দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ মার্চ: “২০২১ সালে (বিধানসভা নির্বাচনে) এই নারায়ণগড় থেকে (বিজেপি-র) ‘কে’ দাঁড়িয়েছিল? তৃণমূলের একটা আবর্জনা! আমি নাম বলছিনা, আপনারা বুঝে গেছেন! তৃণমূলের একটা আবর্জনা। এবার এখনও প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারেনি! কবে আমরা একটা আবর্জনাকে ত্যাগ করব, আর ওরা (বিজেপি) তা গ্রহণ করবে!” শনিবার (১৬ মার্চ) পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের (বেলদা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত) জনগর্জন সভা থেকে ঠিক এভাবেই নাম না করে বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি তথা ২০২১ সালের নারায়ণগড় বিধানসভার (বিজেপি) প্রার্থী রমাপ্রসাদ গিরি-কে কটাক্ষ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ রমা গিরি’কে কটাক্ষ করতে গিয়ে, পরোক্ষে ‘ফুল বদল’ করা (তৃণমূল ত্যাগী) অন্যান্য বিজেপি নেতাদেরও কটাক্ষ করেছিলেন অভিষেক! তাঁর সভার পরই অবশ্য ‘একসময়ের’ রাজ্য যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক ব্যানার্জি-কে নিজের সমাজ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট (Facebook) থেকে কড়া ‘জবাব’ দেন ‘সেইসময়ের’ যুব তৃণমূল কংগ্রেসের ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি ওরফে রমা গিরি!

thebengalpost.net
বেলদা স্টেডিয়ামে অভিষেক ব্যানার্জি:

ফেসবুকে রমা লিখেছেন, “ভাইপো, আপনি বলতেন রমা পশ্চিমবঙ্গের বেস্ট প্রেসিডেন্ট (পড়ুন, সেরা জেলা যুব সভাপতি)। আর, আজ ‘আবর্জনা’ বলছেন! আমিও তো জানতাম না ভাইপো দা, আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘খাদক’! বালি, কয়লা, গরু, কিছুই বাদ দেননি। পার্থ বাবু আপনার খুব খুব ঘনিষ্ট ছিলেন। তা নিয়ে কিছু বলুন। শান্তনু কুন্তল তো আপনার আপনজন। কালীঘাটের কাকু (সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র) কেমন আছেন ভাইপো দা? এদের নিয়ে কিছু বলুন। বালুকে (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক) নিয়ে বলুন। বলুন ‘বীরভূমের বাঘ’ (অনুব্রত)-কে নিয়ে। নারায়ণগড়ের 98,864 জন বিজেপি-কে ভোট দিয়েছেন (একুশের বিধানসভায়)। তাঁদের অপমান করবেন না! নারায়ণগড়ের জনগণ 2024-এও দিলীপ দা (বিজেপি সাংসদ ও সম্ভাব্য প্রার্থী দিলীপ ঘোষ)-কে জিতিয়ে আপনাকে যোগ্য জবাব দেবেন।” উল্লেখ্য যে, একুশের বিধানসভার ঠিক আগেই (২০২০’র ১৯ ডিসেম্বর) মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট মাঠের সভায় শুভেন্দু অধিকারীর ‘সঙ্গী হয়ে’ বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমাপ্রসাদও। তাঁকে নারায়ণগড় আসনে প্রার্থীও করেছিল বিজেপি। তৃণমূলের সূর্য অট্ট-কে জোর ‘টক্কর’ দেওয়ার পরেও অবশ্য মাত্র 2418 ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন রমাপ্রসাদ। সামান্য ভোটে হেরে যাওয়ার পর ‘পুলিশি সন্ত্রাস’ আর ‘রিগিং’-র অভিযোগ এনেছিলেন রমা! শনিবার অভিষেকের কটাক্ষের পর সেই রমা-ই ফেসবুকে গর্জে ওঠেন। তাঁকে (অভিষেককে) ‘ভাইপো দা’ সম্বোধন করে স্মরণ করিয়ে দেন ‘অতীত’!

উল্লেখ্য যে, আদতে যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি এবং পরবর্তী সময়ে জেলা পরিষদের একজন কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেও, একসময় রমা-র নামে নাকি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের বাঘ আর গোরু ‘একঘাটে’ জল খেত! জেলার রাজনৈতিক মহল অন্তত তাই মনে করে জেলা তৃণমূলের তৎকালীন এই ‘প্রভাবশালী’ নেতা সম্পর্কে। সেই রমা গিরি এখন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘ঘনিষ্ঠতম’ বিজেপি নেতাদের মধ্যে অন্যতম! রমা এদিন ফোনে জানান, “২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত আমি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি ছিলাম। আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে বিজেপি-তে যোগদান করেছিলাম। তখনও আমি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ছিলাম। পরবর্তী সময়ে স্বেচ্ছায় সেই পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছি। এই ক’দিন আগে অবধিও স্বয়ং মমতা ব্যানার্জি বিভিন্ন সভায় পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতাদের খুঁজতে গিয়ে আমার নাম নিয়েছেন! সেটা অন্তত মিডিয়া ভালো করে জানে। আর যতদিন যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি ছিলাম, এই ভাইপো-র চোখেই আমি সেরা সভাপতি ছিলাম। তখন উনি রাজ্য যুব তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন। পরবর্তী সময়ে এই তোলাবাজ ভাইপো-র প্রকৃত স্বরূপ বাংলার মানুষের কাছে প্রকট হয়ে যায়। আমিও দল ছাড়ি! উনিই এই বাংলার একটা ‘আবর্জনা’, সবথেকে বড় তোলাবাজ!” কিন্তু, ২০১৯ সালে বিজেপি-তে যোগদানের কয়েক মাসের মধ্যেই তো আপনি ফের তৃণমূলে ফিরে এসেছিলেন? রমা বলেন, “সেটা শুভেন্দু বাবু (শুভেন্দু অধিকারী)-র আহ্বানে ফিরে এসেছিলাম। যা একটা ‘ভুল’ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে স্বয়ং শুভেন্দু বাবু’ও তো নিজের ভুল বুঝতে পারেন! এই তোলাবাজ ভাইপোর জন্যই তৃণমূল ছেড়ে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হন। নরেন্দ্র মোদীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরাও তাঁর (শুভেন্দু অধিকারীর) সঙ্গী হই! জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ পদ থেকেও আমি ইস্তফা দিই।” রমা এও স্মরণ করিয়ে দেন, “মাত্র ২৪১৮ ভোটে বিধানসভায় হেরেছি। কিন্তু, নারায়ণগড়ের মানুষ জানেন, পুলিশ দিয়ে আর রিগিং-ছাপ্পা করে আমাকে হারানো হয়েছিল। অন্তত ১০-১৫ হাজার ভোটে আমারই জেতার কথা ছিল। আর এবার (লোকসভায়), দিলীপ দা প্রার্থী হোন বা অন্য কেউ, নারায়ণগড় থেকেই বিজেপি অন্তত ৩০-৪০ হাজার লিড পাবেন!” এ নিয়ে জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি নির্মাল্য চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “তৃণমূলের উচ্ছিষ্ট, আবর্জনারাই বিজেপি-র প্রার্থী হয়; এতো প্রমাণিত। আর রমা গিরি-কে রাজনৈতিক পরিচয় দিয়েছিলেন এই অভিষেক ব্যানার্জিই। পরবর্তী সময়ে প্রভাব খাটিয়ে উনি কৃষি কর্মাধ্যক্ষ হয়ে বহু চাকরি আর টাকা লুট করছিলেন। সেসব থেকে বাঁচতেই শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে এই সমস্ত মেদিনীপুরের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা বিজেপি-তে যায়। এদের সম্পর্কে যত কম বলা যায়, ততোই ভালো!” পাল্টা রমা-র দাবি, “ভিত্তিহীন কথাবার্তার কোনো উত্তর দেবোনা, যা জবাব দেওয়ার ওঁর ‘বস’-কে ফেসবুকে দিয়ে দিয়েছি!”

thebengalpost.net
শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে রমাপ্রসাদ গিরি (বাম দিকে), ফাইল ছবি :