দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ আগস্ট: মেদিনীপুর স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পীঠস্থান। দেড় শতবর্ষ প্রাচীন মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল বা মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার (Midnapore Correctional Home)-ও বহন করছে স্বাধীনতার ইতিহাস। শুধুমাত্র সঙ্কীর্ণ ‘রাজনীতি’র প্রভাবে সেই ‘ইতিহাস’ যেন লজ্জিত হল শনিবার (১৩ আগস্ট), ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ এর মাহেন্দ্রক্ষণে। প্রসঙ্গত, দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর একেবারে অন্তিম পর্যায়ে তথা ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ১১ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশজুড়ে নেওয়া হয়েছে ‘হর ঘর তেরঙ্গা’ কর্মসূচি। তার-ই অঙ্গ হিসেবে ভারতের ৭৫-টি ‘বন্দীশালা’ বা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং যৌথ অনুষ্ঠানের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে। তার মধ্যেই অন্যতম এই মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার বা সেন্ট্রাল জেল। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের নির্দেশে শনিবার (১৩ আগস্ট) সেই কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে ‘হতাশ’ হতে হল কেন্দ্রের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডঃ সুভাষ সরকার-কে! কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা তো দূরের কথা, রাজ্যের তরফে পতাকা উত্তোলন করার অনুমতিও দেওয়া হয়নি জেল কর্তৃপক্ষ-কে। ‘অসহায়’ জেল সুপার ‘বিনীতভাবে’ তা জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-কে! এরপরই, স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারবর্গ, আইআইটি খড়্গপুরের অধ্যাপক ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ফিরে আসেন ডঃ সুভাষ সরকার।

thebengalpost.net
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-কে বুঝিয়ে বলছেন জেল সুপার:

উল্লেখ্য যে, কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রককে গত ৬ আগস্ট এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানানোর পরই, দু’দুবার শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছিল রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে। এমনটাই জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডঃ সুভাষ সরকার। তিনি নিজেও মুখ্যসচিবের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন। তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের তরফে জেল কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে ‘বিন্দুমাত্র’ কিছু জানানো হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর। এদিন, সকাল ১০ টা নাগাদ কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পৌঁছে যান মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন, পেডি হত্যার ‘নায়ক’ বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্তের ছেলে রঞ্জিত দাশগুপ্ত, বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগো’র নাতি রাজীব কানুনগো, বার্জ হত্যার অন্যতম ‘নায়ক’ বিপ্লবী মৃগেন্দ্রনাথ দত্তের ভাইপো রুদ্রদেব দত্ত প্রমুখ। ছিলেন, আইআইটি খড়্গপুরের অধ্যাপক ও পড়ুয়ারা। পৌঁছনোর পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-কে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া হয়, জেল পুলিশের তরফে। তবে, তারপরই জেল সুপারিনটেনডেন্ট সুদীপ বসু মন্ত্রীমশাইকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁর ‘অসহায়তার’ কথা বুঝিয়ে বলেন! এরপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্ত্রী সুভাষ সরকার বলেন, “ওনার কোনও দোষ‌ নেই। তবে, বারবার চিঠি পাঠানো সত্ত্বেও দেশের স্বাধীনতা নিয়ে রাজ্যের তরফে যে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করা হলো তা কখনোই কাম্য নয়। এটা রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ছিলোনা, কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ অনুষ্ঠান বা সরকারি অনুষ্ঠান ছিলো। তা সত্ত্বেও দেশের স্বাধীনতার গর্বের মুহূর্তে, রাজ্য সরকারের এই নির্লিপ্ততা বা অবমাননা, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক!” বিষয়টি নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বত্র! রাজনৈতিক কারণে, মেদিনীপুরের ঐতিহাসিক মাটিকে ‘কলঙ্কিত’ করা হলো বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। যদিও, রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি জানিয়েছেন, “১৫ আগস্ট যথারীতি পতাকা উত্তোলন করা হবে। এদিনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি না!”

thebengalpost.net
তার আগে অবশ্য ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার-কে :

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):