দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ জুলাই: আবারও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের মন্দিরময় পাথরা’র ‘প্রাণপুরুষ’ ইয়াসিন পাঠান। একুশ বছর ধরে ‘বঞ্চিত’ কৃষকদের স্বার্থে ভগ্ন হৃদয়ে, অসুস্থ শরীরে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী (Minister of Culture in India) গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত-কে উদ্দেশ্য করে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) চিঠি লেখেন ইয়াসিন। প্রসঙ্গত, গত ৫০ বছর ধরে প্রাচীন হিন্দু স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নিদর্শন স্বরূপ পাথরা (Pathra- The Village of Temples)-র ৩৪টি মন্দির নিজের ‘বুক’ দিয়ে আগলে রেখেছেন মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাথরা’র বাসিন্দা, সত্তোরোর্ধ্ব ইয়াসিন। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি (ড. শঙ্করদয়াল শর্মা) কর্তৃক ‘কবীর’ পুরস্কারে ভূষিত ‘পাথরার প্রাণপুরুষ’ ইয়াসিন পাঠানের উদ্যোগেই ২০০৩ সালের ১৬ জুলাই কেন্দ্রীয় সরকারের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) ‘মন্দিরময় পাথরা’র ২৫ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে। মন্দির সংস্কারের কাজও এগোয়। তবে, ২১ বছর হতে চললো, এখনও জমির মূল্য পাননি ‘জমিদাতা’ কৃষকরা! কিডনি ও হার্টের অসুখে আক্রান্ত ইয়াসিন তাই চরম হতাশায় ভুগছেন। কারণ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার স্বার্থে, শুধুমাত্র তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়েই জমি দান করেছিলেন পাথরা’র দরিদ্র কৃষকরা।
১৯৭২ সাল থেকে পাথরা’র ৪২টি মন্দির বাঁচানোর জন্য লড়াই করা মুসলিম যুবক ইয়াসিন আজ বয়সের ভারে, রোগের প্রকোপে প্রায় শয্যাশায়ী। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রবল মানসিক চাপ আর হতাশা! ২০২৪ সালের শুরুতে তাই আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন পাথরা’র পাঠান! আর তারপরই, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের হস্তক্ষেপে এবং ASI (Archaeological Survey of India) নির্দেশে রাজ্য সরকারের তরফে জমির সমীক্ষা ও মূল্য নির্ধারণ (প্রায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা) করা হয়। জেলা ও ব্লক প্রশাসনের সহায়তায় প্রায় ৩৫ জন জমিদাতাকে চিহ্নিত করা হয় এবং এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য রাজ্য সরকারের তরফে ASI-র কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু, তারপর থেকে প্রায় ৫ মাস হতে চললো এখনও ASI, কলকাতার কাছে অর্থ-প্রদানের ‘অনুমোদন’ আসেনি দিল্লির সদর দফতর থেকে।
এই পরিস্থিতিতে জমিদাতারা তাঁর উপর চাপ বাড়াচ্ছেন বলে ‘অনুযোগ’ ইয়াসিন পাঠানের। বৃহস্পতিবার তাই তিনি আবারও এই হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে চিঠি লিখলেন মেদিনীপুরের সকলের প্রিয় ‘ইয়াসিন দা’। চিঠির প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরীর কাছেও। উল্লেখ্য যে, শ্রী চৌধুরী ২০২২ সালে মেদিনীপুর শহরে ইয়াসিন পাঠানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ‘সম্প্রীতির রক্ষক’ হিসেবে তাঁকে সম্মানিত করেছিলেন। বৃহস্পতিবার অসুস্থ শরীরে, কাঁপা গলায় ইয়াসিন বেঙ্গল পোস্ট-কে জানান, “ওঁরা এই টাকা না পেলে আমার তো মরেও শান্তি নেই! একদিকে নিজের অসুস্থ শরীর, অন্যদিকে দরিদ্র কৃষকদের চাপ; সবমিলিয়ে আমি জর্জরিত।” এমনই ‘হতাশা’ থেকে ২০২৪ সালের শুরুতে নিজেকে ‘পরাজিত’ আখ্যা দিয়ে, আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন বলে জানান পাথরা’র পাঠান! বৃহস্পতিবার তিনি এও বলেন, “আমার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। কিডনির রক্ত চলাচলের শিরাতে ৮২ শতাংশ ব্লক। মাইক্রো সার্জারি করতে লক্ষাধিক টাকা লাগবে। এত টাকাও নেই যে অস্ত্রোপচার করাবো। মনে হচ্ছে মৃত্যু দুয়ারে! কিন্তু, আমি চলে যাওয়ার আগে ওঁরা যদি টাকা না পান, মরেও শান্তি পাবোনা। তাই, শেষবারের জন্য এই চিঠি লিখলাম।”