দুষ্কৃতীরা তাঁর মুখ আগুনে ঝলসে দিয়েছিল বা পুড়িয়ে দিয়েছিল। সুনীতার পোশাক, হার, গয়নাগাটি প্রভৃতি দেখেই সনাক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ময়নাতদন্তের পর তাঁর দেহ নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। এদিকে, পুলিশ তরফেও এই ‘খুন’ বা অস্বাভাবিক মৃত্যু রহস্যের তদন্ত-জাল প্রায় গুটিয়ে আনা হয়েছে বলে বিশেষ সূত্রে খবর।

প্রসঙ্গত এও উল্লেখ্য, বুধবার দেহ উদ্ধারের সময় জঙ্গলের মাঝে গাড়ির চাকার দাগ, আশেপাশের ছোটো গাছ-পাতা ঝলসে যাওয়া, পোড়া কাপড়ের টুকরো, কাটা চুল, শাঁখা-পলার টুকরো এবং মাটির উপর রক্তের দাগ দেখেই পুলিশ প্রাথমিকভাবে অনুমান করেছিল ‘খুন’ এর ঘটনা বলে। তবে, কাকে, কি কারণে ‘খুন’ তা তদন্তে স্পষ্ট হচ্ছিলো না! এবার তা সহজেই নির্ধারণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বামী-বিচ্ছিন্না বছর ২৮-এর সুনীতা মাঝেমধ্যেই বাড়ির বাইরে যেতেন বিভিন্ন কাজের সূত্রে! সেই সূত্রে এক বা একাধিক সম্পর্কেও জড়িয়ে থাকতে পারেন। অথবা, কর্মসূত্রেও গড়ে উঠতে পারে শত্রুতা! এছাড়াও, এক বা একাধিক কারণ থাকতে পারে। যা ইতিমধ্যেই পুলিশের তরফে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যেই অপরাধী বা অপরাধীদের ধরা সম্ভব হবে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।

thebengalpost.net
ভাদুতলা ও বুড়িশোল সংলগ্ন এই জঙ্গল থেকেই উদ্ধার হয়েছিল মৃতদেহ: