শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ জুন: পঞ্চায়েত নির্বাচনের মাত্র ৯ দিন আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বিজেপি এক বুথ সভাপতির ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়াল রাজ্য জুড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা-সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে সবং ব্লকের ৯ নং বলপাই অঞ্চলের পনিথর ১৫৬ নং বুথে। মৃত ওই ব্যাক্তির নাম দীপক সামন্ত। বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ বাড়ির মধ্যে দীপক-কে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় পরিবারের লোকজন। এরপরই, খবর দেওয়া হয় সবং থানায়। দেহ উদ্ধার করে সবং গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। মৃতের স্ত্রী বৈশালী সামন্তের অভিযোগ, “বিজেপি করে বলে আমার স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে।” বিকেল নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র ভারতী ঘোষ, জেলা সভাপতি তন্ময় দাস প্রমুখ।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, এদিন আনুমানিক সকাল ১০টা পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই সকলের সাথে কথা বলেছে দীপক। সকাল ১১টার কিছুক্ষণ পর নিজের বাড়ি থেকেই তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। জানা যায়, দীপকের স্ত্রী ছাড়াও একটি ২ বছরের সন্তান আছে। যদিও, পারিবারিক নানা কারণে তার স্ত্রী সম্প্রতি বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। তৃণমূলের তরফে তাই দাবি করা হয়েছে, দীপক মানসিক অবসাদের কারণেই আত্মহত্যা করেছে। দীপকের মা ঊষা রানী সামন্ত’র অভিযোগ অনুযায়ী, তাঁর ছোট বৌমা অর্থাৎ দীপকের স্ত্রী বৈশালী সামন্ত এবং বড় বৌমা অর্থাৎ বৌদি সুষমা সামন্তের জন্যই তাঁর ছেলে আত্মহত্যা করেছে। তিনি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে জানিয়েছেন, “আমার বড় বৌমা (সুষমা সামন্ত) ও ছোট বৌমা (বৈশালী সামন্ত)’র দেওয়া মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে, আমার ছোট ছেলে দীপক সামন্ত আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করছি।” তবে, দীপকের স্ত্রী বৈশালী খুনের অভিযোগ এনেছেন একাধিক তৃণমূল নেতাকর্মী সহ ২০ জনের বিরুদ্ধে। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তিনি সবং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। স্থানীয় অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সহ ২০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তিনি।
উল্লেখ্য যে, মৃত দীপক সামন্ত পানিথর বুথের বিজেপির বুথ সভাপতি ছিলেন। বিজেপি নতৃত্বের অভিযোগ, বিজেপি করার অপরাধে বিধানসভা নির্বাচনের পর স্থানীয় তৃণমূলের নেতৃত্বের নির্দেশে দীপককে এলাকা থেকে বয়কট করা হয়েছিল। এমনকি প্রায় দুই বছর তার নিজের জমিতে চাষবাস করাও বন্ধ করে দিয়েছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। কিছুদিন আগে অবশ্য সেই বয়কট তুলে নেওয়া হয়। বিজেপি নেতৃত্বের আরও অভিযোগ, এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে সবংয়ের ৯ নং বলপাই অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির নেতৃত্বে দীপককে একাধিকবার খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাঁর স্ত্রীকে সাদা থান পরানোর হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ। বৃহস্পতিবার সকালে দীপকের রহস্যজনক মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে ইতিমধ্যে তাই রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়েছে। বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র ভারতী ঘোষ জানিয়েছেন, “এর আগে, বিজেপি করার অপরাধে ওকে দু’বছর ধরে বয়কট করে রাখা হয়েছিল। নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই ওকে খুনের হুমকি দিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। শেষমেষ ওক মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এই খুনের সঠিক বিচার চাই। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত করতে হবে।” অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি জানিয়েছেন, “তৃণমূলের খেয়ে দেয়ে কাজ নেই ওকে খুন করতে যাবে। ওখানে বিজেপির কোনো অস্তিত্বই নেই। পারিবারিক ও মানসিক অবসাদের কারণে আত্মহত্যার ঘটনাকে খুন বলে চালাতে চাইছে বিজেপি। পুলিশ তদন্ত করলেই সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।” জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানিয়েছেন, “প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলেই মনে হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। তবে, সমস্ত বিষয় এবং অভিযোগ খতিয়ে দেখে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।”