দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ মে: বিদ্যাসাগর কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক (Vidyasagar Central Co-Operative Bank) এর চেয়ারম্যান বদলের সম্ভাবনা! শুভেন্দু-জমানা শেষে ব্যাঙ্কের নতুন চেয়ারম্যান হয়েছিলেন একসময়ের শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ শাসকদলের (তৃণমূলের) নেতা তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মোহনপুর ব্লকের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি প্রদীপ পাত্র। তবে, বর্তমানে তাঁর কাজকর্মে একেবারেই সন্তুষ্ট নয় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর অনুযায়ী, রবিবার (২৮ মে) দুপুরে শালবনীর নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু স্টেডিয়ামে দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বদের নিয়ে যে বৈঠকে বসেছিলেন অভিষেক, সেখানেই প্রদীপের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। দলের জেলা নেতৃত্বকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যত দ্রুত সম্ভব নতুন নাম ঠিক করে জানানোর জন্য। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, আহ্বায়ক অজিত মাইতি, জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা এবং জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়-কে। সরাসরি এই বিষয়ে তাঁরা কিছু না জানালেও, শীর্ষ নেতাদের অনেকেই বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী একমাসের মধ্যেই প্রদীপের পরিবর্তে ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির নতুন কোনো সদস্যকে চেয়ারম্যান হিসেবে বেছে নেওয়া হতে পারে।
বৈঠকে উপস্থিত দলের একাধিক নেতা ও বিধায়কদের মাধ্যমে জানা যায়, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বদের নিয়ে বৈঠক চলাকালীন মোহনপুর ব্লকের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিষেক। স্থানীয় বিধায়ক বিক্রম চন্দ্র প্রধান এবং ব্লক সভাপতি তথা পেশায় শিক্ষক মানিক মাইতি’র মধ্যে বনিবনা নেই বলে খবর ছিল অভিষেকের কাছে। দু’জনকেই এই বিষয়ে বলার সুযোগ দেন দলের সাধারণ সম্পাদক। বলতে উঠে বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ প্রদীপ পাত্রের বিরুদ্ধে অভিষেকের কাছে নালিশ করেন মানিক। ইতিমধ্যে, শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠতা ছাড়াও বিদ্যাসাগর সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রদীপ পাত্রের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নাকি পৌঁছেছিল অভিষেক-দরবারে! সবমিলিয়ে, প্রদীপের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে অভিষেক জানান, আগামী একমাসের মধ্যে চেয়ারম্যান হিসেবে নতুন নাম ঠিক করে জানানোর জন্য। দায়িত্ব দেওয়া হয়, মানস-আজিত-সুজয়-দীনেন’দের। সূত্রের খবর অনুযায়ী, বিদ্যাসাগর ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হতে পারেন পরিচালন সমিতির সদস্য তথা প্রাক্তন এক ব্যাংক কর্মী অথবা বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান! এই বিষয়ে প্রদীপ পাত্র’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, তাঁর কাছে এই ধরনের কোনো খবর নেই। বরং, বর্তমান সময়ে বিদ্যাসাগর কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের আধুনিকীকরণ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নজিরবিহীন সাফল্যের কথা তিনি তুলে ধরেন।
দলের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রবিবারের বৈঠকে কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়, গড়বেতা-৩ সহ বেশ কয়েকটি ব্লকের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দ্রুত মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন অভিষেক। এমনকি, দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি এবং দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা-কেও বলেন, “আপনারা দ্রুত নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে জেলার সমস্যাগুলি মিটিয়ে নেবেন।” বিষয়টি দেখে নেওয়ার জন্য জেলার বর্ষীয়ান নেতা তথা রাজ্য সহ-সভাপতি ও রাজ্যের ক্যাবিনেট পর্যায়ের মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া-কেও দায়িত্ব দেন অভিষেক। একইসঙ্গে, সাংসদ তথা দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক স্পষ্ট বার্তা দেন, নেতাদের মধ্যে ইগো কিংবা গোষ্ঠী-রাজনীতি কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবেনা। জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা সহ ব্লক সভাপতিদের সকলকে নিয়ে চলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কোনো সমস্যা হলে জেলা সভাপতি-কে দ্রুত বৈঠক ডেকে সমস্যার সমাধান করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দলের একটি সূত্রে জানা যায়। এই বিষয়ে দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-কে ফোন করা হলে তিনি জানান, “অভ্যন্তরীন বিষয় বা সাংগঠনিক আলোচনা নিয়ে বাইরে কিছু বলা উচিৎ হবেনা। তবে, কিছু কিছু মিডিয়ায় যা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। আমি যেদিন থেকে সভাপতি হয়েছি, কাউকে এড়িয়ে গিয়েছি বা অসম্মান করেছি, তা কেউ অভিযোগ করতে পারবেনা! ভবিষ্যতেও সকলকে নিয়েই চলব। এটুকু বলতে পারি, মঞ্চ থেকে দিদি (দলনেত্রী) কিংবা বৈঠকে আমাদের সবার প্রিয় সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সকলকে এক হয়ে কাজ করতেই বলেছেন।”