স্বর্ণদীপ বাগ, ঝাড়গ্রাম, ২৮ জানুয়ারি: গত ৫ ডিসেম্বর (২০২২), অপরিচিত এক নম্বর থেকে ‘চিচিড়া স্বামী বিবেকানন্দ গ্ৰাম বিকাশ কেন্দ্র’ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কৌশিক দাসের কাছে একটি ফোন আসে। অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিটি বলেন, “আমি রাজস্থানের ‘আপনা ঘর আশ্রম’ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলছি।” শুরুতে কৌশিক কিছুটা অবাক হয়ে গেলেও, তারপর পুরো বিষয়টি তিনি মনোযোগ সহকারে শোনেন। সবকিছু শোনার পর তিনি জানতে পারেন, ঝাড়গ্রাম জেলার, বেলিয়াবেড়া থানার অন্তর্গত খামার গ্ৰামের অরবিন্দ সিং নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক গত কয়েক বছর ধরে তাঁদের রাজস্থানের ভরতপুরের আপনা ঘর আশ্রমে আছেন। প্রথম প্রথম নিজের নাম-ঠিকানা বলতে না পারলেও, কিছুটা স্মৃতি ফিরে আসায় নিজের ঠিকানা জানিয়েছেন যুবক। এরপরই, কৌশিক ঝাড়গ্রামের ওই ঠিকানা খুঁজে বের করার কাজ শুরু করে দেন এবং পুরো বিষয়টি গোপীবল্লভপুরের বাসিন্দা, সুবর্ণরৈখিক রেলপথ সংগ্ৰাম কমিটির সভাপতি ও সমাজসেবী সত্যব্রত রাউৎ-কে বিষয়টি জানান। সত্যব্রত-ই গত ১২ ডিসেম্বর (২০২২) অরবিন্দ সিংহের ছবি সহ বিষয়টি সামাজ মাধ্যমে অর্থাৎ ফেসবুকে তুলে ধরেন। সত্যব্রত’র তৎপরতার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অরবিন্দ সিং-এর পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়।
এরপরই, কৌশিক ও সত্যব্রত ২০২২-এর ১৭ ডিসেম্বর অরবিন্দ সিং-এর খামার এলাকার বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা-বাবা ও গ্ৰামবাসীদের সাথে কথা বলেন। অসহায় মা-বাবা প্রায় ১৪ বছর পর ছেলেকে আবার ফিরে পাবেন, এমনই আশার আলো জেগে ওঠে তাঁদের মনে। তাঁরাই জানান, ২০০৯ সাল নাগাদ কাজের সন্ধানে বেরিয়ে গিয়েছিল অরবিন্দ। প্রথম প্রথম অন্ধ্রপ্রদেশের একটি ঠিকাদারি সংস্থায় গাড়ি চালাতেন অরবিন্দ। তারপরই কোথায় উধাও হয়ে যান! তাই, ১৪ বছর পর ছেলেকে ফিরিয়ে পাওয়ার আশায়, কৌশিকদের কাছে কাতর আর্জি করেন বাবা-মা। এরপরই, সত্যব্রত রাউৎ যোগাযোগ করেন সোনারপুরের, স্বর্ণদীপ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-এর শ্রীকান্ত বধূকের সাথে। বিষয়টি শোনার পর, তিনি এককথায় রাজি হয়ে যান অরবিন্দ সিং-কে রাজস্থান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার জন্য।
গত ২৩ জানুয়ারি, রবিবার রাতে Reservation ছাড়াই General compartment -এ প্রচন্ড কষ্ট করেই হাওড়া থেকে ভরতপুরের উদ্দ্যেশে রওনা দেন শ্রীকান্ত বধূক, কৌশিক দাস। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অরবিন্দ সিং-এর ভাই রবি সিং। ২৪ তারিখ রাত ১২টার সময় ওনারা ভরতপুর স্টেশনে পৌঁছে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে ফাঁকা স্টেশনেই রাতটা কাটিয়ে ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে ‘আপনা ঘর আশ্রম’ এ পৌঁছে যান। এরপর, আশ্রম কর্তৃপক্ষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে সই-স্বাক্ষর করার পর আশ্রম কর্তৃপক্ষ অরবিন্দ সিং- কে তুলে দেন তাঁদের হাতে। শুক্রবার অর্থাৎ ২৭ জানুয়ারি, সকালে অরবিন্দ-কে তাঁর অসহায় পিতা-মাতার হাতে তুলে দেন সত্যব্রত, শ্রীকান্ত ও কৌশিক। সত্যব্রত রাউৎ বলেন, “গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের খামার এলাকার কিছু সহৃদয় মানুষজন আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। আমরা ওঁদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হই অরবিন্দ সিং খামার গ্রামের বাসিন্দা। তারপরই আশ্রম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি সম্পন্ন করতে উদ্যোগী হই আমরা।” ১৪ বছর পর ঘরের ছেলে ঘরে ফেরায় খুশি সকলেই। আনন্দে আত্মহারা অরবিন্দ। আপ্লুত তাঁর বাবা-মাও।