দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ জুলাই: ছেলে ছেলে করে পাগল গ্রাম বাংলার বাপ-মায়েরা! কত মানত। কত প্রার্থনা। পূজা-অর্চনা! পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার পেরুয়া গ্রামের সুভাষ প্রামাণিক আর তাঁর স্ত্রী ‘র কোল আলো করেও জন্মেছিল দু’দুটি পুত্র সন্তান। নাম রেখেছিলেন দীপঙ্কর আর শুভঙ্কর। বড় করে বিয়ে থা-ও দিয়েছিলেন। তাতে কি! পাখির চোখ বাপ-মায়ের সম্পত্তি। বেঁচে থেকে বড্ড জ্বালাচ্ছে। তাই, প্রথমে মা-কে সরিয়ে গ্রামবাসীর কাছে বাবা-কে খারাপ করার চক্রান্ত (অভিযোগ হয়নি, গ্রামবাসীদের বক্তব্য অনুযায়ী)। মাসদুয়েক পর বাবা-কে খুন করে শৌচাগারের সেফটিক ট্যাঙ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া (স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে সবং থানার পুলিশ)! পচা-দুর্গন্ধ বেরোনোয় গ্রামবাসীরা পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করলে, সোমবার সবং থানার পুলিশ গিয়ে সেফটিক ট্যাঙ্ক থেকে পচা-গলা মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করে। ‘গুণধর’ বড় ছেলে বেগতিক বুঝেই পলাতক। তার গায়ে আবার শাসকদলের যুব বুথ সভাপতির তকমা! যদিও, তাকে তৃণমূল নেতা হিসেবে মানতে রাজি নয়, এলাকারই তৃণমূল কর্মীরা। ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা। অন্যদিকে, ‘সেয়ানা’ ছোটো ছেলে শুভঙ্কর সহ পরিবারের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। তালিকায় সুভাষ বাবু’র পুত্রবধূরাও আছেন বলে জানা যায়।

thebengalpost.net
গ্রামবাসীরা পুলিশকে জানাচ্ছেন:

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সবং বলপাই ৯ নং অঞ্চলের পেরুয়া গ্রামের বাসিন্দা সুভাষ প্রামাণিকের বড় ছেলে বছর ৪২-এর দীপঙ্কর প্রামাণিক এলাকায় ‘ধুরন্ধর’ ও ‘ধান্দাবাজ’ হিসেবে কুখ্যাত। একসময় নাকি কোনো চিটফান্ডের এজেন্ট হয়ে গ্রামবাসীদের বহু টাকা ডুবিয়েছে। তারপর, সুযোগ বুঝে শাসকদলের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে! সম্পত্তি’র জন্য প্রায়-ই নাকি ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বাবা-মা’র উপর অত্যাচার-মারধর করতো। সোমবার এলাকার পুরুষ-মহিলারা একযোগে ক্যামেরার সামনে বললেন, “প্রায়ই অশান্তি হত। সুভাষ প্রামাণিক-ও অনড় ছিলেন। তিনি সুস্থ সবল ছিলেন। খেটে খেতেন। একটু জাঁদরেল হলেও, গ্রামবাসীদের উপকার করতেন। তাই, এখনই দুই ছেলেকে সম্পত্তি লিখে দিতে রাজি ছিলেন না! এনিয়ে প্রায়-ই অশান্তি হত। হঠাৎ মাস দুয়েক আগে শুনি ওঁর স্ত্রী মারা গেছেন। রহস্য মৃত্যু। তখনই সন্দেহ হয়েছিল! অশান্তির ফলেই মেরে দেওয়া হয়েছে। বড় ছেলের উপর-ই বেশি সন্দেহ হত! যদিও দুই ছেলে বোঝাতে চাইত, ওদের বাবা নাকি মেরে দিয়েছে। তারপর, গত ১৫-১৬ দিন ধরে দেখছি সুভাষ প্রামাণিক নিখোঁজ!” জানা যায়, দুই ছেলে লোকদেখানো নিখোঁজ ডায়েরিও জুন মাসের শেষ সপ্তাহে। তারপর, গত দু’একদিন ধরে প্রামাণিক বাড়ির পেছন থেকে প্রচন্ড দুর্গন্ধ আসায়, গ্রামবাসীরা পুলিশকে জানায়। অবশেষে, সোমবার সবং থানার পুলিশ এসে রহস্য উদ্ধার করে! তখনই এলাকাবাসী জানান, “আমরা এই সন্দেহই করেছিলাম। দুই ছেলে মিলে বাপ-টাকেও মেরে ফেললো! বড় ছেলেটাই বেশি শয়তান। আর, ছোটোটা শেয়ানা!” ক্যামেরার সামনে ‘কাঁদতে কাঁদতে’ (কুম্ভীরাশ্রু?) ছোটো ছেলে যদিও বলেছে, “বাবা-মা আমাদের জন্ম দিয়েছে। মাস দুয়েক আগে মা চলে গেল। বাবাকেও কে এইভাবে মেরে ফেলেছে!” কে মেরেছে? “সেটাই তো বুঝতে পারছিনা! আমরা চাই উপযুক্ত তদন্ত হোক।” পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। ‘গুনধর’ দীপঙ্করের খোঁজেও চলছে তল্লাশি! (আপডেট: মঙ্গলবার সকালে দীপঙ্কর প্রামাণিক-কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে পুলিশ সূত্রে।)

thebengalpost.net
ঘটনাস্থলে সবং থানার পুলিশ আধিকারিকরা :