দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ আগস্ট: ছেলে শুধু M.A পাসই নয়; বি.এড (B.Ed), এম.এড (M.Ed), এম.ফিল (M.Phil)-ও সম্পূর্ণ করেছিল। তারপরও, কোথাও চাকরি হচ্ছিল না! সেই সময়ই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের অন্যতম এক প্রভাবশালী নেতা (মোহনপুর পঞ্চায়েত সমিতির তৎকালীন শিক্ষা কর্মাধক্ষ্যও বটে) প্রদীপ পাত্র তাঁকে আশ্বস্ত করেন, সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা দিলেই প্রাথমিকে (প্রাইমারি স্কুলে) চাকরি পাইয়ে দেবেন তিনি। তাঁর কথায় বিশ্বাস করেই কয়েক দফায় ছেলের চাকরির জন্য সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা, পেশায় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক নির্মলেন্দু দে। কিন্তু, চাকরি হয়না! উল্টে মোহনপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি প্রদীপ পাত্র তাঁকে এড়িয়ে যাওয়া শুরু করেন। টাকা চাইতে গেলে দুর্ব্যবহারও সহ্য করতে হয় বলে অভিযোগ মেদিনীপুর সদর ব্লকের শিরোমণি বীরসা মুণ্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক নির্মলেন্দু দে-র। ঘটনাটি ২০১৭ সালের। মোহনপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ও শিক্ষক (দাঁতনের গড়হরিপুর গজেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক) প্রদীপ পাত্র তখন জেলার অন্যতম শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিচিত। জেলায় প্রভাব-প্রতিপত্তিও ছিল যথেষ্ট। অন্যদিকে, ‘সামান্য’ একজন প্রধান শিক্ষক তথা তৃণমূল সমর্থক নির্মলেন্দু দে তাঁর (প্রদীপের) কাছে তখন কিছুই নয়! তাই, এক সময় টাকার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি।

thebengalpost.net
প্রদীপ পাত্র (ছবি- ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) :

অবশেষে, প্রায় ৬ বছর পর খানিকটা ‘অপ্রত্যাশিতভাবেই’ যেন সেই টাকা ফেরত পেলেন মেদিনীপুর শহরের ২০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা ওই ওয়ার্ডের বর্তমান তৃণমূল সভাপতি নির্মলেন্দু দে। চলতি বছরের জুন মাসে হঠাৎ করেই একদিন তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমান সাংগঠনিক (মেদিনীপুর) জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি ২০১৭ সালের ঘটনার কথা তুলে ধরেন। এদিকে, নানা ‘অনৈতিক’ কাজের অভিযোগে ইতিমধ্যেই দলে কিছুটা কোণঠাসা প্রদীপ পাত্র। যদিও, বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে এখনো আছেন তিনি। সম্প্রতি, নবজোয়ার কর্মসূচিতে জেলায় এসে দলের সাংসদ তথা সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই পদ থেকেও প্রদীপ-কে ‘অব্যাহতি’ নেওয়ার (পদত্যাগ করার) নির্দেশ দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতেই প্রদীপের বিরুদ্ধে এমন মারাত্মক অভিযোগ আসার সাথে সাথেই, নড়ে চড়ে বসে জেলা তৃণমূল। জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা ফোন করে প্রদীপ-কে নির্দেশ দেন অবিলম্বে নির্মলেন্দু বাবু-র টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। অন্যদিকে, দলেরই নির্দেশে বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশেরও দ্বারস্থ হন নির্মলেন্দু দে। সাঁড়াশি চাপে পড়ে জুন মাসের শেষের দিকে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মুচলেকা দিয়ে প্রদীপ জানান, এক মাসের মধ্যে পুরো টাকা ফিরিয়ে দেবেন। গত ২৬ জুলাই মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা তথা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নির্মলেন্দু দে-র সমস্ত টাকাই প্রদীপ পাত্র ফিরিয়ে দেন বলে জানা যায়।

এই বিষয়ে নির্মলেন্দু বাবু বলেন, “গত ৫-৬ বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। তবে, দলের (তৃণমূলের) বর্তমান জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা এবং বর্তমান পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার যেভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন, আমি তাঁদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকলাম। গত মাসে (জুলাই মাসে) আমি সাড়ে আট লক্ষ টাকাই ফেরৎ পেয়েছি।” যদিও, এই বিষয়ে প্রদীপ-কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি কিছু বলতে চাননি; বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন। জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা এই বিষয়ে বলেন, “দল এই ধরনের কাজ বরদাস্ত করে না। নির্মলেন্দু বাবু আমাকে অভিযোগ জানানোর পরই আমি তাঁর টাকা ফেরানোর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।” দলীয় সূত্রে খবর, বিজেপি-র সঙ্গে গোপন আঁতাত, চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা কিংবা লোন পাইয়ে দেওয়ার নামে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রদীপ পাত্রের বিরুদ্ধে। তাই, খুব শীঘ্রই তাঁকে বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়াও শুরু করা হবে বলে জানা যায়। অন্যদিকে, এই পুরো বিষয়ে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেই তীব্র কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছে জেলা বিজেপি এবং জেলা বামফ্রন্ট। সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিনহা বলেন, “বেআইনিভাবে চাকরির জন্য যিনি টাকা দিয়েছিলেন, তিনিও সমান দোষী! এসব তৃণমূলেই সম্ভব। ওদের বিষয়ে যত কম বলা যায়, ততই ভালো।” বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, “এক কথায় বলবো, পিসি চোর, ভাইপো চোর, তৃণমূলের সবাই চোর!”