thebengalpost.net
প্রতীকী ছবি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ জানুয়ারি: বাস্তবের এই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই অভিষেক বচ্চন, জন আব্রাহাম অভিনীত ‘ধুম’ (Dhoom) সিনেমার চিত্রনাট্যের অনেক মিল খুঁজে পাচ্ছেন! চলন্ত ট্রাক থেকেই উধাও ১০ কোটি টাকার আইফোন (iPhone)। ট্রান্সপোর্ট বা পরিবহন সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা টোল-প্লাজার আগে লুট হয়ে যায় ট্রাকে থাকা প্রায় ১০ কোটি টাকার আইফোন। গত তিন মাসের আগের এই ঘটনায় ডেবরা থানায় FIR দায়ের হলেও, পুলিশ ঠিকঠাক তদন্ত করেনি এই অভিযোগ করে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে ওই পরিবহণ সংস্থা। গতকাল অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি (সোমবার) বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে যে শুনানি হয়, তাতে ওই পরিবহন সংস্থার আইনজীবীর বর্ণনা শুনে কার্যত ‘চক্ষু চড়ক গাছ’ হয়ে যায় স্বয়ং বিচারপতি থেকে শুরু করে এজলাসে থাকা প্রত্যেক আইনজীবীদেরই!

thebengalpost.net
প্রতীকী ছবি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে:

পরিবহণ সংস্থার আইনজীবীর বর্ণনা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চেন্নাই থেকে একটি ট্রাক মোট ৯.৭০ কোটি টাকা মূল্যের অ্যাপলের আইফোন নিয়ে রওনা হয়। সেটির গন্তব্য ছিল কলকাতা। ওই ট্রাক বা লরির গতিবিধির উপর নজরদারি চালাতে অত্যাধুনিক ‘জিপিএস সিস্টেম’ ব্যবহার করে পরিবহণ সংস্থাটি। ফলে লরিটি ৫ মিনিটের বেশি কোথাও দাঁড়ালেই সতর্কবার্তা পৌঁছে যাবে পরিবহণ সংস্থার অফিসে! সেই মুহূর্তে অফিস থেকে গাড়ির চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তাঁকে গাড়ির অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে অফিসকে। অভিযোগ, লরিটি রওনা হওয়ার পরের দিন তিনটি রাজ্য পেরিয়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে। অফিস জানতে পারে, ওই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৬-টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার (নতুনবাজার এলাকার) একটি পেট্রল পাম্পে লরিটি ৫ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে রয়েছে। তখনই চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু, লরির চালককে বার বার ফোন করা হলেও তিনি তোলেননি। এই অবস্থায় ৪৫ মিনিট পরে ডেবরা থানায় খবর দেওয়া হয় পরিবহণ সংস্থার তরফে। ঘটনাস্থলে গিয়ে লরিটি উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ গিয়ে দেখে লরিটি ফাঁকা। গাড়িতে কোনও আইফোন নেই! এমনকি, সেখানে চালক, খালাসি কাউকেই দেখা যায়নি। ফোন লুটের বিষয়ে এলাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি।

সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে ওই পরিবহণ সংস্থার আইনজীবী-র সওয়াল, অনুমান করা হচ্ছে চলন্ত অবস্থাতেই ওই লরি থেকে আইফোনগুলি চুরি করা হয়েছে। কারণ, তার আগে গাড়িটি কোথাও দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়েনি। এ রাজ্যে ঢোকার পরে ওই লরির পাশাপাশি আরেকটি লরি চলে আসে! দু’টি গাড়ি দীর্ঘক্ষণ একই গতিতে পাশাপাশি এগিয়ে চলে। ওই অবস্থাতেই ফোনগুলি লুট করা হয়ে থাকতে পারে। ওই কাজটি ডেবরার টোলপ্লাজার আগে সম্পূর্ণ করা হয়েছে, যাতে টোলপ্লাজায় গাড়িগুলির যোগসাজশ শনাক্ত করা না যায়। আর ফোন লুটের এই চিত্রনাট্যের সঙ্গেই বলিউডের সিনেমা ‘ধুম’-র যেন কোথাও একটা মিল খুঁজে পাচ্ছেন আইনজীবীরা! এরপর, পরিকল্পনামাফিক টোলপ্লাজা পার হওয়ার পরে গাড়িটি একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে ফেলে রেখে চালক, খালাসি চম্পট দেয়! ওই আইনজীবীর দাবি, মূলত নিরাপত্তার উপর অনেক বেশি জোর দেয় আইফোন। লুটের পরে ফোনগুলি যাতে কালোবাজারে না যায় বার বার পুলিশকে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। তারা তা করতে পারেনি। এমনকি প্রথমে পুলিশ এফআইআর পর্যন্ত নেয়নি। পরে গত ১০ অক্টোবর ওই ঘটনায় এফআইআর (FIR) দায়ের হয়। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এরপরই, কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ওই পরিবহন সংস্থা। বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত নির্দেশ দেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে ঘটনাটির ভালোভাবে তদন্ত করতে হবে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি জেলা পুলিশের তরফে স্বীকার করা হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।