দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ ডিসেম্বর: রবিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে আবর্জনা (বা, নোংরা) ফেলাকে কেন্দ্র করে দুই মহিলা কাউন্সিলের মধ্যে বেনজির গন্ডগোল প্রত্যক্ষ করেছিলেন মেদিনীপুর পৌরবাসী। আর, সোমবার সাত সকালে অস্থায়ী কর্মীদের একাধিক দাবি-দাওয়াকে কেন্দ্র করে, বিক্ষোভ-আন্দোলনের চাপে রীতিমত ভেঙেই পড়লো পৌরসভার মেনগেট। সবমিলিয়ে এখন চরম চাপে তৃণমূল শাসিত মেদিনীপুর পৌরসভা! গতকাল অর্থাৎ রবিবার সকালে মেদিনীপুর শহরের সিপাই বাজার এলাকায় ‘নোংরা’ ফেলাকে কেন্দ্র করে, তৃণমূলের দুই কাউন্সিলরের মধ্যে অশান্তি-গন্ডগোল শুরু হয়ে যায়। দুই এলাকার বাসিন্দাদের রীতিমতো মারমুখী মেজাজেও দেখা যায়। ৭ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সীমা ভকত ও তাঁর দাদা তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর শ্যামল ভকতের অভিযোগ ছিল, ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এসে তাঁদের ওয়ার্ডের (৭ নং) ভ্যাটে নোংরা ফেলছেন! ২ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মিতালী ব্যানার্জী’র অভিযোগ ছিল, ভ্যাটটি এমন একটি জায়গায়, যেটা ২ নং ওয়ার্ডের না ৭ নং ওয়ার্ডের, তা সত্যিই এলাকাবাসীর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। পৌরসভার দায়িত্বে পরিষ্কার করা হয়। তা ভেঙে ফেলা হয় হঠাৎ করে! এ নিয়ে তাই অশান্তি না বাড়িয়ে, দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের স্বার্থেই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

thebengalpost.net
রবিবার সিপাই বাজার এলাকায় উত্তেজনা:

তবে, কে শোনে কার কথা! উত্তেজনা এমন জায়গায় পৌঁছয়, ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয় কোতোয়ালি থানার পুলিশকে। পুলিশের সঙ্গেও তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন ৭ নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর শ্যামল ভকত। পুলিশের তরফেও তাঁকে রীতিমতো ধমকাতে দেখা যায়! তারপরই পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এ নিয়ে, ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, দীর্ঘ ৪০-৫০ বছর সিপাই বাজার (৭ নং ওয়ার্ডের মধ্যে) এলাকায় থাকা আবর্জনার ভ্যাটটি গত ৩-৪ দিন আগে রাতের অন্ধকারে ভেঙে ফেলা হয় ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে। যার ফলে ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ২ নং ও ৭ নং ওয়ার্ডের শতাধিক পরিবারকে। রবিবার সকালে এ নিয়েই গণ্ডগোল বেঁধে যায় দু’পক্ষের মধ্যে। পরে পরিস্থিতি সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে, ওই এলাকায় ‘আবর্জনা’ ফেলার বিষয়ে এখনও স্থায়ী সমাধান হয়নি বলেই জানা গেছে। অন্যদিকে, গত কয়েক দিন (চার দিন) ধরেই পৌরসভার অস্থায়ী সাফাই কর্মীরা ন্যায্য বেতন, মাসের শুরুতে বেতন প্রদান, স্থায়ীকরণ সহ একাধিক দাবিতে আন্দোলন ও কর্মবিরতি চালাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, পৌরসভা আগে দৈনিক ২২৬ টাকা বেতন দিলেও, গত ২-৩ মাস ধরে দৈনিক ২০২ টাকা করে বেতন প্রদান করছে, মাসের শুরুতে বেতন হচ্ছেনা, মাস্টার রোল মেনে চলা হচ্ছেনা প্রভৃতি। অবিলম্বে তাই পূর্বের মতোই দৈনিক বেতন দেওয়া, মাসের শুরুতে বেতন প্রদান, মাস্টার রোল তৈরি করা, দীর্ঘদিনের কর্মীদের স্থায়ীকরণের দাবিতে গত চার দিন ধরে আন্দোলন ও কর্মবিরতি পালন করছেন এবং দাবি মানা হয়নি বলে সোমবার সাত সকালে তাঁরা পৌরসভায় গিয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেন। তাঁদের আন্দোলনের চাপেই ভেঙে পড়ে পৌরসভার লোহার গেটের একপাশের অংশ! সেই সময় উপস্থিত ছিলেন পৌরপ্রধান সৌমেন খান, সিআইসি (জঞ্জাল) সুসময় মুখার্জি, ১৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাণ্ডব, ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লিপি বিষই, ১২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর টোটোন শাসপিল্লি প্রমুখ। অভিযোগ, ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লিপি বিষই আন্দোলনকারীদের প্রতি কটুক্তি করেন। তাতেই উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়! পরে পৌরপ্রধান এবং অভিজ্ঞ কাউন্সিলরদের হস্তক্ষেপে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে, নিজেদের দাবিতে অনড় অস্থায়ী কর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

thebengalpost.net
সোমবার মেদিনীপুর পৌরসভায় উত্তেজনা:

thebengalpost.net
ভেঙে পড়লো গেট :