দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ মে: “ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন বলেছেন, একটা জাতি না খেতে পেয়ে মরে না; মরে তার কৃষ্টি-সংস্কৃতির চর্চার অভাবে। এই জায়গাতেই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা। এই হলে স্বল্প সংখ্যক উপস্থিতির কথা মন্ত্রী (পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী) সন্ধ্যা রানী টুডু, বীরবাহা হাঁসদা (বন প্রতিমন্ত্রী) বলেছেন। আমাকেও খুব ব্যথা দিয়েছে। জেলার ট্রাইবাল ডিপার্টমেন্ট যদি আমাদের সঙ্গে একটু যোগাযোগ করত, জেলা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করত; তাহলে এরকম লজ্জার মুখে পড়তে হতো না…আদিবাসীদের একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান। অত্যন্ত সংবেদনশীল একটা বিষয়। আদিবাসীদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, জীবন, জীবিকা তুলে ধরার একটা মঞ্চ। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ সেই অনুষ্ঠান মেদিনীপুরে আয়োজন করার সুযোগ করে দিয়েছেন! অথচ, মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর একটা ছবি নেই। স্বল্প সংখ্যক উপস্থিতি! আমি জেলাশাসককে বলব, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। তদন্ত হওয়া উচিত।” জেলার আদিবাসী দপ্তর এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের বুধবার মেদিনীপুর শহরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে আয়োজিত ‘আদিবাসী একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতা’র মঞ্চ থেকে এভাবেই ভর্ৎসনা করলেন রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভুঁইয়া। সবংয়ের বিধায়ক তথা জলসম্পদ উন্নয়ন ও উপভোক্তা দপ্তরের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া নিজের বক্তৃতায় আরো বলেন, “একটা সময়ে, জঙ্গলমহলে আদিবাসীরা কিভাবে থাকতো, আমি জানি। বীরবাহা (মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা) জানে, ওর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেলে সাইকেলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছি। সিপিএম এর কি অত্যাচার! সেই জায়গা থেকে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসী সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে একটা নতুন দিশা দেখিয়েছেন। গোটা দেশে শুধু নয়, গোটা বিশ্বে আদিবাসীদের জন্য এমন কাজ কেউ করেনি। অথচ, আজকের এই অনুষ্ঠানে মঞ্চে তাঁর একটা ছবি নেই। ভালো লাগছেনা। মনটা খারাপ হয়ে গেল!”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের তরফে আয়োজিত রাজ্যস্তরীয় দুই দিন ব্যাপী একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বুধবার সুবিশাল প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে হাতে গোনা কিছু মানুষের উপস্থিতি দেখে জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের ওপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া। আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের কর্তারা কোনো দফতরের সাথে কথা না বলেই এই কর্মসূচির আয়োজন করেছেন বলে অভিযোগ করলেন তিনি। রাজ্যস্তরীয় একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতা, অথচ দর্শকাসনে হাতে গোনা কিছু মানুষ! অনুষ্ঠানের বা প্রতিযোগিতার ব্যানারে নেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ছবি! আদিবাসী একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতায় অনুপস্থিত আদিবাসীরাই। তাঁর মতে, “এর থেকে পাড়ার একটি ফুটবল প্রতিযোগিতাতেও বেশি লোক হয়।” উপস্থিতির সংখ্যা দেখে লজ্জিত হন মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাও। উল্লেখ্য যে, এদিন মেদিনীপুর শহরের জেলা পরিষদ প্রেক্ষাগৃহে বা প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে দর্শকাসনে মেরেকেটে ১০০-১৫০ জন উপস্থিত ছিলেন। যেখানে জেলার এই সর্ববৃহৎ প্রেক্ষাগৃহে অন্তত ৫০০-৬০০ জন উপস্থিত না হলে, প্রেক্ষাগৃহ ফাঁকা ফাঁকা লাগে! এসব নিয়েই এদিন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া। জেলাশাসককে বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখতে বলেন। তবে কি মন্ত্রী কোন অন্তর্ঘাতের আভাস পেয়েছেন? সম্প্রতি, রাজ্যজুড়ে যেভাবে আদিবাসী আন্দোলন দানা বাঁধছে, তাতে বিজেপি-সিপিআইএম সহ বিরোধীরা সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। যদিও অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া এসব উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, “আর একটু লোকজন হলে ভালো লাগতো। আর, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই সবকিছু হচ্ছে। তাই, তাঁর ছবি থাকলে আমাদের ভালো লাগে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের (আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের) ভারপ্রাপ্ত অফিসারের আরেকটু সচেতন হওয়ার দরকার ছিল।” অনগ্রসর শ্রেণীকল্যাণ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার আধিকারিক সুরজিৎ পাল সহ অন্যান্যরা অবশ্য এই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি!