দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ অক্টোবর: পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের সরকারি হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা এজেন্সিকে ‘বেআইনি’ ভাবে কাজের বরাত (টেন্ডার) দেওয়ার অভিযোগ। সেই টেন্ডার বা বরাত বাতিল করল কলকাতা হাইকোর্ট। ওই এজেন্সির নিরাপত্তা রক্ষীদের হাসপাতাল থেকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। ‘অবৈধ’ বা ‘বেআইনি’ ভাবে টেন্ডার দেওয়ার অভিযোগ ছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজও। চলতি বছরের (২০২৪) সেপ্টেম্বর মাসেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ৭৪ জন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করে এক্স-সার্ভিসম্যান রিসেটেলমেন্ট নামে একটি সংস্থা। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে মঙ্গলবার কাজে যোগ দিতে আসেন বেশ কয়েকজন। কিন্তু, হাইকোর্টের নির্দেশ আসতেই তাঁদের আর কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ ফিরে যান তাঁরা!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের মামলাকারীর বক্তব্য ছিল, টেন্ডার অনুযায়ী মেদিনীপুরের হাসপাতালগুলির ওই কাজের দায়িত্ব যাওয়ার কথা ‘এমএম সিকিউরিটিস’-এর হাতে। তারাই প্রকৃত প্রাপক। কিন্তু, তাদের কাজের বরাত দেওয়া হয়নি। গত ২১ অক্টোবর একটি নোটিস দিয়ে বাদ দেওয়া হয় ওই সংস্থাটিকে। আপাতত সেই নোটিসও স্থগিত করেছে আদালত। কেন এমন একটি নোটিস দেওয়া হয়েছিল, আদালতে তা হলফনামা আকারে জানাতে হবে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। একই সঙ্গে, যে সংস্থা বরাত পেয়েছিল, কী ভাবে, কোন পদ্ধতিতে, কিসের ভিত্তিতে এবং কার সুপারিশে তাদের ওই বরাত দেওয়া হল, তা-ও আদালত জানতে চেয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন হলফনামা আদালতে জমা দিতে হবে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী দেড় লক্ষ টাকার বেশি যদি কোনও টেন্ডার দেওয়া হয়, সেখানে ই-টেন্ডার করতে হবে। অভিযোগ, ২০১৫ সাল থেকে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে সেই আইন মানা হয়নি। এমনকী ২০১৭ সাল থেকে পরপর কয়েক বছর ই-অকশন করে চূড়ান্ত অর্ডার বেরনোর মুখেই তা স্থগিত করে দিয়ে ফের পুরনো লোককেই ওই টেন্ডার দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তাই আপাতত সেই ‘অবৈধ প্রক্রিয়া’ বাতিল করে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শম্পা পাল। এনিয়ে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, গোটা বিষয়টি ডিরেক্টরেট অব মেডিকেল এডুকেশনের আওতাধীন হওয়ার কারণে, এই টেন্ডার সম্বন্ধে তিনি কিছুই জানেন না! হাইকোর্টের নির্দেশ হাতে পাওয়ার পরই বিষয়টি নিয়ে তিনি বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, মঙ্গলবারই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদলের কাছে মেডিক্যাল কলেজে চলা পরিকাঠামোগত উন্নয়ন তথা নিরাপত্তা বৃদ্ধির কাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। উল্লেখ্য যে, জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবির ভিত্তিতে এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করছে স্বাস্থ্য দপ্তর। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের রেস্টরুম, বাথরুম থেকে রোগীদের ভিসিট রুম, সিসিটিভি ক্যামেরা, এসি, পানীয় জলের সুব্যাবস্থা- প্রভৃতির কাজ শুরু হয়েছে। সেই সমস্ত কাজের অগ্রগতি কতদূর, তা খতিয়ে দেখতেই মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকারিক নেহা দাসের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধিদল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শন করেন। যে সমস্ত কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি, তা অতি দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশও দেন পরিদর্শনকারী দলের সদস্যরা। অন্যদিকে, রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকারিকদের সামনে পেয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চলা বিভিন্ন কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁদের দাবি মতো কাজ হচ্ছেনা বলেও অভিযোগ জুনিয়র চিকিৎসকদের। যদিও, এ নিয়ে কোনও পক্ষই সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি।