দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ জুন: “সিপিআইএম-বিজেপি বলে কিছু নেই এখানে। এখানে মানুষের জোট হয়েছে।” রাখঢাক না করে, স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র ভারতী ঘোষ। সিপিআইএম কর্মীর হাত থেকে তুলি নিয়ে কাস্তে হাতুড়ি তারার পাশে এঁকে দিলেন পদ্মফুল! খুশি দুই দলের কর্মী-সমর্থকরাই। বাম নেতারা এনিয়ে রাখঢাক বা ছুঁৎমার্গ দেখালেও, এর আগে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যেই তৃণমূল বিরোধী মানুষের জোটের কথা বলেছেন। আহ্বানও জানিয়েছেন শাসকদলের বিরুদ্ধে জোট বেঁধে লড়াই করার জন্য। বাম নেতৃত্ব অবশ্য তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী মানুষের জোটের পক্ষে সওয়াল করেছেন এরাজ্যে। দিল্লির লড়াইয়ে তো আবার সরাসরি বিজেপি বিরোধী ‘রামধনু’ জোটে সামিল হয়েছেন। সেই জোটের অন্যতম শক্তি আবার তৃণমূল কংগ্রেস! তবে, নেতারা যাই বলুন না কেন, আর যত নীতিকথাই আওড়ান না কেন; নিচুতলার নেতাকর্মী থেকে সমর্থকেরা অবশ্য এ রাজ্যে শাসকদলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তলে-তলে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘অলিখিত’ জোট করে নিয়েছেন। নাম দিয়েছেন ‘মানুষের জোট’।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল, দাসপুরের বিভিন্ন এলাকায় যেমন শাসকদলের বিরুদ্ধে এই ‘মানুষের জোট’ একের বিরুদ্ধে একের (১:১) লড়াইয়ের পক্ষপাতী। কোথাও সরাসরি তা হয়েছে, আবার কোথাও শাসকদলের বিরুদ্ধে দু’দলের প্রার্থী থাকলেও; যেখানে যে শক্তিশালী, সেখানে তাকেই জেতানোর চেষ্টা চলছে। তবে, শুধু ঘাটাল বা দাসপুর নয়; জেলা বা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতেই এমনটা হচ্ছে। বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর ১ নং ব্লকের বাসুদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কলমিজোড় পশ্চিম বুথে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারে গিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র ভারতী ঘোষ। এলাকার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রচার করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি মনোনীত আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থীরা। বাড়িতে বাড়িতে প্রচারে যাওয়ার সময় ওই এলাকাতেই চলছিল সিপিআইএমের দেওয়াল লিখনের কাজ। প্রচারে যাওয়ার সময় সেই CPI(M) এর দেওয়ালেই রং তুলি দিয়ে কাস্তে হাতুড়ি তারার ঠিক পাশে পদ্মফুল আঁকলেন BJP নেত্রী ভারতী ঘোষ। এ নিয়ে সিপিআইমের স্থানীয় নেতা-কর্মী থেকে বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষের গলাতে শোনা গেল এক সুর! তাঁরা বললেন, “শাসকদলের দুর্নীতিতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাই, বামফ্রন্ট, বিজেপির মধ্য জোট হয়নি ঠিকই; কিন্তু মানুষ নিজেরাই জোট বেঁধে নিচ্ছেন নিচুতলায়।” স্বাভাবিকভাবেই, এই জোটকে কটাক্ষ করে জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেছেন, “আমরা তো আগেই বলেছি উন্নয়নের বিরুদ্ধে বাম-রাম সব মিলেমিশে একাকার। এখন আপনারা হাতেনাতে প্রমাণ পাচ্ছেন। রাজ্যের উন্নয়ন, শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে এই অশুভ শক্তিরা। মানুষ ঠিক জবাব দিয়ে দেবে।” এনিয়ে বিস্তর জলঘোলার পর বুধবার রাতেই দলের চাপে ভারতীর আঁকা পদ্মফুল মুছে দেন সিপিআইএম কর্মীরা। ‘১৮০ ডিগ্রি’ পাল্টি খেয়ে তাঁরা বলেন, “আমরা ভদ্রতা দেখিয়ে ওঁর হাতে রংতুলি তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু, উনি বলছেন নাকি জোট হয়েছে। তা হয়নি। এখানে আমাদের পৃথক প্রার্থী আছে। আর, তিনিই জিতবেন। তাই, আমাদের দেওয়ালে আঁকা পদ্মফুল মুছে দিলাম!”
(ছবি ও তথ্য- অর্ণব দাস।)