দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জানুয়ারি: শেষ রক্ষা হলো না! মৃত্যু হল মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন প্রসূতি রেখা সাউয়ের ৭ দিনের পুত্রসন্তানের। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মাতৃমা বিভাগের NICU-তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় রেখা ও সন্তোষের সদ্যজাত পুত্রসন্তানের! গত সাত দিন ধরে ভ্যান্টিলেশনে যমে-ডাক্তারে টানাটানির পর অবশেষে বৃহস্পতিবার সকালে থেমে যায় নবজাতকের সমস্ত লড়াই! এখনও দুঃসংবাদের কথা জানানো হয়নি রেখাকে। মাতৃমা বিভাগের জেনারেল বেডে চিকিৎসাধীন আছেন রেখা। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ভোরে মাতৃমা বিভাগে সিজারের মাধ্যমে পুত্রসন্তান জন্ম দিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা সংলগ্ন খাকুড়দার বাসিন্দা, বছর ২৪-র রেখা সাউ। জুনিয়রদের অস্ত্রপচার সহ নিষিদ্ধ স্যালাইন প্রয়োগ প্রভৃতি কারণে অপর চার প্রসূতির সঙ্গে তিনিও সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তবে, অস্ত্রোচার সবার শেষে হওয়ায় এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাইরে থেকে ৪টি স্যালাইন কিনে এনে দেওয়ায় তেমন সংকটজনক পরিস্থিতি হয়নি। গতকাল অর্থাৎ বুধবার দুপুরেই তাঁকে জেনারেল বেডেও দেওয়া হয়। কিন্তু, প্রথম দিন থেকেই ভ্যান্টিলেশনে রাখতে হয়েছিল তাঁর সদ্যোজাত পুত্র সন্তানকে। বুধবারও চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, “শিশুটির শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। সংকটজনক অবস্থাতেই আছে।” রেখার স্বামী সন্তোষও জানিয়েছিল, “ডাক্তারবাবুরা জানিয়েছেন, ৯৯ শতাংশ খারাপ, মাত্র ১ শতাংশ উন্নতি হয়েছে!” শেষ পর্যন্ত, আজ, বৃহস্পতিবার সকালে জন্মের সাত দিনের মাথায় সমস্ত লড়াই শেষ করে চির ঘুমের দেশে পাড়ি দিল ছোট্ট শিশুটি!

thebengalpost.net
সন্তোষ সাউ:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

আর এরপরই সব আশা ভেঙে চুরমার হয়ে যায় খাকুড়দার সাউ পরিবারের! রেখার স্বামী সন্তোষ, শাশুড়ি পুষ্প চেয়েছিলেন, মা-ছেলেকে একসাথে বাড়ি নিয়ে যেতে। বুধবারও পুষ্প বলেছিলেন, “বউমা অনেকটাই সুস্থ। তবে, নাতিটার সংকট কাটেনি এখনও। আমরা চাই দু’জনকেই সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যেতে!” প্রশ্ন উঠছে এই স্বপ্ন-ভঙ্গের দায় কার? মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডঃ তারাপদ ঘোষ জানিয়েছেন, “আজ সকালে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। ভেন্টিলেশন সাপোর্টে ছিল। আমরা সমস্ত চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, চিকিৎসায় তেমনভাবে সাড়া দেয়নি।” রেখার স্বামী সন্তোষ বলেন, “এর দায় কার? আপনারাই বলুন? যতদিন ও মাতৃগর্ভে ছিল ওর কোন সমস্যা ছিল না। আমি সমস্ত রিপোর্ট করিয়েছি। এখানে ভর্তির পর থেকেই অবস্থা খারাপ হয়। আমরা স্যালাইন কিনে দেওয়ার আগে একটি স্যালাইন চালিয়েছিল রেখাকে। আমার মনে হচ্ছে তারই সাইড এফেক্টে আমার সন্তানের শারীরিক অবস্থা সংকটজনক হয়ে পড়ে। আমি সঠিক তদন্ত ও সুবিচার চাইছি।” মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা মৌসুমী নন্দী জানিয়েছেন, “শিশুটির একাধিক শারীরিক জটিলতা ছিল। চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেছিলেন। তবে, শিশুটি চিকিৎসায় সাড়া দেয়নি।”

thebengalpost.net
সস্ত্রীক সন্তোষ:

অন্যদিকে, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার (MSVP) জয়ন্ত রাউত সহ ১২ জনকে সাসপেন্ড করল রাজ্য সরকার। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, “ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ! সিনিয়ররা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন নি।” যাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে- সুপার জয়ন্ত রাউত, প্রসূতি বিভাগের প্রধান মহঃ আলাউদ্দিন, প্রসূতি বিভাগের দুই সিনিয়র চিকিৎসক যথাক্রমে দিলীপ কুমার পাল ও হিমাদ্রি নায়েক, সৌমেন দাস (দায়িত্বপ্রাপ্ত RMO, প্রসূতি), পল্লবী ব্যানার্জি (RMO, Anesthesia), মৌমিতা মন্ডল (PGT 3rd), ভাগ্যশ্রী কুন্ডু (PGT 3rd), সুশান্ত মণ্ডল (ইন্টার্ন), পুজা সাহা (PGT 1st), মণীশ কুমার (PGT 1st, Anesthesia), জাগৃতি ঘোষ (PGT 1st, Anesthesia)- এই ১২ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সঙ্গে CID মামলা রুজু করে তদন্ত চালিয়ে যাবে।

thebengalpost.net
মায়ের সাথে সন্তোষ:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):