দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ অক্টোবর: “আমার একটাই ছেলে। সে তো থেকেও নেই! স্বামী মারা যায় ২০১২ সালে। ২০১৩ সালেই আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়!” মেদিনীপুর শহরের অশোকনগর পুজো মণ্ডপে দাঁড়িয়ে ঠিক এমনটাই জানালেন ষাটোর্ধ্বা মণিকা গিরি। সত্তরোর্ধ্ব আরতি ভকত বলেন, “স্বামী মারা যাওয়ার পর, ছেলেরা আর দেখেনি। নাতিরা বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বাপের বাড়ি আষাঢ়িতে। ভাই আগেই বাবার সব সম্পত্তি লিখিয়ে নিয়েছিল! আমাকে জায়গা দেয়নি। মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন মেসে রান্না করে নিজেরটুকু চালিয়ে নিচ্ছিলাম। ৩-৪ বছর হল চ্যাটার্জি বাবু নামে এক সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় মেদিনীপুর পৌরসভার এই বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হয়।” এভাবেই কেউ সব কিছু হারিয়েছেন। আবার কারুর সবকিছু থেকেও, কিছুই নেই! মেদিনীপুর পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড স্থিত বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিক, এমনই ২৮ জন অসহায় বৃদ্ধাকে ঠাকুর দেখানো হল ‘এস.বি ইলেভেন, মেদিনীপুর’ ফুটবল ক্লাবের উদ্যোগে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় মেদিনীপুর শহরের প্রগতি ফাউন্ডেশন।

thebengalpost.net
ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে:

রবিবার, বিজয়া দশমীর দুপুরে টোটোতে করে মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে ঠাকুর দেখানোর পর তাঁদের জন্য ভুরিভোজেরও আয়োজন করা হয় এস.বি ইলেভেন, মেদিনীপুরের উদ্যোগে। বাঁধভাঙা খুশিতে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে মণিকা দেবী, আরতি দেবী, কমলা দেবী, সন্ধ্যা দেবীদের। দু’হাত তুলে তাঁরা আশীর্বাদ করেন এস.বি ইলেভেনের কর্ণধার আবীরলাল আগরওয়াল (সাহেব) সহ ক্লাব ও ফাউন্ডেশনের সদস্যদের। প্রসঙ্গত, সপ্তমীর দিন বাসস্ট্যান্ড স্থিত এই বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের পুজোর নতুন বস্ত্র উপহার দিতে গিয়েছিলেন এস.বি ইলেভেনের সদস্যরা। সেই সময়ই অসহায় মায়েরা ক্লাবের সদস্যদের কাছে ঠাকুর দেখানোর আবদার করেছিলেন। সেই আবদারকেই ‘আশীর্বাদ’ রূপে গ্রহণ করে এগিয়ে আসেন এসবি ইলেভেনের কর্ণধার আবীরলাল আগরওয়াল সহ সদস্যরা।

মেদিনীপুর শহরের বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ক্রীড়া সংগঠক আবীরলাল আগরওয়াল এদিন বলেন, “আমরা সপ্তমীর দিন ওই বৃদ্ধাশ্রমে বস্ত্রদান করতে গিয়েছিলাম। সেই সময়ই মায়েরা আমাদের কাছে আবদার করেছিলেন, একদিন ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যেহেতু নবমী অবধি প্রচুর ভিড়ভাট্টা ছিল, তাই আজকের দিনটাই আমরা বেছে নিয়েছিলাম। ৬টি টোটোতে করে ২৮ জন আবাসিক মায়েদের নিয়ে আমরা মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগর, রাঙামাটি, বার্জটাউন, শরৎপল্লীর সৃজনী, রাজাবাজার, কোতবাজার, অশোকনগর সহ সমস্ত বড় বড় মণ্ডপগুলি ঘুরে দেখলাম। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না! আমরা আরও আনন্দিত, আজ ওঁরা আমাদের দেওয়া নতুন শাড়ি পরেই বেরিয়েছিলেন।” মণিকা গিরি, কমলা দাস, আরতি ভকত, সন্ধ্যা ভুঁইয়া প্রমুখ বলেন, “আমাদের তো এখন সব থেকেও কিছুই নেই! এই সন্তানেরা আজ আমাদের যেভাবে আনন্দ দিয়েছে, বাড়িতে থেকেও কোনদিন সেই আনন্দ পাইনি। আমরা খুব খুশি। ওদের দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করছি।” আরতি দেবী, কমলা দেবীরা এও বলেন, “পেটের সন্তানেরা, বাপের বাড়ির ভাইয়েরা সম্পত্তি নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আর এই ‘সন্তানেরা’ রক্তের সম্পর্কের না হয়েও, সন্তানের মতোই দায়িত্ব পালন করল। কি আর দিতে পারি এদের? আশীর্বাদটুকু ছাড়া!” আবার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে অসহায় মায়েদের। আশোকনগর পুজো মণ্ডপের মাইকে তখন বাজছে, “মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে। একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না? ও বন্ধু…!!!”

thebengalpost.net
অশোকনগর মণ্ডপে: