দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ জানুয়ারি: জঙ্গলের মাঝে ১৩০টি আদিবাসী পরিবার নিয়ে পিছিয়ে পড়া এক গ্রাম। শাল পাতা কুড়িয়ে আর গুরু-ছাগল চরিয়েই জীবিকা নির্বাহ করেন গ্রামের পুরুষ-মহিলারা। পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব থাকলেও, প্রকৃতির মাঝে হেসেখেলে জীবন চলে যায় গ্রামের কচিকাঁচাদের। প্রাথমিক বিদ্যালয় চার কিলোমিটার দূরে। যেতে হয় জঙ্গল রাস্তা পেরিয়ে। সেই সঙ্গে হাতির ভয় তো আছেই! স্বাভাবিকভাবেই চন্দ্র-সূর্যের অকৃত্রিম আলোর অভাব না থাকলেও; অলোক হেমব্রম, বিদ্যুৎ হেমব্রম, দশরথ সরেন, রঞ্জিত সরেন, বাপি হাঁসদা-দের বাড়িতে সেই অর্থে প্রবেশ করেনি ‘শিক্ষার আলো’! শহর মেদিনীপুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে, গুড়গুড়িপাল ইকো পার্ক (বা, গুড়গুড়িপালের জঙ্গল) পেরিয়ে সেই ভাদুলিয়া গ্রামকেই আদর্শ গ্রাম ‘পলাশ গাঁ’ হিসেবে তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছে মেদিনীপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আম্মা জনসেবা সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। মঙ্গলবার, বছরের শেষ দিন মহা সাড়ম্বরে সেই ‘পলাশ গাঁ’-র শুভ উদ্বোধনও হয়েছে।

thebengalpost.net
পলাশ গাঁ:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

গ্রামের চারি পাশে লাগানো হয়েছে দু’হাজার পলাশ চারা। সেই চারা যাতে নষ্ট না হয়ে যায়, তা লোহা কিংবা বাঁশের বেড়ি দিয়ে ঘিরে ফেলাও হয়েছে ইতিমধ্যে। গত কয়েক মাস ধরে আদিবাসী শিল্পের ছোঁয়ায় প্রতিটি বাড়িকে রঙিন করে তোলা হয়েছে বর্ণময় নক্সার মধ্য দিয়ে। গ্রামের কচিকাঁচাদের শিক্ষার জন্য ‘অঙ্কুর পাঠশালা’ চালু করা হয়েছে ইতিমধ্যে। শুধু পড়াশোনা নয়, প্রতি সপ্তাহে সেখানে আবৃত্তি ও নৃত্য শেখানোরও উদ্যোগ নিয়েছেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য-সদস্যারা। শুধু তাই নয়, গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর করে তুলতে পাতা সেলাই করার মেশিন তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর, পুরুষরা যাতে বাণিজ্যিকভাবে হাঁস-মুরগি-গরু-ছাগল প্রতিপালন করতে পারেন, সেই উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে। স্থানীয় প্রশাসন এবং কিছু সমাজকর্মীদের সহায়তায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছেন সংগঠনের সভাপতি আবিরলাল আগরওয়াল, সম্পাদক নবীন কুমার ঘোষ, সুমন জানা, অর্ণব দাস, বিদিশা মণ্ডল, মানস মাইতি, মহঃ ইজাজরা। আর নিরন্তর তাঁদের পথ-নির্দেশ করে চলেছেন সংগঠনের চেয়ারম্যান পীযূষ কান্তি পাল। লক্ষ্য প্রকৃতির মাঝে এক আদর্শ গ্রাম হিসেবে ‘পলাশ গাঁ’ ভাদুলিয়াকে তুলে ধরা।

thebengalpost.net
পলাশ চারায় জল সিঞ্চন:

মঙ্গলবার বছরের শেষ দিনে ধামসা-মাদলের তালে সেই ‘পলাশ গাঁ’-র উদ্বোধনও হয় মহা সাড়ম্বরে। হাজির হয়েছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সমাজসেবীরা। এসেছিলেন জেলা ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরাও। শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন সাংসদ জুন মালিয়া এবং বিধায়ক সুজয় হাজরা-ও। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, মেদিনীপুর শহরের বিশিষ্ট সমাজসেবী নির্মাল্য চক্রবর্তী, ক্রীড়া সংগঠক সন্দীপ সিংহ-রা। তাঁরা বলেন, “অসাধারণ উদ্যোগ। প্রকৃতির মাঝে ‘পলাশ গাঁ’। কয়েক বছরের মধ্যেই লাল পলাশের সৌন্দর্যে ভরে উঠবে ওই গ্রাম। সেই সঙ্গে গ্রামের শিক্ষা-দীক্ষা ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটেরও উন্নয়ন হবে বলে আমরা আশাবাদী। যথাসাধ্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত আমরাও।”

thebengalpost.net
আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম আদর্শ গ্রাম করার উদ্যোগ:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):