দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, বালেশ্বর, ১০ জুন: সেদিন থেকেই তাড়া করে বেড়াচ্ছিল ভূতের ভয়! বালেশ্বরের বাহানাগায় ট্রেন দুর্ঘটনার পর স্কুলের ক্লাস রুমকেই অস্থায়ী মর্গ বানিয়ে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল ছিন্নবিচ্ছিন্ন সব লাশ। যা দেখে আঁতকে উঠেছিলেন অনেকেই। অবশেষে এলাকাবাসীদের দাবি মেনে, বাহানাগা স্কুলের সেই রুমগুলি ভেঙে ফেলছে প্রশাসন। নতুন করে সবকিছু গড়ে তোলা হবে। পুজো দিয়ে বা হোম যজ্ঞ করে পুনরায় সবকিছু শুরু হবে আবার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ২ জুনের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর, নিকটবর্তী বাহানাগা হাই স্কুলই হয়ে উঠেছিল অস্থায়ী মর্গ। সেখান থেকেই মৃতদেহ শনাক্ত করা, পরিবারের হাতে মৃতদেহ তুলে দেওয়ার কাজ চলছিল। যে স্কুল ঘর গম গম করত ছাত্র-ছাত্রীদের কোলাহলে, ট্রেন দুর্ঘটনার পর সেই স্কুল চত্বর জুড়ে শুধুই হাহাকার আর কান্নার সুর। ঘটনার পর থেকে ভূতের ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছিল এলাকাবাসীকে। গ্রীষ্মের ছুটির পর স্কুল খুললে, সেই একই আতঙ্ক পড়ুয়া এবং শিক্ষকদেরও তাড়া করতে পারে বলেও দাবি উঠেছিল।
অবশেষে, প্রশাসনের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হচ্ছে বাহানাগা হাই স্কুলের সেই কক্ষগুলি। যেখানে সারি সারি সাজিয়ে রাখা হয়েছিল ট্রেন দুর্ঘটনার মৃতদেহ। আগামী তিন-চার মাসের মধ্যেই তৈরি করে দেওয়া হবে নতুন শ্রেণিকক্ষ। ওড়িশা প্রশাসণের পক্ষ থেকে এমনই কথা জানানো হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। যদিও, মৃতদেহ রাখার পর স্কুলবাড়ি ভেঙে ফেলা প্রসঙ্গে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান, মনোবিদ, চিকিৎসক কাবেরী ভট্টাচার্য বলেন, “মৃতদেহ রাখার জন্য শ্রেণিকক্ষ ভেঙে ফেলার কোনও যুক্তি আছে বলে মনে করিনা। এর মধ্যে কোনও বিজ্ঞান নেই। পুরানো বিল্ডিং বা অন্য কোনও কারনে ভাঙার সিদ্ধান্ত নিলে কিছু বলার নেই।” বাহানাগা হাই স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য আশিস কুমার সাহু জানিয়েছেন, “প্রশাসনের তরফে আধিকারিক ভি কে পান্ডিয়ান বলেছেন, স্কুলের পুরাতন কক্ষগুলি ভেঙে দিন। সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে দেওয়া হবে। আপনারা (বাহানাগা স্কুল কর্তৃপক্ষ) অনেক সাহায্য করেছেন। আপনাদেরকে ধন্যবাদ। এলাকার মানুষ অনেকে সহযোগিতা করেছেন, তাই তাঁদেরকেও ধন্যবাদ। এই স্কুলকে ওড়িশার মধ্যে এক নম্বর স্কুল হিসেবে গড়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন।”
স্কুলের ক্লাসরুমে মৃতদেহ রাখার পরে এলাকার মানুষের মধ্যে একটা ভূতের ভয় তৈরি হয়েছে, সেই জন্যই কী ক্লাসরম গুলো ভেঙে দেওয়া হচ্ছে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্য আশিস কুমার সাহু বলেন, “ভূতের ভয় কোনও ব্যাপার নয়। তাহলে কি যে রাস্তা দিয়ে দেহ আনা হয়, যে বাড়িতে আমাদের বাবা-মা বা বাড়ির কেউ মারা যান সেই সব ঘর আমরা ভেঙে দিই? আসলে আমাদের স্কুলের বেশ-কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ বেশ পুরানো। আমরা মেরামত করবো ঠিক করেছিলাম। এই ঘটনার পর সুযোগ পেয়ে প্রশাসনের কাছে দাবি জানালাম। প্রশাসন আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। স্কুলের পুরাতন ক্লাসরুম গুলি ভেঙে ফেলার কাজওশুরু হয়েছে। তিন-চার মাসের মধ্যে নতুন ক্লাস রুম, প্রাচীর, গেট তৈরি হয়ে যাবে।” উল্লেখ্য যে, বাহানাগায় ট্রেন দুর্ঘটনার পর মৃতদেহ গুলি উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে রাখা হয় পাশের বাহানাগা হাই স্কুলে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিবির করা হয় ওই স্কুলে। যেখান থেকে মৃতদেহ শনাক্ত করণ, দেহ শনাক্ত করণের পর নথিপত্র মিলিয়ে দেখা, পরিবারের হাতে মৃতদেহ তুলে দেওয়া হচ্ছিল ওই স্কুল থেকেই। যা সংবাদমাধ্যমের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছে গোটা বিশ্ব। তখন থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা কপিলেশ্বর সাহু, গীতা সাহু, প্রলয় জেনা’রা বলেন, “স্কুলের মধ্যে যেভাবে মৃতদেহগুলি সাজিয়ে রাখা হয়েছিল, তাতে ছোট ছোট বাচ্চাদের মনে একটা প্রভাব পড়বেই। অধিকাংশ জনের মধ্যেই একটা ভয়ের সঞ্চার হয়েছিল। অনেকেই ওই স্কুলে তাঁদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের পড়তে পাঠবেনা বলে ভাবতে শুরু করেছিল। তাই ওই স্কুল বাড়ি ভেঙে নতুন স্কুল তৈরি করে যাগ-যজ্ঞ করে তারপর স্কুল চালু করার কথা অনেকেই বলছিলেন। যাই হোক স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন ওই ক্লাসরুম গুলি ভেঙ্গে নতুন করে তৈরির পরিকল্পনা করেছেন খুবই ভালো। এতে পড়ুয়াদের ভয় কিছুটা কমবে!”