দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ নভেম্বর: জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের ভাদুতলার এক যুবকের মহানুভবতায় ৮ বছর পর বাড়ি ফিরলেন উত্তরপ্রদেশের এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক! প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২ আগস্ট, সাত সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় বছর ৩০’র শ্যামবলী। ৮ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে ঘুরতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় পৌঁছে যায় সে। মাস তিনেক আগে তাকে মেদিনীপুর শহর থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ভাদুতলা এলাকায় ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে দেখেন স্থানীয় যুবক তথা পেশায় একটি নেশা নিরাময় কেন্দ্রের কর্ণধার দেবাশীষ দাস। পরনে নোংরা পোশাক-আশাক, একমুখ দাড়ি, উসকো-খুসকো চুল! তা সত্ত্বেও এড়িয়ে না গিয়ে, ভবঘুরে ওই যুবকের কাছে গিয়ে নাম-ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন দেবাশীষ। কিন্তু, কিছুই বলতে পারেনা সে। দেবাশীষ বুঝতে পারেন, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে ওই যুবক।

thebengalpost.net
তিন মাস আগে:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

এরপর, শালবনী থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন দেবাশীষ। পুলিশের অনুমতি নিয়ে ওই ভবঘুরে যুবককে নিজের নেশা নিরাময় কেন্দ্র বা পুনর্বাসন কেন্দ্র বা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে (Rehabilitation Centre) নিয়ে যান ভাদুতলার বাসিন্দা, বছর ৪০-র দেবাশীষ। এরপর, মানসিক রোগের চিকিৎসককে দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের প্রয়োগের সাথে সাথেই, সেবা-শুশ্রূষা শুরু করেন দেবাশীষ। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে ওই যুবক। নিজের নাম, বাড়ির ঠিকানা বলতে পারে সে। তারপরই গুগল থেকে সংশ্লিষ্ট থানার ফোন নম্বর জোগাড় করে শ্যামবলীর বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন দেবাশীষ। রবিবার দুপুরে উত্তরপ্রদেশের চন্দৌলী জেলার সকলডিহা থানার সলেমপুর গ্রাম থেকে শ্যামবলীর দাদা সহ পরিবারের লোকজন এসে তাকে বাড়ি নিয়ে যান।

thebengalpost.net
তিন মাস পর:

thebengalpost.net
Advertisement (বিজ্ঞাপন):

রীতিমত সুস্থ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অবস্থায় বছর ৩৮-র শ্যামবলীকে দেখে এদিন বোঝার উপায় ছিলোনা মাত্র তিন মাস আগেও মেদিনীপুর শহর কিংবা ভাদুতলা সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পাগলের মত ঘুরে বেড়িয়েছে সে! একটা সময় ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে খেয়ে আর রাস্তার ধারে কোনও দোকানের উঠোন বা ATM কাউন্টারের সামনে শুয়েই যে সে রাত কাটিয়েছে; তা বলাই বাহুল্য। জঙ্গলমহলের মানবদরদী যুবক দেবাশীষ যদি মাস তিনেক আগে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে না যেতেন, বাড়ি ফেরা তো দূরের কথা; হয়তো কখনও সুস্থই হয়ে উঠত না সে! এমনটাই বলছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শ্যামবলীর পরিবারের লোকজনেরা। রবিবার দুপুরে শ্যামবলীকে মেদিনীপুর স্টেশনে ছেড়ে বাড়ি ফেরার পথে দেবাশীষ বলেন, “নেশা নিরাময় কেন্দ্র বা পুনর্বাসন কেন্দ্র চালানোর সুবাদে মানুষের নানা কষ্ট, সমস্যা, উপলব্ধি, অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করতে হয়। রাস্তার পাশের ওই যুবককে দেখে তাই মায়া হয়। সুস্থ করে তাকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার একটা চ্যালেঞ্জ নিই! প্রথমেই নিয়ে গিয়ে ওর চুল, দাড়ি কেটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তুলি। তারপর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধপত্র খাওয়ানোর পর ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করে সে। নিজের নাম, ঠিকানা বলতে পারে। এরপর, গুগল থেকে ওর থানার ফোন নম্বর জোগাড় করে কথা বলি। পুলিশ আধিকারিকরা একটু সময় নিয়ে জানান, ৮ বছর আগে (২০১৬ সালে) এই নামে এক যুবক নিখোঁজ হয়েছিলেন। এরপরই পরিবারের সাথে আমার যোগাযোগ করিয়ে দেন ওঁরা। আজ শ্যামবলীর দাদা ও ভাইপো মেদিনীপুরে এসে ওকে বাড়ি নিয়ে যান। খুব ভালো লাগছে, ওকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরাতে পেরে!” ৮ বছর পর ভাইকে কাছে পেয়ে আপ্লুত শ্যামবলীর দাদাও। দেবাশীষ-কে কি বলে ধন্যবাদ জানাবেন, ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। শুধু চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে জল! তা দেখে দেবাশীষের চোখও ছলছল করে ওঠে!

thebengalpost.net
পরিবারের সাথে মেদিনীপুর স্টেশনে:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):