দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ মার্চ: গত ১০ মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১০ হাজারের বেশি নাবালিকার বিবাহ (বাল্যবিবাহ) সম্পন্ন হয়েছে। ৯ হাজারের বেশি নাবালিকা ‘গর্ভধারণ’ (টিনেজ প্রেগনেন্সি) করেছে। এর মধ্যে, ২০০ জনের বেশি নাবালিকা গর্ভধারণ করেছে বা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে ১৫ বছরেরও কম বয়সে। এই সংখ্যাটা অবশ্য ২০২৩-‘২৪ অর্থবর্ষে ছিল ১১৩০! ১৫ বছরের কম বয়সে এরা গর্ভধারণ করেছিল। স্বভাবতই নারী শিক্ষার অগ্রদূত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মেদিনীপুরেও বাল্যবিবাহ আর নাবালিকাদের গর্ভধারণের চিত্রটা যে এখনও আবধি আতঙ্কিত হওয়ার মতোই, তা বলার অপেক্ষা রাখে না! কপালে তাই দুশ্চিন্তার ছায়া জেলা প্রশাসনের অন্দরেও।

তবে, ‘বাল্যবিবাহ-মুক্ত’ মেদিনীপুর উপহার দিতে তৎপর পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদেরী। জেলা জুড়ে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করার সাথে সাথেই এবার তিনি আপামর মেদিনীপুরবাসীকেও এই অভিযানে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরে নিজের কার্যালয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে জেলাশাসক জানিয়েছেন, “বাল্যবিবাহ রুখে দিতে পারেন যে কেউ। জেলার যেকোনো প্রান্তে বাল্যবিবাহের খবর থাকলেই ১০৯৮ বা ১১২-তে ফোন করুন। আমরা জেলার ৩০৪টি জায়গাতে তিনটি ভাষায় ১০৯৮ এবং ১১২ নম্বর লিখে হোর্ডিং দিচ্ছি। জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়, বিডিও অফিস, থানা, হাসপাতালে থাকবে নম্বরযুক্ত এই হোর্ডিং।” বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দিতে লেখা থাকবে এই নম্বরগুলি (১০৯৮ এবং ১১২)। ১০৯৮ নম্বরে ফোন করলে তা পৌঁছে যাবে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোলরুমে এবং ১১২-তে ফোন করলে তা জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে পৌঁছবে। সেখান থেকেই সংশ্লিষ্ট বিডিও অফিস এবং থানাতে খবর দেওয়া হবে। দ্রুত রুখে দেওয়া সম্ভব হবে নাবালিকাদের বিবাহ। জেলাশাসকের সংযোজন, “কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, মেধাশ্রী ঐক্যশ্রী-র মতো প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও; বাল্যবিবাহ সমাজে একটা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একে আমাদের রুখে দিতেই হবে।”
বাল্যবিবাহের হার জেলায় শূন্যতে নামিয়ে আনাই তাঁর লক্ষ্য বলেও জানিয়েছেন এদিন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর ১০ হাজারের বেশি নাবালিকার বিবাহ হয়েছে বা বাল্যবিবাহ হয়েছে। প্রশাসন রুখে দিতে পেরেছে ১৪৪ জন ‘কন্যাশ্রী’র বাল্যবিবাহ। এই সংখ্যাটা তার আগের বছর (২০২৩-‘২৪) ছিল যথাক্রমে ১২ হাজার ও ৮৮। অপরদিকে, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ১০ মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৯১৩৯ জন নাবালিকা গর্ভধারণ করেছে। এর মধ্যে, ২০৩ জনের বয়স ১৫ বছরের থেকেও কম! ৮৯৩৬ জনের বয়স ১৫ থেকে ১৯’র মধ্যে। শতাংশের বিচারে এই চিত্রটা ২০২৩-‘২৪ অর্থবর্ষের তুলনায় সামান্য ভালো হলেও, খুব একটা আশাব্যঞ্জক যে নয়, তা মানছেন স্বয়ং জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদেরী থেকে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গীও। এজন্য, জেলাশাসকের একাধিক পদক্ষেপের সাথে সাথেই বাল্যবিবাহ রুখতে একটি ‘থিম সং’ রচনা করে, নিজেই তাতে কন্ঠ দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক। ‘আমরা করব জয়’ (উই শেল ওভারকাম)-র সুরে মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক গেয়েছেন, “বাল্যবিবাহ করবো দূর, সে দিন নয় দূর, বাল্যবিবাহ করব দূর, নিশ্চয়।”