দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২২ আগস্ট: গত বছর (২০২৩) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ‘প্রথম‘ ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছিল জেলা শহর মেদিনীপুরের ১৪নং ওয়ার্ডেই। ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ১৪নং ওয়ার্ডের চিড়িমারসাই এলাকার সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা ঊষা রানি দাসের মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। শহরেরই একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। চলতি মরশুমে জেলায় ‘দ্বিতীয়’ (৮ আগস্ট ঘাটালের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে) এবং শহরে ‘প্রথম’ ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যু হল মেদিনীপুর পৌরসভার সেই ১৪নং ওয়ার্ডেই! বৃহস্পতিবার ভোর রাতে (রাত্রি আড়াইটা নাগাদ) ১৪নং ওয়ার্ডের মিঞাবাজার সংলগ্ন তালমাল বস্তির বাসিন্দা, বছর ১২-র এক নাবালকের মৃত্যু হল পূর্ব মেদিনীপুরের মেছোগ্রামে অবস্থিত বড়মা মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়!
প্রচন্ড জ্বরের কারণে ওমর খান (১২) নামে ওই নাবালককে গত ১৯ আগস্ট (সোমবার) বড়মা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বলে পরিবার ও স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। নাবালক প্রথমে টাইফয়েড ও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছিল বলেও জানা যায়। পরে বড়মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ডেঙ্গু রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ (Dengue Positive) আসে। বৃহস্পতিবার ভোররাতে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ‘না ফেরার দেশে’ পাড়ি দেয় ওই নাবালক! ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলা শহর মেদিনীপুরে। এক্ষেত্রে, পৌর পরিষেবার প্রতিও ক্ষুব্ধ একাংশ বাসিন্দা। নিয়মিতভাবে আবর্জনা পরিষ্কার না করা থেকে, পানাতে ভর্তি পুকুর বা জলাশয়গুলি পরিষ্কার না হওয়ার জন্যও ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৃত নাবালকের মা আরজানা বিবি বলেন, গত ১৭ আগস্ট শনিবার থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল তাঁর ছেলে। প্রথমে মেদনীপুর মেডিক্যাল কলেজ এবং পরে মেদিনীপুর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার পরও জ্বর না কমায়, সোমবার অর্থাৎ ১৯ আগস্ট তাঁরা পূর্ব মেদিনীপুরের মেছোগ্রামে অবস্থিত বড়মা হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই ডেঙ্গু ধরা পড়ে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসায় সাড়া দেওয়ার পরেও, বৃহস্পতিবার রাত্রি আড়াইটা নাগাদ হঠাৎ করেই মৃত্যু হয় ওমর খানের! ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অর্পিতা রায় নায়েক বলেন, “খুবই মর্মান্তিক ঘটনা! তবে, ওঁরা এই ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা নন। চন্দনবস্তি এলাকার বাসিন্দা। ওঁদের হাউস ফর অল প্রকল্পে বাড়ি হচ্ছে, তাই এই ওয়ার্ডে ভাড়া আছেন। আর, এখানে ছেলেটির ডেঙ্গু ধরা পড়েনি। পূর্ব মেদিনীপুরে নিয়ে যাওয়ার পর ধরা পড়েছে। শুধু তাই নয়, ডেঙ্গুর আগে ছেলেটির টাইফয়েড, জন্ডিস ও নিয়োমনিয়া ধরা পড়ে। ফলে আরও আগে থেকে ঠিকঠাক চিকিৎসা হলে হয়তো ভাল হতো!” অপরদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা! আমরাও আজ সকালে জানতে পেরেছি। জানিনা, ওঁরা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি না করে, পূর্ব মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কেন ভর্তি করেছিলেন। এই সময়ে আমরা বারবার বলছি, জ্বর হলে সরকারি প্রোটোকল মেনে চিকিৎসা করানোর জন্য।” তিনি এও জানান, ওই এলাকায় স্বাস্থ্য দফতরের টিম যাবে। একইসঙ্গে, এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে শহরবাসী এবং পৌর প্রশাসনকে সচেতন হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।