দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ২২ ফেব্রুয়ারি: তিনি অখন্ড মেদিনীপুরের (গোপীবল্লভপুরের) ‘ভূমিপুত্র’। ২০১৬ সালে প্রায় ‘অপরাজেয়’ জ্ঞান সিং সোহনপাল (চাচাজি)-কে ‘পরাজিত’ করে তিনি খড়্গপুর (সদর) বিধানসভা থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হন। ২০১৯ সালে মেদিনীপুর লোকসভা আসনের সাংসদ হন ডঃ মানস রঞ্জন ভুঁইয়া-কে প্রায় ৮১ হাজার ভোটে ‘পরাজিত’ করে। তার পর থেকেই মেদিনীপুরের রাজনীতি আর দিলীপ ঘোষ যেন ‘সমার্থক‘ হয়ে উঠেছেন! নিজের ফেসবুক কভার ফটোতেও (Cover Photo) ‘মেদিনীপুর’ (Medinipur) আর ‘দিলীপ’ (Dilip) যেন মিলেমিশে একাকার! একপাশে ওপরে মা দুর্গা। আরেকপাশে বিজেপি-র সবথেকে সফল রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। আর মাঝখানে লেখা ‘MEDILIPUR‘ (মেদিলীপুর)। ইংরেজি মেদিনীপুর (Medinipur) শব্দে শুধুমাত্র ‘N’ অক্ষরের জায়গায় ‘L’ বসিয়ে, নিজের প্রিয় লোকসভা কেন্দ্রের (Medinipur) মধ্যেই নিজের নাম (DILIP)-কে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ! তবে, শীর্ষ নেতৃত্বের নাছোড় মনোভাবে দিলীপের সেই ‘আনন্দ’ বোধহয় অচিরেই বিষাদ-গাথায় পরিণত হতে চলেছে!

thebengalpost.net
প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ (ছবি- সংগৃহীত):

সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, মেদিনীপুর লোকসভা আসন হয়তো ছাড়তে হচ্ছে বিজেপি-র বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষ-কে। তাঁর পরিবর্তে প্রার্থী হতে চলেছেন এই জেলারই (পশ্চিম মেদিনীপুর) প্রাক্তন পুলিশ সুপার তথা প্রাক্তন IPS ভারতী ঘোষ। ২০১৯ সালে ঘাটাল লোকসভা আসনে তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ দেব ওরফে দীপক অধিকারী-কে জোর টক্কর দিয়েও পরাজিত হয়েছিলেন ভারতী। আবার, ২০২১ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা বিধানসভা আসনেও তৃণমূল প্রার্থী তথা আরেক প্রাক্তন IPS হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে ‘পরাজয়’ স্বীকার করতে হয়েছিলেন একদা মমতা-ঘনিষ্ঠ এই দুঁদে পুলিশ অফিসারকে। এবার, মেদিনীপুর লোকসভা আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘জনপ্রিয়’ ও ‘পরীক্ষিত’ মুখ জুন মালিয়ার বিরুদ্ধে ‘অপরাজেয়’ দিলীপের তুলনায় সেই ভারতীকেই এখনও পর্যন্ত এগিয়ে রেখেছে বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব। এমনটাই খবর বিভিন্ন সর্বভারতীয় সাংসদমাধ্যম সূত্রে। এদিকে, শনিবার ফের দিল্লিতে ডাক পড়েছে সুকান্ত-শুভেন্দু’র। তাঁদের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনার পরই হয়তো বাংলার অবশিষ্ট ২৩টি লোকসভা আসনের প্রার্থী ঘোষণা করবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব

thebengalpost.net
দিলীপ ঘোষের ফেসবুক কভার ফটো:

শেষ পর্যন্ত ভারতী ঘোষ-ই যদি মেদিনীপুর লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী হন, তবে দিলীপ ঘোষ-কে পাঠানো হতে পারে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এস.এস আলুয়ালিয়া-র এবার টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে! তাঁর আসনেই পাঠানো হতে পারে বিজেপি-র পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ-কে। অন্যদিকে, সদ্য ইস্তফা দেওয়া আইপিএস অফিসার দেবাশীষ ধর প্রার্থী হতে পারেন বারাসত অথবা বীরভূম লোকসভা আসনে। যদিও, বীরভূমের ক্ষেত্রে লড়াইয়ে আছেন প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মন্ডলও। এছাড়াও, ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে প্রার্থী হতে চলেছেন সদ্য ইস্তফা দেওয়া ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের তরুণ চিকিৎসক প্রণত টুডু। এদিকে, মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা মেদিনীপুর লোকসভা আসনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জুন মালিয়া তাঁর প্রচারে রীতিমত ঝড় তুলে দিয়েছেন! সমস্ত ‘দ্বন্দ্ব’ ভুলে জুনকে জেতাতে এককাট্টা জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা থেকে যুব সভাপতি নির্মাল্য চক্রবর্তীরা! জুনের নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যানও হয়েছেন জেলা সভাপতি সুজয়। সুজয় বলেন, “গতবার আমরা বিজেপি-র পয়সা আর মিথ্যাচারের কাছে পরাজিত হয়েছিলাম। শুধু তাই নয়, মানুষের মনে ধর্মের বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছিল ওরা। মেদিনীপুরের মানুষ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তাই ‘দাম্ভিক’ দিলীপ ঘোষ-ই প্রার্থী হোক বা ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ পুলিশ সুপার;বিপুল ভোটে জয়ী হবেন আমাদের প্রার্থী জুন মালিয়া-ই।” এদিকে, শেষ আশায় দিলীপ অনুগামীরা ইতিমধ্যে ফেসবুকে লেখা শুরু করে দিয়েছেন, “সেই দিনগুলো কি ভুলে গেলেন? যেদিন আমাদের কর্মীদের নামেই বেছে বেছে মিথ্যে মামলা দিয়েছিলেন?” সচেতন মেদিনীপুরবাসী তাই বলছেন, “শুধু জুন নয়, ভারতী-কে হয়তো লড়তে হবে এঁদের বিরুদ্ধেও!”

thebengalpost.net
চিকিৎসক প্রণত টুডু (ছবি- সংগৃহীত):