দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ঝাড়গ্রাম, ২৬ অক্টোবর: উত্তরের হিমালয় এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের বিরল ‘ব্রাউন উড আউল’ (Brown Wood Owl) আর দক্ষিণের মালাবার রিজিয়নের মালাবার পায়েড হর্নবিল (Malabar Pied Hornbill/ Anthracoceros coronatus)-এর দেখা মিললো ঝাড়গ্রামের কাঁকড়াঝোড়ে। জানা যায়, দক্ষিণবঙ্গে এই প্রথম বার এই ব্রাউন উড আউল বা বাদামি রঙের পেঁচার দেখা মিললো। এমনটাই জানিয়েছেন, ওয়েস্ট বেঙ্গল বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটির সদস্য তথা পক্ষী বিশারদ কণাদ বৈদ্য। সপ্তাহ খানেক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার প্রকৃতিপ্রেমী পার্থ দে এবং কলকাতার পাখি দেখিয়েদের সংগঠন ‘প্রকৃতি সংসদ’ এর এক সদস্য কাঁকড়াঝোরে প্রথম পাখিটিকে দেখে ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ফের একই জায়গায় পেঁচাটিকে দেখতে পেয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের রাকেশ সিংহ দেব, প্রবীর পাত্র এবং সায়নদীপ মাইতি। শিক্ষক ও বন্যপ্রাণী গবেষক রাকেশ জানিয়েছেন, “এর আগে ২০১৭ সালে গড়বেতার আড়াবাড়ি বনাঞ্চলে ব্রাউন উড আউলের ‘জ্ঞাতিভাই’ মটলড উড আউল দেখা গিয়েছিল। সেটিও ছিল দক্ষিণবঙ্গে ওই প্রজাতির উপস্থিতির প্রথম প্রমাণ।” পক্ষী বিশারদ কণাদ বৈদ্য বলেন, “এর আগে পূর্বঘাট পর্বত, মধ্যভারত এবং ওড়িশায় ময়ূরভঞ্জ জেলায় বিচ্ছিন্ন ভাবে ব্রাউন উড আউলের দেখা মিলেছে। এ রাজ্যে উত্তরবঙ্গের তরাই ও পাহাড়ে এই প্রজাতির পেঁচা দেখা যায়। তবে, দক্ষিণবঙ্গে এই প্রথম এদের উপস্থিতি জানা গেল।”
অন্যদিকে, মূলত দক্ষিণ ভারতের মালাবার রিজিয়নের পাখি হলেও, মালাবার পায়েড হর্নবিল (Anthracoceros coronatus) বা ধনেশ পাখির দেখা মেলে বিক্ষিপ্তভাবে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডেও। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই পাখির উপস্থিতির বিশেষ কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। ১৮৭৪ সালে পুরুলিয়ার মানভূম এলাকায় এদের দেখা মেলার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে পুরুলিয়াতেই আবার এদের দেখা মেলার তথ্যপ্রমাণ সামনে আসে। এই বিস্তৃত সময়ে কয়েকজন পক্ষীবিশারদ লেখক তাঁদের লেখায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে এদের দেখতে পাওয়ার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু, রাজ্যে এই পাখিটির উপস্থিতি এবং তার এলাকার বিস্তৃতি নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। সম্প্রতি, ঝাড়গ্রাম জেলার কাঁকড়াঝোড় এলাকার জঙ্গল থেকে বিরল ও বিপন্ন ‘মালাবার পায়েড হর্নবিল’ পাখির খোঁজ পেয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের রাকেশ, প্রবীর এবং সায়নদীপ। প্রসঙ্গত, পেশায় এঁদের কেউ শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী তো কেউ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। কিন্তু, পাখির নেশা তাঁদের এক করেছে। সায়নদীপ জানান, “উত্তরবঙ্গে এদের নিকট জাতভাই ওরিয়েন্টাল পায়েড হর্নবিলের সচরাচর দেখা মিললেও রাজ্যে মালাবার পায়েড হর্নবিলের বিশেষ রেকর্ড নেই। দক্ষিণবঙ্গ থেকে মাত্র কয়েকটি রেকর্ড রয়েছে। সেই তালিকায় এবার ঝাড়গ্রামের নাম যুক্ত হলো।” অন্যান্য ধনেশ পাখিদের মতো এরাও সর্বগ্রাসী। প্রধানত ফল-মূল, ছোটো প্রাণী, পোকামাকড়, সরীসৃপ ইত্যাদি খেয়েই এরা বেঁচে থাকে। এই প্রজাতির পাখিদের প্রধান বাসস্থান হল আর্দ্র বনভূমি এবং ঘন জঙ্গল। তবে, কখনো কখনো এরা লোকালয়েও চলে আসে বসবাস করবার জন্য। বর্তমান সময়ে এই প্রজাতির পাখিদের সংখ্যা ক্রম-হ্রাসমান, তাই একে Near Threatened প্রজাতির পাখি হিসেবে গণ্য করা হয়। এবার, পশ্চিম মেদিনীপুরের এই তিন পক্ষী প্রেমিকদের খোঁজ এক নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিল। (ছবি ও তথ্য- রাকেশ সিংহ দেব।)