দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ জুলাই: বার্বাডোজে বিশ্বজয়ের পরই বিরাট, রোহিত-রা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে ‘অবসর’ ঘোষণা করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, “সময় হয়েছে। এবার নতুনদের জায়গা করে দিতে হবে।” রাজনীতিতে অবশ্য ‘অবসর’ বলে কিছু হয়না। আশির পরেও দাপটে ব্যাটিং করে গিয়েছেন বাজপেয়ী (অটল বিহারী বাজপেয়ী), মনমোহন (মনমোহন সিংহ), জ্যোতি বসুরা! তৃণমূলে অবশ্য অবসর-প্রথা চালু করতে চেয়েছিলেন ‘সেনাপতি’ অভিষেক (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়)। বাধ সেধেছেন স্বয়ং নেত্রীই (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)! তাঁর ইচ্ছেতেই এবারও সাংসদ হয়েছেন সুদীপ (সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়), সৌগত (সৌগত রায়)-রা। সংগঠনে এখনও তাঁর ভরসা বক্সী দা (সুব্রত বক্সী)! অন্যদিকে, সায়নী (সায়নী ঘোষ), বাপি (বাপি হালদার)-দের সংসদে পাঠিয়ে তারুণ্যের ‘জয়গান’ গেয়েছেন অভিষেকও। আর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সংগঠনে যে তিনি নিজের মতো করেই ‘নবজোয়ার’ আনার পক্ষপাতী, বারে বারে তা বুঝিয়েছেন। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরার উত্থানও অভিষেকের এই নবজোয়ার-রাজনীতির হাত ধরেই। নির্মাল্য (চক্রবর্তী), সন্দীপ (সন্দীপ সিংহ)-রাও অভিষেককেই তাঁদের ‘বস’ মানেন। উল্টোদিকে, অজিত মাইতি, দীনেন রায়, প্রদ্যোৎ ঘোষরা যে এখনও ‘দিদি’ (মমতা) কিংবা বক্সী-পন্থী; তা বলাই বাহুল্য! মঙ্গল-দুপুরে মেদিনীপুরের ভরা মঞ্চে (প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে অনুষ্ঠিত ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভার মঞ্চে) অজিত, প্রদ্যোৎ, দীনেনদের প্রিয় সেই ‘বক্সী দা’ (রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী)-ই যেভাবে ‘নবীন’ সুজয়-কে ‘জয়মাল্য’ পরিয়ে বরণ করে নিলেন; তাতেই ‘হতবাক’ পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘প্রবীণ’ তৃণমূলীদের একাংশ!

thebengalpost.net
সুব্রত বক্সীকে বরণ করে নিলেন সুজয়-রা:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের আহ্বানে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়েছিল শহরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। ছিলেন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া, শ্রীকান্ত মাহাত থেকে বিধায়ক দীনেন রায়, সূর্য অট্ট, বিক্রম চন্দ্র প্রধান, পরেশ মুর্মু, সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি-রা। এসেছিলেন পিংলার বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতিও। আর সেই সভাতেই রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী-কে পুষ্পস্তবক, স্মারক আর উত্তরীয় (শাল) দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের তরফে। এরপরই, সকলকে চমকে দিয়ে সুজয়-কে কাছে ডেকে নেন বক্সী। নিজের গলার উত্তরীয় (শাল) সুজয়-কে পরিয়ে দিয়ে বলেন, “এটা তোরই প্রাপ্য!” মঞ্চে তখন বসে ‘পোড়খাওয়া’ অজিত, দীনেন, বিক্রম, সূর্য-রা। মুগ্ধ চোখে সকলেই দেখলেন, অভিষেক আগেই ‘অভিষিক্ত’ করেছিলেন; এবার ‘জয়মাল্য’ পরিয়ে দিলেন ‘দিদি’-র বিশ্বস্ত বক্সী দা-ও! বুঝতে বাকি রইলোনা মেদিনীপুরের রাজনীতিতে এখন পাকাপাকিভাবেই সুজয়-যুগের সূচনা হল।

thebengalpost.net
বক্সীর সুজয়-বরণ:

মঙ্গলবার দুপুরে মঞ্চে থাকা জেলা তৃণমূলের এক তরুণ নেতা জানালেন, “মেদিনীপুর লোকসভা আর ঝাড়গ্রাম লোকসভায় দলীয় প্রার্থীদের জয়ের পেছনে সুজয় দা-র অবদান অনস্বীকার্য। এদিনের সভায় তাই আমরা জেলা ও প্রতিটি ব্লকের তরফে সুজয় দা-কে সংবর্ধিত করি। কিন্তু, তারপর বক্সী দা যে এভাবে সুজয় দাকে সম্মানিত করবেন; তা আমরা ভাবতেও পারিনি!” উনি (বক্সী) কি বললেন সুজয় হাজরা-কে? ওই নেতা জানালেন, “বক্সী দা বললেন, এটা তোরই প্রাপ্য। খুব ভাল কাজ করেছিস। এভাবেই সকলকে নিয়ে কাজ চালিয়ে যা!” সুজয়-ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষক নেতা তো আবার কবি শরৎ কুমার মুখোপাধ্যায়ের লাইন উদ্ধৃত করে বললেন, “আজ (মঙ্গলবার) মঞ্চে যা দেখলাম, মনে হলো আমাদের রাজ্য সভাপতি বক্সী দা প্রিয় জেলা সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘মালাটা তুমিই পরো…তোমার প্রাপ্য….আমি চেয়ে দেখি!'” মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুজয় শোনালেন, “রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য আমরা জেলা তৃণমূলের তরফে এদিন বক্সী দা-কে সংবর্ধিত করি। উনি হঠাৎই আমাকে ডেকে নিজের গলার শালটা পরিয়ে দিলেন। রাজ্য সভাপতির কাছ থেকে এরকম সম্মান পেলে, ভালো তো লাগেই। আসলে মেদিনীপুর আর ঝাড়গ্রামের ফলে উনি খুশি। এদিনের প্রস্তুতি সভাও সফল হয়েছে। তাই, অনেকদিন পর বেশ খোশমেজাজেই বক্সী দা-কে পাওয়া গেল! দলের কর্মীদের সেলফির আবদারও মিটিয়েছেন হাসি মুখে।” কিন্তু, অভিষেকের পর সুব্রত বক্সীর ভালোবাসা আর সমর্থনও যে এভাবে পাবেন, ভেবেছিলেন? সুজয় বলেন, “আমি স্বয়ং দিদিকে কথা দিয়েছিলাম। মেদিনীপুরে কঠিন লড়াই ছিল, আমরা জিতেছি। ঝাড়গ্রাম লোকসভার যে অংশটা আমাদের সাংগঠনিক জেলার মধ্যে পড়ে, সেখান থেকে (শালবনী ও গড়বেতা) প্রায় ৬৮ হাজার লিড দিতে পেরেছি। স্বাভাবিকভাবেই তাই দিদি সহ আমাদের নেতৃত্বরা খুশি! তবে, আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। দলে এখনো বেশ কিছু ফাঁকফোকর আছে। ২১ জুলাইয়ের পর সেগুলি নিয়ে বসব। একইসঙ্গে, যারা ভালো কাজ করেছে তাদের পুরস্কৃত করা হবে। আর, যাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে দল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”

thebengalpost.net
সুব্রত বক্সীর সঙ্গে সুজয় হাজরা:

thebengalpost.net
জেলা তৃণমূলের সংবর্ধনা জেলা সভাপতিকে: