দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ মে: গত ৩ বছর ধরে তিনি মেদিনীপুরের বিধায়ক। তাঁর উপর ‘ভরসা’ করে নেত্রী তাঁকেই প্রার্থী করেছেন মেদিনীপুর লোকসভায়। ‘দিদি’ (পড়ুন, তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর)-র প্রিয় সেই জুন মালিয়া-ই লোকসভা নির্বাচনের মাত্র ১৭ দিন আগে ‘বিধায়ক’ হিসেবে নিজের উন্নয়নের ‘খতিয়ান’ তুলে ধরে রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করেছেন বুধবার (৮ মে) দুপুরে! কার্ডের উপরে লেখা- ‘তৃণমূলের রিপোর্ট কার্ড।’ আর নীচে ‘মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে জুন মালিয়ার উন্নয়নমূলক কাজ।’ গত ৩ বছর ধরে মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তাঁর তহবিল (বিধায়ক তহবিল) থেকে, তাঁর উদ্যোগে বা অনুপ্রেরণায় এবং তাঁর ভাবনা ও পরিকল্পনায় যে সমস্ত কাজ হয়েছে; সেই সবই স্থান পেয়েছে তাঁর রিপোর্ট কার্ডে!

thebengalpost.net
রিপোর্ট কার্ড হাতে বিধায়ক ও তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া:

আর এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশিত হওয়ার পরই বিজেপি-র তরফে ধেয়ে এসেছে চরম কটাক্ষ! জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাস বুধবার রাতে অভিযোগ করেন, “এই সরকারের আমলেই প্রথম রাজ্যবাসী ‘ভুয়ো’ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ থেকে ‘ভুয়ো’ সরকারি কর্মচারী নিয়োগ সম্পর্কে জেনেছে। এই সরকারের আমলেই রাজ্যে প্রথম মন্ত্রী-আমলা-বিধায়ক সহ একাধিক দপ্তর জেলে গেছে! এই সরকারেরই মুখ্যমন্ত্রী শিখিয়েছেন, কিভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে রাজ্য সরকারের বলে চালাতে হয়। আর সেই সরকারের একজন বিধায়ক এবার দেখালেন, কিভাবে রাজ্য সরকারের কাজ, পৌরসভার কাজ, MKDA-র কাজ, গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির কাজকে ‘নিজের’ বলে চালাতে হয়! এ আসলে বিধায়কের ‘ভুয়ো’ রিপোর্ট কার্ড!” অরূপের আরও অভিযোগ, “এক তো উনি নির্বাচনের মাত্র ১৫-১৬ দিন আগে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করেছেন, সেটো আবার ভুয়ো! এতদিন কি ঘুমাচ্ছিলেন নাকি কাটমানি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন? গত ৩ বছরে উনি বিধায়ক হিসেবে ৬০ লক্ষ টাকা করে মোট ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা পেয়েছেন এলাকার উন্নয়ন করার জন্য। কিন্তু, উনি হিসেব দিয়েছেন প্রায় ১২-১৪ কোটি টাকার কাজের! সেই তালিকায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজ্য সরকারের PWD দপ্তরের উদ্যোগ ধেড়ুয়া-লালগড় রাজ্য সড়ক সংস্কারের কাজ যেমন আছে; তেমনই মেদিনীপুর পৌরসভার উদ্যোগে গান্ধীঘাটের সৌন্দর্যায়নের কাজও আছে! এছাড়াও, MKDA, গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক রাস্তা, পার্ক প্রভৃতি কাজের খতিয়ানও তুলে ধরেছেন উনি। এক কাজ করতে পারতেন তো, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন কাজকেও নিজের বলে চালাতে পারতেন!”

thebengalpost.net
রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ অনুষ্ঠানে জুনের সঙ্গে প্রদ্যোৎ ঘোষ, নেপাল সিংহ, সন্দীপ সিংহ প্রমুখ:

বিজেপি মুখপাত্রের এই আক্রমণের জবাব অবশ্য দিয়েছেন প্রার্থী জুন মালিয়া-র ইলেকশন এজেন্ট তথা রাজ্য যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ সিংহ। তিনি বলেছেন, “মেদিনীপুর শহর, মেদিনীপুর সদর ব্লক, শালবনী ব্লক সহ তাঁর বিধানসভা এলাকায় গত ৩ বছরে বিধায়ক তহবিল থেকে যে সমস্ত কাজ হয়েছে তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন রাস্তায় বাতিস্তম্ভ থেকে একাধিক স্কুলের ভবন, যাত্রী প্রতীক্ষালয়, পার্ক বা উদ্যানের সংস্কার, নিকাশিনালা এবং সেতু (শালবনী ব্লকের বাঁকিবাধ অঞ্চলের জয়নারায়ণপুরে) তাঁর তহবিল থেকে হয়েছে। আবার, তাঁর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় গত ৩ বছরে বিভিন্ন রাস্তা, সেতু (শালবনী ও সদর ব্লকের মধ্যে সাবড়া ব্রিজ), কমিউনিটি হল, সৌন্দর্যায়নের বিভিন্ন কাজ থেকে ক্রীড়া (জার্মান সংস্থার CSR তহবিল থেকে শালবনীতে ফুটবল অ্যাকাডেমি) ও শিল্পদ্যোগের (শালবনীতে সামুদ্রিক প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র) যেমস্ত কাজ হয়েছে তা কি বিধায়ক হিসেবে ওঁর কৃতিত্ব বা সাফল্য নয়? একদিকে যেমন এই তিন বছরে উনি রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বিভিন্ন কাজ করিয়েছেন; ঠিক তেমনই পৌরসভা, এমকেডি মএ বা জেলা পরিষদের কাছেও নিজের বিধানসভা এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব রেখেছেন এবং পরামর্শ দান করেছেন। সেগুলিকে ‘বিধায়ক তহবিলের’ কাজ বলে উল্লেখ করা হয়নি! বিজেপি নেতারা ভালো করে পড়তে শিখুন। আর, ওঁদের দিলীপ ঘোষ যখন নিজের রিপোর্ট কার্ডে রেল আর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বা ব্রিজের কাজকে নিজের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেন; তখন এই জ্ঞান কোথায় থাকে?” যদিও, সন্দীপের পাল্টা কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিজেপি মুখপাত্র। তাঁর দাবি, “কোনটা কোন তহবিলের কাজ আর বিধায়কের রিপোর্ট কার্ড কিভাবে হয়; সেটা আগে বিধায়কের ইলেকশন এজেন্টকে জানতে বলুন! আমাদের সাংসদ দিলীপ দা ১ বছর আগেই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করে দিয়েছেন। সেখানে এরকম মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য কোথাও নেই!”

thebengalpost.net
বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের সঙ্গে জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস :