দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ জুন: মঙ্গলবার সাত সকালেই স্কুলে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের নয়াগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর! উল্লেখ্য যে, গরমের কারণেই সকালে স্কুল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সহ বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সদস্যরা তথা স্কুল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সুস্থ শরীরেই সাইকেল চালিয়ে সকাল সকাল (ছ’টা নাগাদ) স্কুলে পৌঁছে গিয়েছিল মেদিনীপুর সদর ব্লকের নয়াগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী পাপিয়া দে। ফার্স্ট বেঞ্চে ব্যাগ রেখে বন্ধুদের সাথে স্বাভাবিকভাবেই মনের আনন্দে খেলাধুলাও করছিল। হঠাৎই অসুস্থতা অনুভব করে সে। নিজের বেঞ্চে গিয়ে বসে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বলে বন্ধুদের জানায়। এরপরই, ছুটে আসেন শিক্ষকরা। কোলে করে নিয়ে যান স্কুলের সামনেই গ্রামীণ এক চিকিৎসকের চেম্বারে। তিনি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ছোট্ট পাপিয়াকে। এরপর, গাড়ি ডেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পাপিয়াকে নিয়ে যান অদূরেই অবস্থিত সেন্ট জোসেফ হাসপাতালে। জোসেফ কর্তৃপক্ষ রেফার করেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। কিন্তু, ততক্ষণে সব শেষ! বছর ১২-র পাপিয়াকে এমার্জেন্সিতেই মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা!

thebengalpost.net
নয়াগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়:

শান্ত, ভদ্র, অনুগত পাপিয়াকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা! নয়াগ্রামের কাছেই মুড়াকাটাতে বাড়ি পাপিয়াদের। মঙ্গলবার সাত সকালেই সেখানে সব হারানোর বেদনা! এলাকাতেও বিষন্নতার ছায়া! জানা যায়, পেশায় দিনমজুর উত্তম দে’র তিন মেয়ের মধ্যে সব থেকে ছোট পাপিয়া। পাপিয়া’র বড়দি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলেজে পড়শোনা করছে। মেজ দি নয়াগ্রাম হাই স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্রী। পাপিয়া পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। দিদিদের মতোই পাপিয়াও শান্ত, ভদ্র ও অনুগত বলে জানান শিক্ষকরা। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে দাড়িয়ে শিক্ষক প্রবীর পাল বলেন, “খুবই অনুগত ছাত্রী। পড়াশোনাতেও ভালো। আমরা অত্যন্ত মর্মাহত! কিছু বলার মতো ভাষা নাই!” ঘটনার পরই এদিন ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয় স্কুল।

thebengalpost.net
চির ঘুমের দেশে পাপিয়া:

বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী থেকে পরিচালন সমিতির সভাপতি জানান, সুস্থভাবেই স্কুলে এসেছিল পাপিয়া। সাড়ে ছ’টা নাগাদ প্রার্থনা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই সে অসুস্থতা অনুভব করে। তারপরই একটু খিঁচুনির মতো হয়! হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি অচিন্ত্য হ্যান্ডেল বলেন, “গরমের জন্যই সকালে স্কুল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। এই ঘটনায় আমরা শোকস্তব্ধ! চিকিৎসা করানোর কোন সুযোগই দিলোনা ও! সুস্থ, ফুটফুটে একটা মেয়ে। কি যে হল, কিছু বুঝতেই পারলাম না!” পাপিয়া’র দাদু কৃষ্ণপ্রসাদ দে জানান, “ভেতরে কোনও অসুস্থতা ছিল কিনা, আমরা কখনোই তা বুঝতে পারিনি। আজও সুস্থভাবেই স্কুলে গিয়েছিল। কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল, আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারছিনা!” মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট আসার পরই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছুটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে, প্রাথমিক অনুমান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে ছোট্ট পাপিয়ার!

thebengalpost.net
মেডিক্যাল কলেজে শোকাহত শিক্ষকরা:

thebengalpost.net
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মৌলী চৌধুরীর সঙ্গে পাপিয়া (ছবি- Mouli Chaudhury):