দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ জুলাই: গত দুই দশকে সবথেকে বেশি বৃষ্টিপাত পশ্চিম মেদিনীপুরে! অনেকে আবার বলছেন, “১৯৭৮ সালের পর এত বৃষ্টি দেখিনি!” অথচ, টানা ২ দিন বা ৪৮ ঘন্টাও নয়, বড়জোর টানা ৩৬ ঘন্টার বৃষ্টিপাত। ভরা শ্রাবণের এই বৃষ্টিতেই ডুবে গেল প্রায় গোটা জেলা! স্বয়ং জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল শুক্রবার তাই বললেন, “এত বৃষ্টিপাত সাম্প্রতিক কালে এই জেলায় হয়নি বলেই আমরা জানতে পেরেছি।” এর মধ্যেই এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এক শিশু সহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। ৩ জন তিনটি মহকুমার বাসিন্দা। খড়্গপুর মহকুমায় খড়্গপুর পৌরসভার অন্তর্গত ৩২ নং ওয়ার্ডে একটি শিশু’র মৃত্যু হয়েছে বৃহস্পতিবার। বাড়ি চাপা পড়ে ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। শুক্রবার বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় ওই বাড়িতে গিয়ে শিশুটির বাবা-মা’র প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, মেদিনীপুর সদর মহকুমার গড়বেতা থানা এলাকায় দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার! এছাড়াও, ঘাটাল মহকুমার ক্ষীরপাই এলাকায় সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। যদিও, জেলাশাসক শুক্রবার জানিয়েছেন, “এখনও পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।” অন্যদিকে, জেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষকে ইতিমধ্যে রেসকিউ সেন্টার বা ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। সেখানে সরকারিভাবে শুকনো খাবার সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

thebengalpost.in
খড়্গপুর :

thebengalpost.in
কেশপুর :

thebengalpost.in
ঘাটাল :

thebengalpost.in
সবং :

উল্লেখ্য যে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল এলাকা এমনিতেই বন্যা প্রবণ। কিন্তু, এবারের বৃষ্টিতে কেশপুর ব্লক ও মেদিনীপুর সদর ব্লকের অবস্থা যেন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও, প্রায় তিন-চার দশক পরে শালবনী ব্লক, গড়বেতার ২ টি ব্লক, সবং ব্লক এবং খড়্গপুর শহর ও গ্রামীণ এলাকা এতোখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাসকদলের নেতৃত্বরাই। তবে, সবথেকে দুর্বিষহ অবস্থা কেশপুর ব্লকের। সেখানকার ১৫ টি অঞ্চলের ১৪ টি অঞ্চল এবং প্রায় ২০০ টি গ্রাম পুরোপুরি প্লাবিত ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বলে জানিয়েছেন কেশপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি উত্তমানন্দ ত্রিপাঠী। কেশপুর, পঞ্চমী, বগছড়ি, ঝ্যাতলা, পারুলিয়া, ধলহারা, পাচরা, লাগারডাঙা প্রভৃতি গ্রামগুলি এখনও জলবন্দি বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রায় শ’খানেক মাটির বাড়ি ভেঙে গেছে বলে জানা গেছে। মেদিনীপুর সদর ব্লকের কংসাবতী নদী তীরবর্তী গ্রামগুলির অবস্থাও মর্মান্তিক! নদী পাড় ভেঙে গিয়ে কয়েকশো বিঘা চাষ জমি জলের তলায়। সবজি চাষিদের মাথায় হাত! প্রায় ৩০-৪০ টি বাড়ি ভেঙে গেছে মণিদহ, চাঁদড়া প্রভৃতি অঞ্চলে। অপরদিকে, ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা, দাসপুর প্রভৃতি এলাকাগুলিও প্লাবিত হয়েছে। নামানো হয়েছে এনডিআরএফ টিম। অন্যদিকে, শুক্রবার মেদিনীপুর সদর ব্লকের হাতিহল্কা সহ বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল সহ অতিরিক্ত জেলাশাসক বৃন্দ। অতিরিক্ত জেলাশাসক সুদীপ সরকার, তুষার সিংলা ছাড়াও ছিলেন খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দীনেন রায়। জেলার সমস্ত বন্যা কবলিত এলাকার মানুষকে রেসকিউ সেন্টার বা ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন জেলাশাসক। প্রায় ২১০ টি ত্রাণ শিবির ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।অপরদিকে, বিভিন্ন বাঁধ থেকে জল ছাড়ার কারণে এবং একের পর এক নদী বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে আগামী কয়েকদিনে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

thebengalpost.in
ভেঙে পড়েছে একাধিক বাড়ি :

thebengalpost.in
বাড়িতে বাড়িতে এক হাঁটু জল :

thebengalpost.in
পরিদর্শনে জেলাশাসক, বিধায়ক ও অতিরিক্ত জেলাশাসকরা :