দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুন: বাবার ডাকে মা ও বোনের সঙ্গে মামাবাড়ি থেকে নিজেদের বাড়ি ফিরেছিল অন্বেষা। ঘরের দরজা ভেতর থেকে ভেজানোই ছিল। ‘বাবা’ বলে ডাক দিয়ে দরজা খুলতেই আঁতকে উঠল সাত বছরের ছোট্ট মেয়ে! দেখে ঘরের সিলিং থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছে তার বাবার নিথর দেহ। ঘরের ভিতরে সমস্ত কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মেঝেতে লোহার শাবল, কাস্তে পড়ে রয়েছে। মা বলে চিৎকার করে ওঠে অন্বেষো। মা ঘরে ঢুকে স্বামীকে ওই অবস্থায় দেখা মাত্রই অজ্ঞান হয়ে যান! মর্মান্তিক ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা ৩ ব্লকের অন্তর্গত কেয়াবনী গ্রামের। সম্পত্তির লোভে ভাই উমাশঙ্কর রায়কে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই দাদা ও দাদার ছেলেদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবারের ঘটনায় ইতিমধ্যেই দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে চন্দ্রকোনা রোড ফাঁড়ির পুলিস। খুন হওয়ার আশঙ্কায় মৃত্যুর আগে একটি চিরকুটও লিখে গিয়েছেন ওই ব্যক্তি। অন্যদিকে, বুধবার স্ত্রী তনুশ্রী রায় চন্দ্রকোনা রোড ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ-ও করেছেন। ইতিমধ্যে, হয়েছে ময়নাতদন্ত-ও। তা সত্ত্বেও অভিযুক্তদের এখনও কেন (বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত) গ্রেফতার করা হয়নি, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্য থেকে এলাকার লোকজন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ চন্দ্রকোনা রোড ফাঁড়ির তরফে জানানো হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্ত এগোচ্ছে। উপযুক্ত প্রমাণ পেলেই গ্রেফতার করা হবে!
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বাড়িতে একাই ছিলেন ছিলেন উমাশঙ্কর রায় (৪২)। তাঁর স্ত্রী তনুশ্রী রায়, গত শনিবার সন্ধ্যায় দুই মেয়েকে নিয়ে পরমানন্দপুরে নিজের বাপের বাড়িতে গিয়েছিলেন পুজো অনুষ্ঠানে। মঙ্গলবার দুপুরে স্ত্রী’কে ফোন করেন উমাশঙ্কর বাবু। স্ত্রী-কে বাড়ি ফিরতে বলেন। জানান, বাসে করে চন্দ্রকোনা রোডে আসতে। তিনি সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন। এরপর, বিকাল সাড়ে তিনটে নাগাদ চন্দ্রকোনা রোডে বাস থেকে নেমে স্বামীকে ফোন করেন তনুশ্রী দেবী। কিন্তু, বহুবার ফোন করলেও ফোন ধরেননি স্বামী। এরপর নিজেই দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি গিয়ে দেখেন, বাড়ির সামনের দরজা বন্ধ। পিছনের দরজা খোলা দেখে সেই দরজা দিয়েই বাড়িতে প্রবেশ করেন তাঁরা। এরপর, বড় মেয়ে অন্বেষা ঘরের দরজা খুলতেই দেখেন, শিলিং ফেন থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছেন বাবা (উমাশঙ্কর)! ঘরের মেঝেতে বিভিন্ন সামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। মৃতের স্ত্রীর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই আমার ও আমার স্বামীর উপর শারীরিক ও মানসিক ভাবে অত্যাচার চালাত বড় ভাসুর শঙ্কর রায়, তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে এবং সেজ ভাসুর ও তাঁর স্ত্রী। দুই মেয়ে হওয়ার পর থেকেই অত্যাচারের পরিমাণ আরও বাড়তে থাকে। সম্পত্তি লিখিয়ে নেওয়ার জন্য ওরা বিভিন্নভাবে আমার স্বামীকে চাপ দিতে থাকে। মৃতের স্ত্রী বলেন, “ওরা বারবার বলত যে তোদের তো দুটোই মেয়ে, সম্পত্তি নিয়ে কী করবি!” তাঁর আরও অভিযোগ, “আমি বাপের বাড়ি গিয়েছিলাম, সেই সুযোগে আমার স্বামীকে ওরা খুন করেছে।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, সম্পত্তিগত বিবাদ মেটানোর জন্য দুই পক্ষকে নিয়ে একাধিকবার পাড়ায় মিটিং হয়েছে। কিন্তু, তাতে কোনও লাভই হয়নি। খুনের আশঙ্কায় উমাশঙ্কর বাবু একটি চিঠিও লিখে রেখে যান বলে দাবি তাঁর স্ত্রীর। শুধু তাই নয়, খুন হতে পারেন এই আশঙ্কা করেই স্ত্রীকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বাপের বাড়ি থেকে! জানা গেছে, উমাশঙ্কর বাবু লিখে গেছেন, “দুই দাদা ও বৌদি আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমার দুই মেয়ে, তাই আমাকে মেরে আমার সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে চাইছে।” ঘটনার তদন্তে নেমেছে চন্দ্রকোনা রোড ফাঁড়ির পুলিস। দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ-ও চালানো হচ্ছে। তবে, দুপুর ১ টা অবধি গ্রেফতার হওয়া বা আদালতের তোলার খবর পাওয়া যায়নি! এদিকে, নৃশংস এই ঘটনায় বাকরুদ্ধ এলাকাবাসী থেকে শুরু করে সমগ্র জেলাবাসী।