দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ নভেম্বর: দূর থেকে দেখলে মনে হবে বোধহয় কোনও ছোটোখাটো পাহাড়! তবে, সে পাহাড় তেল কারখানার দূষিত ছাইয়ের। আর সেই ছাইয়ের পাহাড়ই জঙ্গলমহলের জন-জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে! গত কয়েক বছর ধরে শাল-মহুয়ার জঙ্গল ঢেকেছে ধূলি-ধূসরতায়। প্রকৃতির মাঝে বসবাস করেও হাঁপানি, চর্মরোগ, অ্যাজমা ব শ্বাসকষ্টে ভুগছেন জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী ব্লকের ভাদুতলা সংলগ্ন নিশ্চিন্তপুর, কুতুরিয়া, ধান্যশোল এলাকার বাসিন্দারা। চোখে-মুখে ছাই মেখে স্কুল-কলেজে যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। শিশুদের হচ্ছে কাশি, চোখের সমস্যা। ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র থেকে গাছপালা, চাষের জমিতে ছাইয়ের আস্তরণ! সবমিলিয়ে, শাল-মহুয়ার দেশ শালবনীর ১০নং কর্ণগড় অঞ্চলের ভাদুতলা সংলগ্ন এই এলাকাগুলিতে জনজীবন এক প্রকার বিপর্যস্ত স্থানীয় জঙ্গলমহল এগ্রো অয়েল প্রাইভেট লিমিটেডের অবৈধ কান্ড-কারখানার সৌজন্যে!

thebengalpost.net
ছাইয়ের পাহাড়:

thebengalpost.net
ছাই ঢাকা রাস্তা পেরিয়ে:

জেলা শহর মেদিনীপুর থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত ভাদুতলা, নিশ্চিন্তপুর, ধান্যশোল, কুতুরিয়া এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, “কারখানার পাশেই বনদপ্তরের ৫-৭ বিঘা জমি অবৈধভাবে দখল করে ফেলা হচ্ছে কারখানার দূষিত ছাই বা বর্জ্য। সেই ছাই কারখানা থেকে নিয়ে যাওয়াও হচ্ছে খোলা ট্রাক্টরে করে। তা ফেলাও হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। ছাই ফেলতে ফেলতে তা এখন একেকটা বড় বড় পাহাড়ে পরিণত হয়েছে! সেই ছাই উড়ে উড়ে দখল করছে গ্রাম, জঙ্গল। এমনকি কারখানার প্রাচীরও উঁচু নয়। কারখানা থেকেও ছড়াচ্ছে দূষণ। সবমিলিয়ে ধোঁয়া আর ছাই আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। গাছপালা ধ্বংস হচ্ছে, জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে আর ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট তো ছাইয়ের আস্তরণে ঢাকছেই! এছাড়াও, রাসায়নিক মিশ্রিত দূষিত জল থেকেও নানাভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।” এ নিয়ে বার বার বনদপ্তর, ব্লক প্রশাসনের কাছে দরবার করেও কোনও লাভ হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। ‘দিদিকে বলো’তেও অভিযোগ করা হয়েছে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে কড়া নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তবে, সেই নির্দেশিকাকে থোড়াই কেয়ার করে কারখানা কর্তৃপক্ষ এখনো তাদের অবৈধ কান্ড কারখানা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় শিক্ষক জীবনকৃষ্ণ মাহাত, স্বাস্থ্যকর্মী সোমনাথ মাহাত থেকে কৃষক ধনঞ্জয় মাহাতদের।

thebengalpost.net
ছাই বহনকারী ট্রাক্টর:

গ্রামবাসীদের অভিযোগ যে যথার্থ; তা কার্যত স্বীকার করেছেন স্থানীয় শাসকদলের নেতৃত্ব, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তারাও। শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ তথা রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ সিংহ বলেন, “আমি নিজে এলাকায় গিয়ে দেখেছি গ্রামবাসীদের অভিযোগ একেবারে সঠিক। বনদপ্তরের জায়গায় অবৈধভাবে ছাই ফেলা হচ্ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশও মানা হচ্ছে না! এ নিয়ে আমি শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি স্থায়ী সমিতির কাছে উপযুক্ত পদক্ষেপের আবেদন জানিয়েছি লিখিতভাবে। সম্প্রতি, বন ও ভূমি স্থায়ী সমিতির বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনাও হয়েছে।” বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ সুব্রত সানি বলেন, “বিডিও-র উপস্থিতিতে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করছি।” বিডিও রোমান মণ্ডল বৃহস্পতিবার দুপুরে জানিয়েছেন, “আমরা বনদপ্তরের আধিকারিকদের এ নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছি। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট এসে যাবে। তারপরই উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করব।” এই বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

thebengalpost.net
সেই কারখানা:

thebengalpost.net
রাস্তাঘাট ঢাকা ধুলো, ছাইয়ে:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):