thebengalpost.net
পিংলার উত্তম মান্না ও তাঁর স্ত্রী'র মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ জুন: পেটের তাগিদে, সংসার চালানোর চরম দায়বদ্ধতা মাথায় নিয়ে এঁরা পাড়ি দিয়েছিলেন ভিন রাজ্যে। কেউ কেরালা, কেউ তামিলনাড়ু, কেউবা কর্ণাটক কিংবা অন্ধ্রপ্রদেশ। বাংলার মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম কিংবা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে তাঁরা করমন্ডল এক্সপ্রেসে চেপে গত শুক্রবার (২ জুন) রওনা দিয়েছিলেন কিংবা হামসফর এক্সপ্রেসে চেপে কর্মস্থল (ব্যাঙ্গালোর) থেকে ‘অভিশপ্ত’ ওই শুক্রবারই বাড়ি ফিরছিলেন। মাঝপথেই সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়! ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ২৮৮ জন (বা, ২৭৫) প্রাণ হারিয়েছেন। আর, যাঁরা কোনমতে বেঁচে গেলেন, কেউবা সারা জীবনের মতো হারালেন দৃষ্টিশক্তি; আবার কেউ দুটো পা’ই হারিয়ে প্রায় পঙ্গু হয়ে গেলেন! কারুর আবার কোমরে কিংবা হাতে মারাত্মক আঘাত। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের মুখোমুখি হয়ে এমনই সব করুণ দৃশ্য দেখলেন কিংবা তাঁদের মুখ থেকে শুনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যথাসাধ্য পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। চাকরি কিংবা ক্ষতিপূরণের ঘোষণাও করা হয়েছে তাঁর সরকারের পক্ষ থেকে।

thebengalpost.net
পিংলার উত্তম মান্না ও তাঁর স্ত্রী’র মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী:

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলার আগরআড়া (৫ নং অঞ্চল) গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী উত্তম মান্না হামসফর এক্সপ্রেস চেপে ফিরছিলেন ব্যাঙ্গালোর থেকে। সেখানে একটি চট মিলে কাজ করতেন। বালেশ্বরের বাহানাগা-তে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বুকে ও কোমরে মারাত্মক চোট পেয়েছেন। ভর্তি আছেন মেদনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাঁর কথা শুনলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাড়িতে দুই ছেলেই প্রতিবন্ধী। মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণে আশ্বাস দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে আর ক’দিন সংসার চলবে! বছর ৫৫’র উত্তম চোয়াল শক্ত করে বললেন, “সংসারটা তো চালাতে হবে! আবার সেই কাজেই যেতে হবে।” পাশে দাঁড়িয়ে নির্বাক স্ত্রী-ও স্বামীকে বাধা দিতে পারলেন না!

মাত্র ২১ বছর বয়স গোপীবল্লভপুরের পঙ্কজ বেজের। খুড়তুতো ভাই শুভেন্দু বেজ (২১)-কে সঙ্গে নিয়ে কোম্পানির কাজের উদ্দেশ্যে চেন্নাই পাড়ি দিয়েছিলেন করমন্ডল এক্সপ্রেসে চেপে। পথেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা! পঙ্কজ হারিয়েছে তাঁর এক চোখের দৃষ্টিশক্তি। ভেঙেছে একটি পা-ও। ভর্তি আছেন মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হলেও, চাকরির বিষয়ে তাঁদের কিছু বলা হয়নি বলেই জানালেন পঙ্কজের মা, দিদি সহ পরিবারের সদস্যরা। অন্যদিকে, মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে এই মুহূর্তে পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পঙ্কজের ভাই শুভেন্দু! মুর্শিদাবাদের যুবক রাজকুমার মন্ডল কাজের খোঁজে প্রথমবারের জন্য রওনা দিয়েছিলেন কেরালার উদ্দেশ্যে। দুর্ঘটনায় ভেঙে গেছে দুটো পা-ই। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবন এলাকার বিশ্বজিৎ সর্দারের একটি পা ভেঙ্গে গেছে করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায়। তিনি ধান রোয়ার কাজে অন্ধ্রপ্রদেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন! এক প্রকার মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বাসন্তী থানার বাসিন্দা রবিন নাইয়া। তাঁকে মৃত মনে করে লাশের সঙ্গে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। উদ্ধারকারীদের পা জড়িয়ে ধরে জানিয়েছিলেন, “আমি বেঁচে আছি!” তাঁর দুটো পা-ই প্রায় গুঁড়িয়ে গেছে। বুকে সহ গোটা শরীরে আঘাত পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যাওয়া পরিবারের অপর ৩ জন সদস্য সহ ৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে এই সমস্ত পরিবারগুলি কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন।

thebengalpost.net
গোপীবল্লভপুরের যুবক পঙ্কজ বেজের বিষয়ে শুনছেন মুখ্যমন্ত্রী: