দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ মে: সেনাদের মৃত্যু হয়না! তাঁরা অমর। দেশমাতৃকা থেকে দেশবাসীর হৃদয়-সিংহাসনে তাঁদের চির অধিষ্ঠান। পশ্চিম মেদিনীপুরের বীর সেনা জওয়ান বাপ্পাদিত্য খুটিয়া-ও ‘অমর’ হয়ে থাকবেন শুধু মেদিনীপুর বা খড়্গপুর বাসীর হৃদয়ে নয়, আপামর দেশবাসীর হৃদয়ে! শুক্রবার লাদাখে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় যে ৭ সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম নাম- রেলশহর খড়্গপুরের ২৫ নং ওয়ার্ডের (বারবেটিয়া) বাসিন্দা বাপ্পাদিত্য খুটিয়া। ৩২ বছরের হাসিখুশি, সাহসী আর সকলের প্রিয় বাপ্পা’র এই অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ খড়্গপুরবাসী। দুঃখের সাগরে ডুবে গেছে পুরো বারবেটিয়া এলাকা। সব হারানোর অন্ধকার পরিবারে! প্রসঙ্গত, শুক্রবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লাদাখের (Ladakh) তুরতুক সেক্টরের শিয়ক নদীতে (Shyok river) পড়ে যায় সেনাবাহিনীর একটি বাস। JK 10 6245 নম্বর ওই বাসে ছিলেন ২৬ জন জওয়ান। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জওয়ান এবং গুরুতর আহত হন ১৯ জওয়ান। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত ১৯ জন জওয়ানকে এয়ারলিফট করে ওয়েস্টার্ন কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

thebengalpost.net
বাপ্পাদিত্য খুটিয়া (ফাইল ছবি) :

এরপরই, শুক্রবার গভীর রাতে খড়্গপুরের বারবেটিয়ার বাড়িতে খবর আসে, সেনা জওয়ান বাপ্পাদিত্য’ও বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছেন। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই দুঃসংবাদ! গত ২৭ এপ্রিল, যে ছেলেটা বাবা-মার সঙ্গে একপ্রকার মিথ্যে ঝগড়াঝাঁটি, খুনসুটি করে হাসতে হাসতে গুজরাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন, অসম সাহসী সেই ছেলেটা আর নেই? খবর শুনেই, একপ্রকার অচৈতন্য হয়ে যান বাপ্পার স্ত্রী! আছে মাত্র ১১ মাসের এক শিশুকন্যা। সেনা জওয়ান বাবাকে ভালোভাবে চিনে নেওয়ার আগেই, ‘বাবা’ শব্দটা তার কাছ থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল যেন! কেঁদেই চলছেন বাপ্পার মা। বাপ্পার বাবা অবসরপ্রাপ্ত রেল সুরক্ষা বাহিনীর (RPF) জওয়ান সুকুমার খুটিয়া শনিবার হৃদয়ে অনন্ত শোক চেপে বললেন, “২০০৯ সালে যোগদান করেছিল সেনাবাহিনীতে। গুজরাটেই পোস্টিং হয়েছিল। সম্প্রতি, দুর্গম সিয়াচেনে পোস্টিং হয়েছিল। আমরা অনেক করে বোঝালাম, কোনোভাবে ওই পোস্টিং বাতিল করানোর জন্য আবেদন করতে। কিছুতেই শুনলনা! উল্টে আমাদের বোঝালো, ভয় পেয়োনা। ভয়কে জয় করে একবার গিয়েই দেখিনা, তারপর না হয় ভাবা যাবে!” সিয়াচেন আর পৌঁছনো হলো না বাপ্পার। লাদাখ থেকে যে বাসে করে তাঁরা সিয়াচেনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন, সেই বাস-ই তুরতুক সেক্টরের শিয়ক নদীতে পড়ে যায়!

thebengalpost.net
বাপ্পার ফাইল ফটো :

এও জানা গেল, ২০০৯ সালে সেনাবাহিনীতে চাকরি পাওয়ার আগে, বাপ্পাদিত্য আরও দু’বার সিলেক্টেড হয়েছিলেন। কিন্তু, ভয় পেতেন মা! তাই, প্রথম দু’বার সেনাবাহিনীতে যোগদান করেননি বাপ্পা। তবে, তৃতীয়বার-ও সুযোগ এসে যাওয়ায়, একপ্রকার জোর করেই বাপ্পা যোগদান করেছিলেন গর্বের ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিলো। ২০১৩ সালে বিয়ে করেছিলেন বাপ্পা। বছর খানেক আগেই কোল আলো করে এসেছে শিশুকন্যা। সম্প্রতি, ২৭ এপ্রিল বাড়িতে থেকেও ঘুরে গেছেন বাপ্পা। কিন্তু, কে জানত, সেটাই ছিল বাপ্পার শেষবারের জন্য প্রিয় জন্মস্থানে আসা! জানা গেছে, বাপ্পার দিদি-জামাইবাবু উত্তর ভারতে আছেন এই মুহূর্তে। তাঁরাই রওনা দেবেন দিল্লিতে। যেখানে বাপ্পা সহ ‘অমরত্ব লাভ’ করা সেনা জওয়ানদের সম্মান জানানো হবে। তারপর, আগামীকাল (রবিবার) হয়তো সেনা জওয়ান বাপ্পা’র দেহ খড়্গপুরের বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। আপাততো, বুকে শোক চেপে রেখেই বীর বাপ্পাদিত্য-কে শেষ বিদায় জানাতে তৈরি হচ্ছে খড়্গপুর!

thebengalpost.net
কেঁদে ভাসাচ্ছেন মা: