মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ মার্চ: ভোট উৎসবে লড়াই করতে নেমেছিলেন মহা উৎসাহে! সবাই অবশ্য জেতার আশা না করলেও, প্রত্যেকেই ভেবেছিলেন একটা সম্মানজনক ভোট অবশ্যই তাঁরা পাবেন। ফলাফল শেষে দেখা গেল, অনেকেই হয়তো তাঁদের পরিবারের সদস্য কিংবা একান্ত আপনজনদের ভোটটাও পাননি! ঐতিহাসিক মেদিনীপুর পৌরসভায় এবার তেমন ঘটনাই ঘটেছে। এই যেমন, শহরের ১৫ নং ওয়ার্ড। ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থী আনোয়ার আলি খান ভোট পেয়েছেন মাত্র ১১ টি। ওই ওয়ার্ডে মোট ভোট পড়েছিল ২৯৬২-টি। সর্বাধিক ১৮৩৫-টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাহুল বিষই। দ্বিতীয় স্থানে কংগ্রেসের শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়। প্রাপ্ত ভোট ৯৬১। অপর দুই প্রার্থীরই জামানত জব্দ হয়েছে। তবে, লজ্জাজনক অবস্থা আনোয়ারের! অন্যদিকে, এই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী অরূপ দাসেরও জামানত জব্দ হয়েছে প্রদত্ত ভোটের ৬ শতাংশ না পাওয়ায়। অরূপ ভোট পেয়েছেন ১৫৫-টি। অপরদিকে, ২১ নং ওয়ার্ডের ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থী তারক মন্ডলের অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ! ৩৮১৯-টি ভোটের মধ্যে তারক পেয়েছেন মাত্র ১৮ ভোট। ওই ওয়ার্ডে রেকর্ড ৮ জন প্রার্থী ছিলেন। তারক সহ ৫ জনের জামানত জব্দ হয়েছে। সেই তালিকায় আছেন, বিজেপি প্রার্থী বিশ্বনাথ পট্টনায়েকও। তিনি ভোট পেয়েছেন ৯৯-টি। বাকি নির্দলরা কেউ ৫৭, কেউ ৬১ – টি ভোট পেয়েছেন। ওই ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের মহঃ সাইফুল। এসইউসিআই প্রার্থীদের সকলেরই জামানত জব্দ হয়েছে, যথাক্রমে- ১, ৫ ও ৯ নং ওয়ার্ডে। সদ্য তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া ৮ নং ওয়ার্ডের তরুণ কংগ্রেস প্রার্থী সুমন মুখার্জি’রও জামানত জব্দ হয়েছে। প্রদত্ত ৫৪২৫ ভোটের মাত্র ৯৮-টি পেয়েছেন সুমন। ১২ নং ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন ভোট পেয়েছেন মাত্র ২৮-টি!
সবমিলিয়ে ১০৯ জন প্রার্থীর মধ্যে মেদিনীপুর পৌরসভার ৩৬ জন প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছে এবার। শতাংশের বিচারে ৩৩ শতাংশেরও বেশি। তাঁরা প্রদত্ত ভোটের ৬ শতাংশও পাননি! এই প্রার্থীরা হলেন যথাক্রমে-
১ নং ওয়ার্ড: কংগ্রেস প্রার্থী বেনজির হোসেন, এস ইউ সি আই প্রার্থী অনিন্দিতা জানা।
২ নং ওয়ার্ড : কংগ্রেস প্রার্থী ববিতা দে মিশ্র
৫ নং ওয়ার্ড : কংগ্রেস প্রার্থী শচীন্দ্রনাথ মিশ্র, এস ইউ সি আই শীর্ষেন্দু বিকাশ শাসমল
৬ নং ওয়ার্ড: নির্দল প্রার্থী দেবব্রত চক্রবর্তী
৮ নং ওয়ার্ড : কংগ্রেস প্রার্থী সুমন মুখার্জি
৯ নং ওয়ার্ড : বিজেপি প্রার্থী অতনু কুমার দাস এবং এস ইউ সি আই প্রার্থী ঝর্ণা জানা
১১ নং ওয়ার্ড : সিপিআইএম প্রার্থী দীপ্তি সিং মিদ্যা এবং নির্দল প্রার্থী কাবেরী মাঝি
১২ নং ওয়ার্ড : কংগ্রেস প্রার্থী মি সাদ্দাম হোসেন এবং সিপিআইএম প্রার্থী পাপিয়া সিং আচার্য
১৩ নং ওয়ার্ড : কংগ্রেস প্রার্থী দিলসাত হোসেন এবং বিজেপি প্রার্থী কামাল হোসেন খান
১৫ নং ওয়ার্ড : বিজেপি প্রার্থী অরূপ দাস এবং ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থী আনোয়ার আলি খান
১৬ নং ওয়ার্ড : কংগ্রেস প্রার্থী দেবাশীষ চৌধুরী এবং বিজেপি প্রার্থী রাজকুমার মন্ডল
১৭ নং ওয়ার্ড : সিপিআইএম প্রার্থী রোজিনা বিবি
১৮ নং ওয়ার্ড : নির্দল প্রার্থী কাবেরী মন্ডল সামন্ত এবং সিপিআইএম প্রার্থী খোকন চন্দ্র চাউলিয়া
১৯ নং ওয়ার্ড : সিপিআইএম প্রার্থী বিশ্বজিৎ সাহু
২০ নং ওয়ার্ড : নির্দল প্রার্থী রীতা জানা এবং নির্দল প্রার্থী সোমা মাইতি
২১ নং ওয়ার্ড : ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থী তারক মন্ডল, বিজেপি প্রার্থী বিশ্বনাথ পট্টনায়েক, নির্দল প্রার্থী অঞ্জনা রায়, নির্দল প্রার্থী তনুপ্রকাশ দত্ত (ঝুনু), নির্দল প্রার্থী সাবানা বেগম
২৩ নং ওয়ার্ড : নির্দল প্রার্থী সুমিতা বেরা, কংগ্রেস প্রার্থী সালেহা বেগম
২৪ নং ওয়ার্ড : কংগ্রেস প্রার্থী জাকির হোসেন
২৫ নং ওয়ার্ড : কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বনাথ মিশ্র, ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থী ললিত কুমার ঝা, নির্দল প্রার্থী শশাঙ্ক শেখর মান্না।
অন্যদিকে, এবার মেদিনীপুর পৌরসভায় সবথেকে বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন ২২ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মৌসুমী হাজরা। তিনি ৩৩৫৪ ভোটে জয়ী হয়েছেন। ৫৭৮৬ ভোটের ৪৩১০ ভোট পেয়েছেন (প্রায় ৭৫ শতাংশ) জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা’র স্ত্রী মৌসুমী। অন্য দুই প্রার্থী যথাক্রমে, পচা খাড়া ও আকবর আলি খান (বিজেপি ও সিপিআইএম) ভোট পেয়েছেন- ৯৫৬ ও ৫২০-টি। এদিকে, মেদিনীপুর পৌরসভায় সবথেকে কম ব্যবধানে জয়ী প্রার্থী হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নিরুপমা কোনার। ৪ নং ওয়ার্ডে তিনি সিপিআইএম প্রার্থী সুপ্রিয়া দাস-কে মাত্র ১২৪ ভোটে পরাজিত করেছেন! অপরদিকে, ১০ নং ওয়ার্ডে সিপিআইএম এর সৃজিতা দে বক্সী ১৭৯ ভোটে পরাজিত করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মলি মহাপাত্র-কে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মেদিনীপুর শহরের সুপ্রাচীন এই এলাকাটি একসময় কংগ্রেস ও তৃণমূলের দখলে। বিগত দু’টি পৌরসভা নির্বাচনে অবশ্য জয়ী হয়েছিলেন বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অসিত মহাপাত্র। একেবারে খোদ বাম প্রার্থী হিসেবে এবার সেই অসিত মহাপাত্রের স্ত্রী-কে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন বছর ৩৫ এর সৃজিতা। এদিকে, ২৪ নং ওয়ার্ডের সিপিআইএম প্রার্থী গোপাল ভট্টাচার্য এই নিয়ে পরপর ৬ বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেন নিজের ওয়ার্ডে। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মেদিনীপুর পৌরসভার ২৫ জন কাউন্সিলর এর মধ্যে ১২ জনই এবার মহিলা! এর মধ্যে ১০ জনই ‘মহিলা মুখ্যমন্ত্রী’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের। ১ জন সিপিআইএম (সৃজিতা দে বক্সী) এবং ১ জন নির্দল (অর্পিতা রায় নায়েক)।