দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ জুন: “শত শত সাম্রাজ্যের ভগ্নশেষ ‘পরে/ ওরা কাজ করে।” বাহানাগা (Bahanaga)’র ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে সবকিছু নতুন করে গড়ে দেওয়ার কাজে মগ্ন ‘ওরা’। ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর দিন থেকেই দিন-রাত এক করে কাজ করে চলেছেন ওরা। ৪০ ডিগ্রীর বেশি তাপমাত্রাতে, মাথার ওপর গনগনে রোদ নিয়ে ওরা রেললাইন মেরামতিতে নিযুক্ত। প্রতিদিন অন্তত ১০০০ শ্রমিক ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন রেললাইন থেকে ট্রেনের ধ্বংসাবশেষ কিংবা পাথর সরানো, ফিসপ্লেট পাতা, নতুন করে রেললাইন বিছানো, সবকিছু পাহারা দেওয়ার কাজ করে চলেছেন নীরবে! আর, আধুনিক সভ্যতার এই ‘বিশ্বকর্মা’-দের মুখে প্রতিদিন তিন বেলা খাবার তুলে দিচ্ছেন বাহানাগা’র নির্মীয়মান ইসকন মন্দিরের (Iskcon Bahanaga) মহারাজেরা। কর্মবীর-দের সেই বিশাল কর্মকাণ্ড আর মহারাজদের মহান কর্মযজ্ঞ স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে এলেন মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্রের সদস্যরা। শনিবার (১০ জুন) কুইজ কেন্দ্রের ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল বালেশ্বরের বাহানাগাতে গিয়ে একদিকে যেমন নিহত ২৮৮ জন যাত্রীদের প্রতি মোমবাতি জ্বালিয়ে, পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে ও বৃক্ষরোপণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন; ঠিক তেমনই ইসকনের মহারাজদের মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে যথাসাধ্য খাদ্যসামগ্রীও তুলে দিয়ে এলেন তাঁদের হাতে।
৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলে থাকা শিক্ষক ভাস্করব্রত প্রতি, নরসিংহ দাস, সুভাষ জানা, আলোক মাইতি, কালীচরণ দাস, নবকুমার সাহু, শুভাশিস প্রধান-রা জানালেন, “বাহানাগা রেলওয়ে স্টেশনের পাশেই নির্মীয়মাণ ইসকন মন্দির। কাজ চলছে। অন্যদিকে আবার দুর্ঘটনার সিবিআই তদন্ত চলছে। তাই, চারিদিকে পুলিশের কড়াকড়ি। এই পরিস্থিতিতে দিক নির্দেশ করা ইসকন মন্দিরের (Iskcon Bahanaga) গেট দিয়ে ঢুকলেই দেখতে পাওয়া যাবে অন্য চিত্র। মাটিতে বসে পাত পেড়ে খাচ্ছেন উর্দি পরা পুলিশ থেকে শ্রমিকের দল। আমাদের কৌতুহল নিরসন হতে না হতেই, হাতে অন্ন ভর্তি থালা ধরিয়ে দিলেন দুই টিকিধারী মহারাজ। মহাতৃপ্তিতে নিরামিষ ভোগ খাওয়া শেষ হতেই এক মহারাজ হাত ধোওয়ার জল নিয়ে হাজির হলেন। আসলে, শ্রমিক, মজুর, পুলিশ, সাধারণ মানুষের সাথে আমরাও তখন ওঁদের কাছে পরমাত্মীয়। কথায় কথায় জানালেন, গত ৩ তারিখ (৩ জুন) থেকে চলছে এই ভোজন প্রক্রিয়া। প্রথম প্রথম ১২০০ জন করে খাওয়ার পেতেন প্রতিদিন তিন বেলা। এখন শ্রমিকদের সংখ্যা একটু কমেছে। ৭০০ থেকে ৮০০ জন শ্রমিককে প্রতি দিন তিন বার করেই দেওয়া হচ্ছে খাবার। সম্পূর্ণ দানের পয়সায় চলছে ইসকনের এই ভাণ্ডার। দেশের কাজে কর্তব্যরত শ্রমিক ও পুলিশদের বিনামূল্যে খাবার, পানীয় জল এবং বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছেন ইসকন মন্দিরের কর্তৃপক্ষ।” কুইজ কেন্দ্রের ওই প্রতিনিধিরা জানান, “আমরা মুগ্ধ হয়ে, আপ্লুত হয়ে আমাদের মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্র সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির তরফে যথাসাধ্য খাদ্য সামগ্রী বা রান্নার উপকরণ তুলে দিলাম মহারাজদের হাতে। খুশি হয়ে ওঁরা জড়িয়ে ধরলেন আমাদের।” (ছবি ও তথ্য: ভাস্করব্রত পতি, নরসিংহ দাস ও সুদীপ কুমার খাঁড়া।)