শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ জুলাই: সাতে পা দিল অর্পিত। পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী। এই বয়সেই গড়গড় করে 100 থেকে 1 অবধি বা ১০০ থেকে ১ অবধি (ব্যাক ক্যালকুলেশন) বলে দিতে পারে। যা দেখে তাই এঁকে ফেলতে পারে নিমেষের মধ্যে! সেই অর্পিতেরই ইচ্ছে হয় তার এবারের জন্মদিনটা একটু অন্যরকম ভাবে পালন করুক বাবা-মা। বাড়িতে হইহুল্লোড় করে নয়, বরং তার বয়সী যে সমস্ত বন্ধুবান্ধব, দাদা-দিদিরা চাইলেই আনন্দে মেতে উঠতে পারেনা, ভালোমন্দ খেতে পারেনা সবসময়; তাদের সঙ্গেই জন্মদিন পালন করতে চেয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার ছোট্ট অর্পিত। ডেবরার বাসিন্দা, পেশায় ব্যবসায়ী লালমোহন পাত্র এবং অপর্ণা পাত্র-ও নিজেদের একমাত্র সন্তানের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে খুঁজে বের করেছিলেন জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত বিনপুর-২নং (ঝাড়গ্রাম জেলার) এলাকায় অবস্থিত এক প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে পড়াশোনা করে। যাদের কাছে স্কুলের মিড-ডে মিলটাই হয়তো অমৃত স্বরূপ! সেই শিশু শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই শুক্রবার (১৯ জুলাই) নিজের শিশুসন্তানের জন্মদিন পালন করলেন পেশায় ব্যবসায়ী তথা নেশায় সমাজকর্মী লালমোহন ও তাঁর সুযোগ্য সহধর্মিনী অপর্ণা।
পেট পুরে খাওয়া-দাওয়ার পর কচিকাঁচাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় উপহার। শিশুদের নিয়ে কেক কাটা ও ভুরিভোজের মধ্য দিয়ে নিজের ছেলে অর্পিতের সাত বছরের জন্মদিন পালন করেন ডেবরার ব্যাবসায়ী লালমোহন পাত্র। শুক্রবার উৎসবের চেহারা নেয় বিনপুরের ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়। কেক কাটার পর ছিল ভুরিভোজের আয়োজন। পাতে ছিল আলু ভাজা, ভাত, ডাল, আলু পোস্ত, মাংস, চাটনি, পাপড় এবং মিষ্টি। সঙ্গে ছিল জন্মদিনের পায়েসও। খাওয়া-দাওয়ার পর শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় উপহার। উপহার পেয়ে খুশিতে ডগমগ ফুলের মতো ছোট্ট শিশুরা! পাত্র দম্পতি বলেন, “আমরা অতিমারীর সময়ও মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। ছেলের এবারের জন্মদিনটাও হইহুল্লোড় করে, হাজার লোক খাইয়ে উদযাপন করার ইচ্ছে আমাদের ছিল না! আর, অর্পিতও চেয়েছিল কোনও এক স্কুলে গিয়ে অনেক বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে একসাথে আনন্দ করতে। তাই, অনেকের কাছে খোঁজখবর নিয়ে এই স্কুল খুঁজে বের করি আমরা। প্রত্যন্ত এই এলাকায় পৌঁছে একটা দিন ওদের সঙ্গে আনন্দে কাটালাম। এটাই তো জীবনের অন্যতম এক ‘স্মৃতি’ বা ‘উপহার’ হয়ে থাকল আমাদের কাছেও!” ভবিষ্যতেও যে কোনও আনন্দানুষ্ঠান এভাবেই পালন করার অঙ্গীকার করেছেন লালমোহন ও অপর্ণা।