দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ জানুয়ারি: স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে। সেই সুযোগেই গড়ে উঠেছিল বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। এরপরই, প্রেমিককে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে শুরু করেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার জয়ন্তীপুরের গৃহবধূ সোমা পাল (২৬)। আর, সেটাই তাঁর কাল হল! বিবাহিত সেই প্রেমিকের হাতেই খুন হতে হয় সোমা-কে! গত সোমবার (১৭ জানুয়ারি) শ্বশুরবাড়ি (জয়ন্তীপুর) থেকে তাঁর রক্তাক্ত, অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ওইদিনই মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছিলেন, “খুনের ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। তদন্তের পর বাকিটা বোঝা যাবে।” এরপরই, তদন্ত শুরু করেছিল SDPO অগ্নীশ্বর চৌধুরীর নেতৃত্বে চন্দ্রকোনা থানার পুলিশ। সোমার মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে গৌতম শী নামে বছর ২৬-২৭ এর এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়! প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যুবক স্বীকার করেছে খুন করার কথা। বৃহস্পতিবার সোমার এই ‘প্রেমিক’ তথা ‘খুনি’-কে আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের জয়ন্তীপুরের বাসিন্দা গোবিন্দ পাল (৩২)। পেশায় তিনি সোনার কারিগর, থাকতেন মুম্বাইতে। বাড়িতে স্ত্রী সোমা তাঁদের আড়াই বছরের শিশুকন্যা-কে নিয়ে থাকতেন। গত সোমবার (১৭ জানুয়ারি), বাড়ির ভিতরে খাটের নিচে প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় সোমার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সোমার গলায় আঘাত বা ফাঁসের চিহ্ন ছিল। মৃতদেহের পাশেই পড়ে ছিল সিগারেট, মদের বোতল এবং বিভিন্ন খাওয়ার দাওয়ার! তবে, সোমার মোবাইল ফোনটি গায়েব হয়ে গিয়েছিল। আর, সেই গায়েব হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন ট্র্যাক করেই বৃহস্পতিবার গৌতম শী নামে দাসপুর থানার নারানচক গ্রামের ওই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, গৌতম নিজের মুখে খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে।
পুলিশ সোমার মোবাইল নম্বরের কল লিস্ট বের করতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়! একটি ফোন নম্বরে গত এক মাসে গেছে ১২০০’র বেশি ফোন। সেই নম্বর আর সোমার নম্বর ট্র্যাক করতেই দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে যায়! একই লোকেশনে পাওয়া যায় দু’টি নম্বর। এরপরই, চন্দ্রকোনা থানার পুলিশ ওই যুবককে গ্রেফতার করে। জানা গেছে, বিবাহিত গৌতমের সঙ্গে গত বেশ কয়েক বছর ধরেই সোমার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তবে, গত কয়েক মাস ধরে গৌতম-কে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন সোমা। গৌতম রাজি না হওয়ায় তাঁকে রীতিমতো ব্ল্যাকমেইল করছিলেন সোমা। তাই শেষমেষ খুন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গৌতম! জেরায় একথা স্বীকারও করেছে গৌতম। রবিবার রাতে দু’জনে একসাথে খাওয়া দাওয়া ও মদ্যপান করে সোমা’র বাড়িতে। তারপর, গভীর রাতে সোমাকে খুন করে, তার মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায় গৌতম। বাড়িতে তার স্ত্রী ও এক সন্তান আছে বলে জানা গেছে! সবমিলিয়ে পরকীয়ার আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেল দু’টি পরিবার এবং দু’টি শিশুর ভবিষ্যৎ। আপাতত গৌতম-কে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ এই খুনের ঘটনায় আরও রহস্য উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।