দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ জানুয়ারি: বিজেপির এসপি অফিস ঘেরাও অভিযানের ঠিক পরের দিনই, আজ, মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের ১০ নং কর্ণগড় অঞ্চলের মোহনপুর এলাকায় এক বিজেপি সমর্থকের দেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল! মৃত বছর ৩৫-র যুবকের নাম মিঠুন খামরই। বাড়ি শালবনীর কর্ণগড়েই। এদিন, সকাল ১০-টা নাগাদ মিঠুনের রক্তাক্ত ও নিথর দেহ উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে শালবনী থানার পুলিশ। ঘটনা ঘিরে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি’র মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক চাপান-উতোরের সৃষ্টি হয়েছে।
বিজেপির স্থানীয় মণ্ডল সহ-সভাপতি গোপাল মিদ্যার অভিযোগ, মিঠুন ও তাঁর পরিবার তাঁদের দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও সক্রিয়ভাবে যুক্ত। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে। তাঁর দাবি, “সোমবার মোহনপুরে একটি মেলা ছিল। সেখানে গিয়েছিল মিঠুন। আমি নিশ্চিত ওকে খুন করা হয়েছে। খালের উপরের সেতু থেকে নীচে কংক্রিটের ক্যানালে পড়লে দেহ সম্পূর্ণ বিকৃত বা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত। কিন্তু, মাথার পেছনে আঘাত ছাড়া গোটা দেহ ওর পরিস্কার। এতেই বোঝা যাচ্ছে খুন করে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ওর বাবা-মা আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী। মিঠুনও আমাদের দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। পুলিশ উপযুক্ত তদন্ত করলেই সত্য উঠে আসবে।” অন্যদিকে, তৃণমূল পরিচালিত কর্ণগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তীর দাবি, “মিঠুন কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। ছেলেটি ভদ্র। তবে একটু আধটু নেশা করতো। কিভাবে মৃত্যু হয়েছে পুলিশ সঠিক তদন্ত করুক।”
জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে মোহনপুর এলাকায় একটি পারাং নদীর খালে তথা একটি কালভার্টের নীচে স্থানীয় যুবক মিঠুন খামরইয়ের রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। এরপরই তাঁরা পুলিশে খবর দেন। শালবনী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। মৃতের বাবা রাম খামরুই এর অভিযোগ, গত ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রায় একমাস ঘরছাড়া ছিল তাঁদের পরিবার। পুলিশের সহযোগিতায় বাড়ি ফিরলেও চলতো শাসকদলের হুমকি! তারপরেই এই ঘটনা! যদিও, মিঠুনের বছর ১২-র ছেলে সৌভিকের দাবি, “বাবা কাল বিকেলে এখানে মেলায় এসেছিল। সেখানে মনে হয় বন্ধুদের সঙ্গে মদ্যপান করেছিল। বন্ধুরাই হয়তো বাবাকে মেরে দিয়েছে!” নাবালক মিঠুনও বাবার মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চাইছে। অন্যদিকে, বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ রায়ের অভিযোগ, “এটি একটি রাজনৈতিক হত্যা। মদ্যপ অবস্থায় হোক বা সুস্থ অবস্থায়, খুন করা হয়েছে আমরা নিশ্চিত! ওর বাড়িতে এর আগেও হামলা হয়েছিল। ঘটনার ধামাচাপা না দিয়ে, পুলিশ সঠিক তদন্তক করুক।” পাল্টা তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-র কটাক্ষ, “গতকাল বিজেপির এসপি অফিস ঘেরাও অভিযান সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাই এই সমস্ত আজেবাজে অভিযোগ এনে বাজার গরম করতে চাইছে। যে কোনও মৃত্যুই দুঃখের। ময়নাতদন্ত হলেই সঠিক কারণ উঠে আসবে। তবে, ওই যুবক যে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত, এরকম কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। পুলিশ সঠিক তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করুক আমরাও চাইছি।”